|
|
|
|
প্রতিশ্রুতি রাখছে না সরকার, ফের ক্ষোভ সংখ্যালঘু নেতাদের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
নতুন সরকারের বিরুদ্ধে আবার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ আনলেন সংখ্যালঘু নেতৃত্ব। বৃহস্পতিবার সারা বাংলা সংখ্যালঘু কাউন্সিলের এক অনুষ্ঠানে ক্ষুব্ধ সংখ্যলঘু নেতারা ঘোষণা করলেন, তাঁরাই ভোট দিয়ে এই সরকারকে এনেছেন। কিন্তু বর্তমান সরকার সংখ্যালঘুদের পাশে নেই। এমনকী শাসক দলের কোনও কোনও সাংসদ শিক্ষকের অনুমোদন পাইয়ে দিতে মাদ্রাসাগুলির কাছ থেকে ঘুষ চাইছেন বলেও অভিযোগ জানান তাঁরা।
সেপ্টেম্বরের পয়লা তারিখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিধানসভায় তাঁর বাজেট বক্তৃতায় দাবি করেছিলেন, সংখ্যালঘুদের জন্য দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলির ৯০ শতাংশই তাঁরা ১০০ দিনের মধ্যে করে ফেলেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সেই দাবিকে নস্যাৎ করে প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতা ক্বারী ফজলুর রহমান এ দিন বলেন, “বর্তমান সরকার মুসলিমদের জন্য এখনও কোনও কাজই করে উঠতে পারেনি।”
নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার মাস দুয়েক পরে রেড রোডে ঈদের নমাজের জমায়েতে এই ধর্মীয় নেতা মন্তব্য করেছিলেন, সংখ্যালঘুদের জন্য কিছুই করা হচ্ছে না। এর দু’দিন পরেও মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রারদের এক
|
মুসলিমরাই ভোট দিয়ে
পরিবর্তন এনেছেন। অথচ
সরকার তাঁদের পাশে নেই।
ক্বারী ফজলুর
রহমানধর্মীয় নেতা |
সম্মেলনেও তিনি একই অভিযোগ করে বলেন, পাহাড়, জঙ্গল বা সিঙ্গুরের সমস্যা সমাধানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার যে তৎপরতা দেখাচ্ছেন, সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে তা চোখে পড়ছে না। মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় কার্যত এই কথার জবাব দিয়েই বলেছিলেন, নির্বাচনের আগে সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে যে সব প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার ৯০ শতাংশই নতুন সরকার পূরণ করেছে। বাকিটাও শীঘ্রই শেষ করা হবে। এ দিন তাঁর বক্তৃতায় বিধানসভায় দেওয়া মুখ্যমন্ত্রীর সেই তথ্যকেই চ্যালেঞ্জ জানালেন ক্বারী ফজলুর রহমান। তিনি বলেন, মুসলিমরাই ভোট দিয়ে রাজ্যে পরিবর্তন এনেছেন। রাজ্যে প্রতি তিন
জন ভোটারের এক জন মুসলিম। অথচ বর্তমান সরকার তাঁদের পাশে নেই। নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় মুসলিমদের সংগঠিত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন ওই ধর্মীয় নেতা। রহমান বলেন, “বর্তমান সরকার সময় চাইছে। আমরা তা দেব। কিন্তু নজর রাখব কোথায় কী কাজ হচ্ছে।”
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামানের অভিযোগ, বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলে ১৩৯টি শিশু শিক্ষাকেন্দ্র (এসএসকে) ও মাধ্যমিক শিক্ষাকেন্দ্র (এমএসকে) অনুমোদন পেয়েছে। কিন্তু নির্বাচন ঘোষিত হয়ে যাওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অনুমোদন আটকে যায়। নতুন সরকার আসার পরেও কিন্তু সেই অনুমোদন আটকে রয়েছে। ফলে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না। ওই সব স্কুলের লক্ষাধিক মুসলিম পড়ুয়া মিড-ডে মিল, পোশাক ও অন্যান্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। উল্টে এখন রাজ্য সরকার নোটিস জারি করে জানিয়েছে, ওই সব এসএসকে-এমএসকে নিয়ে তদন্ত হবে।
