তৃণমূল সম্পর্কে ভিন্ন ‘মনোভাব’ রাজ্য ও হাইকম্যান্ডের
তৃণমূলের ‘লাগাতার কটাক্ষে’র ‘জবাব’ কি দেওয়া উচিত? কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের সঙ্গে এ নিয়ে মতদ্বৈত বাড়ছে রাজ্য কংগ্রেসের।
হাইকম্যান্ড যতই ‘ধীরে চলা’র কথা বলুক, জোট শরিক তৃণমূলের ‘ভূমিকা’ নিয়ে রাজ্য কংগ্রেসে ‘ক্ষোভ’ বাড়ছে। রাজ্যের মন্ত্রী থেকে শুরু করে কর্মীদের একাংশ ‘হেস্তনেস্ত’ করার দাবি জানাচ্ছেন। কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্ব আবার মনে করছেন, কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে ‘চাপানউতোর’ ঠিক দিকে যাচ্ছে না। অবিলম্বে তা বন্ধ হওয়া উচিত। পাশাপাশিই, হাইকম্যান্ডের মতে, তৃণমূল নেতারা ‘কটূ শব্দ’ ব্যবহার করেছেন ঠিকই। কিন্তু তার আগে কৃষক-স্বার্থে’ কলকাতার রাস্তায় নেমে কংগ্রেস নেতাদের একাংশ যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘আক্রমণ’ করেছিলেন, তা-ও ঠিক হয়নি।
আগামী ১৬ জানুয়ারি রাজ্য কংগ্রেস নেতাদের দিল্লিতে বৈঠকে ডাকতে পারে হাইকম্যান্ড। এ দিনই কলকাতায় এসেছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেসনেতা প্রণব মুখোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গে রাতে আলোচনা হয় প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের। সেখানেও রাজ্য কংগ্রেসকে ‘ধীরে চলা’র পরামর্শই দেওয়া হয়েছে বলে দলূয় সূত্রের খবর। ধান-পাটের সহায়ক মূল্যের দাবিতে জেলায় জেলায় কৃষি আন্দোলনের কর্মসূচি আজ, শুক্রবার ঘোষণা করার কথা ছিল প্রদীপবাবুর। ফেব্রুয়ারি মাস ওই আন্দোলন চলার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত সেই ঘোষণাও পিছিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ১৬ তারিখ দিল্লিতে বৈঠকের পর ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি-র সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদ বৃহস্পতিবার দিল্লিতে বলেন, “রাজ্যস্তরে তৃণমূল ও কংগ্রেস, উভয় দলের নেতাদেরই পরস্পরের সম্পর্কে কটু শব্দ ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। মতান্তরের বিষয়গুলি নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে মীমাংসা করতে হবে। নইলে এই প্রকাশ্য চাপানউতোরের রাজনৈতিক ফায়দা পেয়ে যেতে পারে সিপিএম-সহ বিরোধী শক্তিরা।”
ইন্দিরা ভবনের প্রস্তাবিত নামবদল নিয়েও শাকিল মমতার ‘পাশে’ই দাঁড়িয়েছেন। তাঁর কথায়, “রাজ্য কংগ্রেস নেতৃত্বকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ইন্দিরা ভবনের নামবদলের প্রস্তাব তিনি কখনও দেননি। বরং তাঁর প্রস্তাব ছিল, ইন্দিরা ভবনে কাজি নজরুলের ইসলামের স্মরণে অ্যাকাডেমি গঠনের। যদিও সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে, মুখ্যমন্ত্রী ইন্দিরা ভবনের নামবদলের কথা বলেছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তা খারিজ করছেন।” শাকিল আরও জানান, রাজ্য কংগ্রেসের তরফে সরকারকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, কলকাতার নিউ সেক্রেটারিয়েট ভবনের নাম নজরুলের নামে করা হোক। সেই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘নজরুল ভবন’ গড়া হোক।
পক্ষান্তরে, রাজ্য কংগ্রেসের একাধিক নেতার প্রস্তাব ইন্দিরা ভবনের নামবদল তো দূরস্থান, ওখানে বরং প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর স্মরণে একটি সংগ্রহশালা গড়া হোক! নজরুল অ্যাকাডেমি শহরের অন্যত্রও হতে পারে।
