নামের ইতিহাসে জড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন শব্দটা। কিন্তু তাতে কি? দেড়শো বছর ছুঁতে চললেও উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা পুরসভার বেশিরভাগ বাসিন্দাই এখনও ন্যূনতম নাগরিক সুবিধা পরিস্রুত পানীয় জল থেকে বঞ্চিতই থেকে গিয়েছেন। পাশের বনগাঁ পুর এলাকাতেও বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জলের সুবিধা আজও অধরাই। যদিও বয়সে ওই পুরসভা গোবরডাঙার কাছে নিতান্তই নবীন। কিন্তু পানীয় জলের সমস্যায় প্রবীণ ও নবীন দুই পুরসভাই প্রায় কাঁধে কাঁধ মিলিয়েছে। পুরবাসীদের ক্ষোভ, এত বছর পরেও যদিও পানীয় জলের ন্যূনতম সুবিধাটুকু না পাওয়া যায়, তা হলে ঢাকঢোল পিটিয়ে পুরসভা করার অর্থ কী?
গোবরডাঙা পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮৭০ সালে এই পুরসভা তৈরি হয়। আশির দশকে প্রথম পাইপ লাইন বসানো হয়েছিল পুর এলাকায়। কিন্তু ওই টুকুই। সেই প্রকল্পের কাজ আর এগোয়নি বললেই চলে। পুর এলাকায় পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১৪ হাজার। কিন্তু বর্তমানে মাত্র ৭৫০টি পরিবার পাইপ লাইনের মাধ্যমে বাড়িতে পানীয় জলের সুবিধা পান। শতাংশের হিসাবে যা মাত্র পাঁচ শতাংশ। ২০১০ সালে পুর নির্বাচনের আগে বামশাসিত পুরবোর্ড কিছু বাড়িতে জলের সংযোগ দেয়। এর পরে নির্বাচনে হেরে যায় বামেরা। পুরবোর্ডে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। তারা পরে আরও কিছু বাড়িতে জলের সংযোগ দেয়। কিন্তু তাতে সমস্যা মেটেনি। গোটা পুর এলাকার যা চাহিদা তাতে ওই সামান্য কিছু সংযোগ দেওয়া হলেও কোনও লাভ হয়নি। দিনের পর দিন চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। পানীয় জলের সংযোগ না পেয়ে বহু বাসিন্দাই ক্ষুব্ধ এবং হতাশ।
কিন্তু এমন অবস্থা কেন?
পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমানে পুর এলাকায় দু’টি জলের রিজার্ভার রয়েছে। ওই দু’টি রিজার্ভারে যে পরিমাণ জল ধরে তাতে পুর এলাকায় প্রতিটি বাড়িতে জল পৌঁছে দেওয়া সম্ভব নয়। রিজার্ভার দু’টির অবস্থাও খুব খারাপ। যে কোনও সময় ভেঙে পড়তে পারে। তা ছাড়া নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। পুরসভার চেয়ারম্যান সুভাষ দত্ত বলেন, “পুর এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দিতে হলে মোট চারটি রিজার্ভার প্রয়োজন। পুরনো দু’টি রিজার্ভারের মেরামতি এবং নতুন দু’টি রিজার্ভার তৈরির জন্য জনস্বাস্থ্য কারিগরি (পিএইচই) দফতরকে বলা হয়েছে।” জেলা পিএইচই দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রিজার্ভার সারানোর মতো টাকা তাদের কাছে নেই। তা ছাড়া দফতরে এখন গ্রামীণ জল সরবরাহ নিয়ে কাজ চলছে। দফতরের বারাসত ডিভিশনের নির্বাহী বাস্তুকার চন্দ্রশেখর ভৌমিক বলেন, “গোবরডাঙা পুরসভাকে বলা হয়েছে, পুর এলাকায় জল সররাহের দায়িত্ব তাদের নিজেদের অধীনে নেওয়ার জন্য। কিন্তু তারা তা করেনি। ফলে আমাদেরই এখন রক্ষণাবেক্ষণ করতে হচ্ছে। যদিও রাজ্য সরকারও পুরসভাকে নির্দেশ দিয়েছে জল প্রকল্প নিজেদের হাতে নেওয়ার জন্য। কিন্তু এখনও ওরা সে ব্যাপারে উচ্চবাচ্চ্য করছে না।”
এ ব্যাপারে সুভাষবাবু বলেন, “পিএইচই জলপ্রকল্প আমাদের হাতে নেওয়ার কথা বলেছে ঠিকই। কিন্তু পাইপ লাইন সম্প্রসারণ, রিজার্ভারের রক্ষণাবেক্ষণ করার পরিকাঠামো আমাদের নেই। ওদের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মী রয়েছে। আমাদের তা নেই। তা ছাড়া আমাদের তহবিলে টাকা নেই।”
পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান সিপিএমের বাপি ভট্টাচার্য বলেন, “পুরসভা চাইলে আরও বাড়িতে জলের সংযোগ দিতে পারত। তা ছাড়া আমাদের সময়ে পাইপ লাইন সম্প্রসারেণের জন্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা এসেছিল। ওই টাকায় পাইপ লাইনের সম্প্রসারণ হয়নি।” সিপিএমের গোবরডাঙা শহর লোকাল কমিটির সম্পাদক শঙ্কর নন্দীর অভিযোগ, “চেয়ারম্যান বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জলের সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু বিশেষ কোটায় গোপনে অনেকেই জলের সংযোগ পাচ্ছেন। বর্তমানে যে পরিকাঠামো রয়েছে তাতে ৭০ শতাংশ বাড়িতে জলের সংযোগ দেওয়া সম্ভব।”
বাপিবাবুর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে চেয়ারম্যান বলেন, “যে ৩০ লক্ষ টাকার কথা বলা হচ্ছে তার কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি (জিও) বের হয়নি। কোনও ওয়ার্ক অর্ডার ছাড়াই মুখে মুখে ঠিকাদারদের দিয়ে কাজ করানোর পরিকল্পনা করেছিল ওরা। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় ঠিকাদাররা পাইপ তুলে নিয়ে চলে যায়।”
সম্প্রতি পুরসভায় কাউন্সিলারদের এক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, বাসিন্দাদের কাছ থেকে জলকর না নেওয়া হলেও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ কিছু টাকা নেওয়া হবে। কারণ বিদ্যুতের বিল থেকে যাবতীয় খরচ পুরসভাকেই বহন করতে হয়। সুভাষবাবু বলেন, “পিএইচই-র পক্ষ থেকে আমাদের জানানো হয়েছে, জলের সংযোগের বিষয়টি এখন দেখছে পুরসভার অধীন মিউনিসিপ্যাল অ্যাফেয়ার দফতর। তাদের কাছে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে।”
তবে এ সব সত্ত্বেও পুর এলাকার সমস্ত বাড়িতে কবে জলের সংযোগ দেওয়া যাবে তার কোনও জবাব পুর কর্তৃপক্ষ দিতে পারেননি। |