এখানেই শেষ নয়, কামরুজ্জামান এ দিন শাসক দলের কোনও কোনও সাংসদের বিরুদ্ধে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগও করেন। তিনি বলেন, “এলাকার সাংসদরা ওই সব মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা দাবি করছেন। বলা হচ্ছে, টাকা পেলে শিক্ষকদের অনুমোদন পাইয়ে দেওয়া হবে, বর্তমান শিক্ষকদের সরিয়ে নতুন প্রার্থীকে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে।” এমন চলতে থাকলে তাঁরা বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন কামরুজ্জামান। তাঁর মতে, বাম আমলে মাদ্রাসার প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হত। নতুন আমলে তা আরও বেড়েছে।
ঘুষের অভিযোগ সম্পর্কে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুলতান আহমেদ বলেন, “কোন সাংসদ টাকা চেয়েছেন তা ওঁরা স্পষ্ট করে বলুন। কারণ সমস্ত সাংসদদের বদনাম করা উচিত নয়। প্রয়োজনে কামরুজ্জমানরা তাঁদের অভিযোগ লিখিত ভাবে সরকার বা মুখ্যমন্ত্রী বা যে দলের সাংসদদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাদের নেতৃত্বকে জানান।” লোকসভায় তৃণমূলের মুখ্যসচেতক কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “একেবারে ভিত্তিহীন ও অর্থহীন অভিযোগ। নিজেদের গুরুত্ব বাড়তে কিছু কিছু লোক এই ধনের অসত্য অভিযোগ করে থাকে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ জানেন তৃণমূলের সাংসদরা তাঁদের জন্য কী কাজ করেন। সেই জন্য তাঁরা তাঁদের প্রতিনিধি হিসেবে তৃণমূলকে নির্বাচিত করেছেন।” প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও রাজ্যসভার সদস্য প্রদীপ ভট্টাচার্য অবশ্য বিষয়টি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
এ দিন সংখ্যালঘু নেতাদের ক্ষোভের আগুনে ঘৃতাহূতি দেয় শিল্পমন্ত্রীর গরহাজিরা। ক্ষুব্ধ ইমাম বলেন, “মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এই সমাবেশে থাকবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি এলেন না। এতেই বোঝা গেল সরকার আমাদের সঙ্গে নেই। মন্ত্রী বিধায়কদের মনে রাখা উচিত, তাঁরা মানুষের ভোটে জিতে ক্ষমতায় এসেছেন। আর এ রাজ্যে প্রতি তিন জন ভোটারের এক জন মুসলিম। ভোট দিয়ে পরিবর্তন এনেছি আমরাই।”
পার্থবাবু পরে জানান, অনুমতি না নিয়েই উদ্যোক্তারা আমন্ত্রণপত্রে তাঁর নাম ছেপেছেন। ভবিষ্যতে লিখিত অনুমতি ছাড়া আমন্ত্রণপত্রে নাম ছাপলে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবেন। সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলি শাহ অবশ্য বলেন, “এখানে আসার আগেও পার্থবাবুর সঙ্গে ফোনে কথা হয়। তিনি আসবেন বলে জানান। কিন্তু এলেন না।”
তবে শেষ পর্যন্ত মোবাইল ফোনে পার্থবাবুর বক্তৃতা সভাকক্ষে শোনানো হয়। সেখানে তিনি জানান, সম্মেলনের ব্যাপারে অনেক দেরিতে জানতে পেরেছেন। তা ছাড়া, এ দিন সরকারি-বেসরকারি বেশ কিছু কাজ ছিল। বাড়িতে চিকিৎসকও এসেছিলেন। তাই সভায় হাজির হতে পারেননি। তবে সংগঠনের দাবি-দাওয়া তাঁর কাছে পৌঁছে দিলে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন।
কাউন্সিলের পক্ষ থেকে এই দিন বলা হয়, মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ১০ হাজার মাদ্রাসাকে সরকারি অনুমোদন দেওয়ার কথা বলেছেন। অথচ রাজ্যে এখন সরকার অনুমোদিত মাদ্রাসার সংখ্যা হাজার খানেক। অননুমোদিত মাদ্রাসার সংখ্যা আরও এক হাজার। কাউন্সিলের কথায়, রাজ্যে ১০ হাজার মাদ্রাসার প্রয়োজনও নেই। মুখ্যমন্ত্রী এই সংখ্যা কোথা থেকে পেলেন বোধগম্য নয়। তাঁদের ঘোষণা, শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের বেতন ও অন্য খরচ না দিয়ে মাদ্রাসাকে সরকারি স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না। সম্মেলনে অননুমোদিত মাদ্রাসা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোসারফ হোসেন বলেন, “১০ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়া
হবে বলে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর এ পর্যন্ত ৩০০ আবেদন জমা পড়েছে। সরকার এমন সব শর্ত দিয়েছে, যা বেশি সংখ্যায় আবেদন জমা পড়ার পথে বড় বাধা।” |
|
|
|
|
|