ঝাড়গ্রামে জঙ্গলমহল উৎসবের মঞ্চে, বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আত্মসমর্পণ করলেন ৪ সন্দেহভাজন মাওবাদী। তাঁরা পুরুলিয়ার লম্বোদর মাঝি, করণ কৈর্বত্য ও ভজহরি মাহাতো এবং পশ্চিম মেদিনীপুরের শুকদেব ওরফে বাদল মাহাতো। পুলিশের দাবি, লম্বোদর মাওবাদীদের অযোধ্যা-পাহাড় স্কোয়াডের কম্যান্ডার ছিলেন।
কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রীর কাছেই মহাকরণে গিয়ে আত্মসমর্পণ করা মাওবাদী নেত্রী জাগরী বাস্কে ও তাঁর স্বামী রাজারাম সরেন এবং আরও কয়েক জন আত্মসমর্পণকারীর হাতে এ দিন দেড় লক্ষ টাকার ‘ফিক্সড ডিপোজিট’-এর কাগজপত্র তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মাওবাদী সন্ত্রাসে নিহত ৩৩টি পরিবারের ৫৯ জন সদস্যের হাতেও এ দিন ক্ষতিপূরণ তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। মাওবাদী হিংসার বলি ঝাড়খণ্ড জনমুক্তি মোর্চার নেতা বাবু বসু, তৃণমূল নেতা রবীন্দ্রনাথ মিশ্র এবং লালমোহন মাহাতোর পরিজনদের ৩ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান করেন মুখ্যমন্ত্রী।
বৃহস্পতিবারই শেষ হল জঙ্গলমহল উৎসব। উৎসবে যোগ গিতে বুধবারই ঝাড়গ্রামে এসে রাজবাড়িতে উঠেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বেলা এগারোটা নাগাদ রাজবাড়ি থেকে প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার ‘পদযাত্রা’ করে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামে পৌঁছন মমতা। সঙ্গে ছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মুকুল রায়, জেলা তৃণমূল নেতা নির্মল ঘোষ, দুর্গেশ মল্লদেবরা। আদিবাসী প্রথায় মুখ্যমন্ত্রীকে স্টেডিয়ামে অভ্যর্থনা জানানো হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়া এই চারটি পুলিশ জেলার জঙ্গলমহল ফুটবল কাপের প্রথম ১২টি দলের খোলায়াড়দের সঙ্গে পরিচিত হন মুখ্যমন্ত্রী। চারটি পুলিশ জেলার বিজয়ী-বিজিত ও উল্লেখযোগ্য ফুটবল-দলগুলিকে পুরস্কৃত করেন তিনি। এডিজি (আইবি) বাণীব্রত বসু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মতো, জঙ্গলমহল কাপে অংশ নেওয়া ৭১০টি ফুটবল-ক্লাবকে সংশ্লিষ্ট থানার মাধ্যমে নগদ ২৫ হাজার টাকা ও খেলোয়াড়দের জার্সি দেওয়া হবে। লালগড়ের নেতাই-সহ তিন জেলার জঙ্গলমহলের সাতটি গ্রামের প্রতিনিধি, স্থানীয় বিডিও ও আইসিদের হাতে ‘বিবেক গ্রাম-সম্মান’ও তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিটি গ্রামের উন্নয়নকল্পে দেওয়া হয় ৫ লক্ষ টাকার চেক। |
স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশত জন্মজয়ন্তীতে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়ার সমাজকর্মী, ক্রীড়াবিদ, অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী, প্রতিবন্ধী মিলিয়ে ৫০ জনকে ‘বিবেক পুরস্কার’ দিয়েও সম্মানিত করেন মুখ্যমন্ত্রী। ‘নিজ ভূমি, নিজ গৃহ’ প্রকল্পে ১০৩ জনকে জমির পাট্টা, ৫৭৬ জন ছাত্রীকে সাইকেলও দেওয়া হয়। বিলি করা হয় এক হাজার সৌরলণ্ঠনও। বঙ্গীয় স্বনির্ভর কর্মসংস্থান প্রকল্পে কয়েক জন উদ্যোগীর হাতে ঋণের চেকও তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
এ দিন বিকেলে ঝাড়গ্রাম থেকে দিঘায় পৌঁছন তিনি। আজ, শুক্রবার সেখানে ‘সৈকত উৎসবে’র উদ্বোধন করবেন মুখ্যমন্ত্রী। দুপুরে মৎস্য দফতরের একটি বাংলোয় পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকও করবেন তিনি বলে জানা গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে তাঁর এই প্রথম পূর্ব মেদিনীপুর সফর ঘিরে জেলা এবং ওড়িশা সীমানায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে সৈকত উৎসব শুরু। দিঘা-মন্দারমণিতে চার দিন ধরে চলবে এই উৎসব। আয়োজন করা হয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং আ্যডভেঞ্চার স্পোটর্সের। রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের অধীন দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের তরফে উৎসবের বাজেট ধরা হয়েছে কোটি টাকারও বেশি। |