পরিস্থিতি যে ‘জটিল’ তা অবশ্য স্পষ্ট। এ দিনও শাকিলের সঙ্গে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপবাবু, রাজ্যের মন্ত্রী মানস ভুইঞাঁ এবং সাংসদ অধীর চৌধুরীর দফায় দফায় কথা হয়েছে। কংগ্রেস শীর্ষনেতৃত্বের একাংশ এমনও মনে করছেন, দলের কেন্দ্র ও রাজ্যের নেতাদের অনেকে তৃণমূলকে মুলায়ম সিংহের ‘জুজু’ দেখাতে শুরু করায় তৃণমূলের মনে ‘ভীতির’ সঞ্চার হয়েছে। ফলে তৃণমূলের সঙ্গে ‘আস্থাবর্ধক’ কর্মসূচি নেওয়া জরুরি। মুলায়ম আসুন বা না-আসুন, কেন্দ্রে ইউপিএ-কে শক্তিশালী রাখতে তৃণমূলের মতো একটি বড় শরিককে সঙ্গে নিয়ে চলাই সঠিক। বিশেষত, যখন রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আসন্ন। তবে হাইকম্যান্ডের বক্তব্য, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় যেভাবে কংগ্রেস কর্মীদের ওপর তৃণমূল ‘হামলা’ করছে তা বন্ধ হওয়া উচিত। তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব এ ব্যাপারে উদ্যোগী না-হলে পারস্পরিক সুসম্পর্ক তৈরির পথে বিষয়টি অন্তরায় হতে পারে।
বস্তুত, রাজ্যের কংগ্রেসনেতারা ওই বিষয়ে প্রবল ক্ষুব্ধ। দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের অনেকেরই বক্তব্য, তাঁদের উদ্দেশে প্রায় প্রতিদিন মমতা-সহ মন্ত্রীরা প্রকাশ্যে ‘কটূক্তি’ করছেন। তাঁদের খেদোক্তি, “আমার নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ মানুষ তো বটেই, দলের সাধারণ কর্মীদের কাছেও হাস্যাস্পদ হতে হচ্ছে।” বহরমপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী মনোজ চক্রবর্তীর কথায়, “আমার বিরুদ্ধে পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, ক্রীড়ামন্ত্রী মদন মিত্র প্রমুখ যে ধরনের কুরুচিকর মন্তব্য করছেন, তা স্বাধীনতার পর বাংলার রাজনীতিতে হয়নি। এ ভাবে কি মন্ত্রিসভায় থাকা যায়!”
‘বিরক্ত’ মনোজবাবু ‘কর্তব্য’ জানতে ফোন করেছিলেন প্রদীপবাবুকে। দলের মন্ত্রী-বিধায়কদের অনেকে একই বক্তব্য জানিয়েছেন প্রদেশ সভাপতিকে। মনোজবাবুর ফোনের কথা স্বীকার করেছেন প্রদীপবাবুও। দু’একদিনের মধ্যে তিনি দলীয় মন্ত্রীদের নিয়ে বৈঠক করতে চান। সরকারে থাকলেও তাঁদের সরকারি অনুষ্ঠানে ‘প্রাপ্য মর্যাদা’ দেওয়া হচ্ছে না বলেও কংগ্রেস মন্ত্রীদের অনেকেরই ‘অনুযোগ’। তাঁদের বক্তব্য, সরকারি অনুষ্ঠানে ‘নাম-কা-ওয়াস্তে’ মন্ত্রীদের আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুরের এক কংগ্রেস নেতার কথায়, “ভাবটা এমন এলে এসো। না-হলে এসো না।” এক কংগ্রেস মন্ত্রীর হা-হুতাশ, “সরকারে আছি। তাই সরকারি অনুষ্ঠানে আমাদের ডাকতে হয় বলেই ডাকা।” কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বলেন, “সম্প্রতি শিল্প দফতরের বেঙ্গল লিডস অনুষ্ঠানে দেখলাম আমাদের মন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও উপস্থিত। মঞ্চে আসীনদের মধ্যে অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বক্তৃতা দিলেন। কিন্তু ক্ষুদ্রশিল্প মন্ত্রী মানসবাবুকে কেউ বক্তৃতা দিতে বললেন না।” কংগ্রেস নেতা-মন্ত্রীদের এভাবে ‘অপাংক্তেয়’ করা হচ্ছে জেনেও তাঁরা কেন সরকারি অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, তা নিয়েও দলের নেতাদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.