মকর সংক্রান্তির তিন দিন আগে থেকেই জমে উঠল সাগরমেলা।
কনকনে ঠান্ডায় বৃহস্পতিবার রাত আটটার সময়েও কচুবেড়িয়া থেকে দলে দলে লোক ঢুকছেন মেলা প্রাঙ্গণে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, এ পর্যম্ত লাখখানেক লোক মেলায় হাজির হয়েছেন। পরের ক’দিন ভিড় অনেক বাড়বে বলে জেলা প্রশাসন মনে করছে।
ভিড় ক্রমশ বাড়তে থাকায় মেলা তার নিজস্ব চরিত্র পেতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই মেলা প্রাঙ্গণে হাজির হয়েছেন নানা ধরনের সাধু। এ দিন বিকেলে ছাই মেখে ‘ধ্যান’-এ বসেছিলেন এক সাধু। এক চিত্রগ্রাহক ক্যামেরা তাক করতেই ধ্যানস্থ বাবা ‘পোজ’ দেওয়া শুরু করলেন। ছবি তোলা শেষ হতেই সটান দক্ষিণা দাবি।
আর এক সাধু বসেছিলেন গোটা পাঁচেক মোবাইল হাতে নিয়ে। সারাক্ষণই ব্যস্ত মোবাইলে কথা বলতে। নাম জিজ্ঞাসা করতে উত্তর এল, “লোগ মুঝে মোবাইল বাবা নামসে পহেচানতে হ্যায়।” কার সঙ্গে কথা বলছিলেন মোবাইলে? |
“ইস সংসার মে বহুত চেলা হ্যায় মেরা। উনসেই বাত হোতে হ্যায়।” বললেন মোবাইল-বাবা।
বাবাদের ঘিরে দর্শনার্থীদের ভিড়। অনেকে আবার কেনাকাটা শুরু করেছেন মেলায় সাজানো বিভিন্ন দোকানে। কনকনে ঠান্ডার মধ্যেই শিশুপুত্র আর স্ত্রীকে নিয়ে মেলায় ঘুরছিলেন রাজেন্দ্র সিংহ। বিহারের পূর্ণিয়ার বাসিন্দা এই যুবক এ বারেই প্রথম এসেছেন মেলায়। শুক্রবার স্নান করেই ফেরত যাবেন বাড়িতে। শুধু রাজেন্দ্র নয়, উত্তরপ্রদেশের মহেন্দ্র যাদব বা বীণা কুমারীরাও ফিরে যাবেন মকরস্নানের আগেই। কেন?
রাজেন্দ্রর কথায়, “ইতনা ভিড়, বাচ্চা অউর বিবিকো সামাল নেহি পাউঙ্গা।”
জেলা প্রশাসনের এক অফিসার জানান, গত ক’দিন ধরে ভিড় একটু কম ছিল। কারণ, লাগাতার বৃষ্টি। এ দিন সূর্য দেখা দিতেই পিলপিল করে লোক ঢুকতে শুরু করেছে মেলায়। ভিড় হয়েছে কপিলমুনির মন্দিরেও। এ দিন দুপুরে সাগরদ্বীপে আসার পথে জেটিতেই কয়েক হাজার লোকের লাইন চোখে পড়েছিল। পরে জানা গেল, সেটা ছিল শুরু। পরে আরও লোক এসেছে মেলায়।
ভরা শীতে ‘অকাল’ বৃষ্টির কারণে সমস্যায় পড়েছিল জেলা প্রশাসনও। জেলাশাসক জানান, বৃষ্টিতে প্রচণ্ড কাদা হয়েছিল মেলাপ্রাঙ্গণ-সহ সাগরের পথে। কাদার জন্য ডায়মন্ড হারবার জেটিতেও সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। কিন্তু এ দিন থেকে কর্মীরা লাগাতার কাজ করে সেই ঘাটতি মেটাবার চেষ্টা শুরু করেছেন বলে জেলাশাসক জানিয়েছেন।
প্রশাসন সূত্রের খবর, এ বার মেলায় আগুন রুখতে হোগলার তাঁবুতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশেষ প্রলেপ। পাশাপাশি, তাঁবুতে আগুন না জ্বালানোর জন্য লাগাতার ঘোষণাও চলছে।
মেলার পরিবেশ রক্ষার জন্য গত বছর থেকেই চালু হয়েছিল ভ্রাম্যমাণ শৌচাগার। এক অফিসার জানান, এ বারে সেই শৌচাগারের সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। ওই শৌচাগার যাতে আরও বেশি লোক ব্যবহার করেন, সে জন্য মাইকে ঘোষণাও চলছে নিয়মিত। মহিলাদের পোশাক বদলানোর জন্যও তৈরি করা হয়েছে বিশেষ তাঁবু।
গত কয়েক বছর মেলায় আসা দর্শনার্থীদের অনেকেই পেটের অসুখে আক্রান্ত হয়েছিলেন। সেই রোগ রুখতে এ বার পাউচ প্যাকেটে করে জল সরবারহ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলায় আসা-যাওয়ার জন্য এ বার চালু হয়েছে প্রি-প্রেড ট্যাক্সিও। জেলাশাসক জানান, কচুবেড়িয়া থেকে চেমাগুড়ি পর্যন্ত এই ট্যাক্সি যাতায়াত করছে। এর জন্য ৪০০ টাকা ভাড়া ঠিক করেছে জেলা প্রশাসন। সরকারি সূত্রের খবর, বছর কয়েক ধরে মওকা বুঝে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা ভাড়া নিয়েছেন গাড়িচালকরা। এ বার তা রুখতেই এই ব্যবস্থা। মেলার নিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক পুলিশও। জেলার পুলিশ সুপার লক্ষ্মীনারায়ণ মীনা জানান, নিরাপত্তার জন্য ছ’হাজার পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি রয়েছে উপকূলরক্ষী বাহিনী, অসামরিক নিরাপত্তা এবং বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কর্মীরাও। আগামী ১৫ তারিখ মকরস্নানের দিন আকাশে চক্কর কাটবে বিমান। |