|
|
|
|
নামই ওঠেনি নথিতে |
নির্মাণ শ্রমিকদের কল্যাণে খরচই হয়নি ৩০০ কোটি |
কাজী গোলাম গউস সিদ্দিকী • কলকাতা |
তহবিলে টাকা জমেছে নেহাত কম নয়। ৩০০ কোটি। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা মিলছে না বলে তাঁদের কল্যাণে সেই টাকা খরচই করতে পারছে না রাজ্য সরকার। এ কথা জানিয়েছেন রাজ্যের শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। কিন্তু নির্মাণ শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা পাওয়া যাচ্ছে না কেন?
মন্ত্রী জানান, নির্মাণ সংস্থাগুলি সরকারি খাতায় তাদের কর্মী-শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা যথাযথ ভাবে নথিভুক্তই করছে না। সেই জন্য ওই সব কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের কল্যাণে টাকা তো দেওয়া যাচ্ছেই না। নাম নথিবদ্ধ না-হওয়ায় দেওয়া যাচ্ছে না নির্মাণ শ্রমিকদের সরকারি পরিচয়পত্রও। সাবিনা মহাকরণে বলেন, “শুধু বেসরকারি সংস্থার ক্ষেত্রেই নয়, রাজ্য সরকারের যে-সব বাড়ি তৈরি হচ্ছে, সেখানেও নির্মাণ শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা নথিভুক্ত করা হচ্ছে না। নাম নথিভুক্ত না-হলে প্রভিডেন্ট ফান্ডে শ্রমিকদের অ্যাকাউন্ট খোলা যাবে না, টাকাও জমা পড়বে না।” নির্মাণ শ্রমিকেরা অনেক ক্ষেত্রেই সরকার নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরিও পাচ্ছেন না বলে জানান মন্ত্রী। রাজ্য জুড়ে যে-সব নির্মাণকাজ চলছে, তার অধিকাংশেই এমন ঘটনা ঘটছে।
সরকার ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন? কিছু কিছু ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে বলে জানান মন্ত্রী। তিনি বলেন, নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত ১০টি সরকার অনুমোদিত ঠিকাদার সংস্থাকে শ্রম দফতর থেকে ইতিমধ্যেই নোটিস দেওয়া হয়েছে। সেই নোটিসে বলা হয়েছে, আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে সরকারি নিয়মবিধি মেনে কর্মী-শ্রমিকদের সব প্রাপ্য না-মেটালে নির্মাণকাজই বন্ধ করে দেওয়া হবে।
নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে টাকা আসছে কোথা থেকে?
রাজ্যের সর্বত্র বাড়ি তৈরির অনুমোদন দেওয়ার সময় ‘ফি’ বাবদ যে-টাকা নেওয়া হয়, তার এক শতাংশ আদায় করা হয় ‘সেস’ হিসেবে। নির্মাণ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের জন্যই ওই সেস নেওয়া হয় বলে জানান মন্ত্রী। সেস হিসেবে ইতিমধ্যেই ৩০০ কোটিরও বেশি টাকা সংগৃহীত হয়েছে। ওই টাকা খরচ করা হয় মূলত নির্মাণকর্মীদের সাজসরঞ্জাম কেনা, ওই সব কর্মী এবং তাঁদের পরিবারের লোকেদের চিকিৎসা এবং ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার পিছনে।
রাজ্যে লক্ষাধিক নির্মাণ শ্রমিক রয়েছেন বলে জানান শ্রম দফতরের এক কর্তা। কিন্তু এখনও ১৯-২০ হাজারের বেশি কর্মীর নাম সরকারি খাতায় নথিভুক্ত করা হয়নি। দেওয়া হয়নি সরকারি পরিচয়পত্র। চালু হয়নি প্রভিডেন্ট ফান্ডও।
নির্মাণ শ্রমিকদের নাম-ঠিকানা যে নথিভুক্ত হচ্ছে না, তার দায় কার?
মন্ত্রীর বক্তব্য, এই ক্ষেত্রে নির্মাণ সংস্থা এবং সরকারি কর্মীরা যেমন তাঁদের দায়িত্ব পালন করেননি, একই ভাবে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ শ্রমিক সংগঠনগুলিও। তিনি জানিয়ে দেন, বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে যা হওয়ার হয়েছে। এখন শ্রমিক সংগঠনগুলিকে এ ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসতে হবে।
শুধু নির্মাণ শ্রমিকেরাই যে ন্যূনতম মজুরি পাচ্ছেন না, তা-ই নয়। রাজ্য সরকারি সংস্থাগুলিতেও বহু ক্ষেত্রে অস্থায়ী শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দেওয়া হচ্ছে না বলে জানান সাবিনা। মন্ত্রীর প্রশ্ন, “সরকার নিজেই যদি তার আইন না-মানে, তা হলে অন্যদের সেই আইন মানতে বলার কোনও অধিকার থাকে কি?” কোন কোন রাজ্য সরকারি সংস্থায় ন্যূনতম মজুরি বিধি কার্যকর করা হচ্ছে না, সেই বিষয়ে খোঁজখবর করার জন্য শ্রম দফতরের কর্মীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে শ্রম দফতর সূত্রের খবর। |
|
|
|
|
|