ওয়াকায় সিরিজ নির্ণায়ক টেস্টটা অবশেষে এসে পড়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় টেস্ট ক্রিকেট কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ওয়াকাকে অন্যতম সেরা বলা যায়। কারণ বিশ্বের প্রায় সব দেশের ক্রিকেটারই এখানে ভাল কিছু করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে। এখানে ভাল পারফরম্যান্স মানেই ক্রিকেট বিশ্বের কাছে সেই ক্রিকেটারের সুনাম বেড়ে যাওয়া, ফাস্ট বোলিংয়ের বিরুদ্ধে খুব ভাল হিসেবে পরিচিত হওয়া। অনেকটা বিদেশ থেকে এসে উপমহাদেশের ঘূর্ণি উইকেটে বড় রান করার মতো। ভারতের ব্যাটসম্যানদের ক্ষেত্রে তাই পারথে রান করাটা বড় ব্যাপার। গত ২০ বছরে ভারত এখানে খুব বেশি টেস্ট ম্যাচ খেলেনি এবং যতদূর জানি দু’বার ছাড়া পারথ নিয়ে খুব ভাল স্মৃতি নেই। পেস ও বাউন্স ভরা উইকেটের ঐতিহ্য বরাবরই, কিন্তু ভারত গত সফরে ২০০৭-এ এখানে টেস্ট জিতেছিল। তা-ও পাঁচ পেসারের অস্ট্রেলীয় বোলিং আক্রমণের বিরুদ্ধে। সেই ম্যাচ থেকে নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাসটুকু নিংড়ে নেবে ভারত। সেই টেস্টের পেস আক্রমণের মধ্যে ইশান্ত শর্মাই এ বার আছে এবং এ বারের টিমেরও কুড়িটা উইকেট তোলার ক্ষমতা আছে।
টেস্টের আগে সবচেয়ে বেশি কথা হচ্ছে উইকেট নিয়ে। ২০০৯-এ এখানকার পিচ নতুন করে তৈরি হয়েছিল এবং বলা হচ্ছে পুরনো দিনের পারথের মতো ভয়ঙ্কর পেস ফিরে এসেছে। সেটা না হয় ম্যাচে দেখব আমরা। একই কথা ২০০৭-এও আমরা শুনেছিলাম, কিন্তু বাস্তবে উইকেট সেরকম কিছু ছিল না। গতকাল আমি মাঠে গিয়ে অবশ্য যে উইকেটটা দেখেছি, তাতে ভালই ঘাস আছে। উইকেটটা তাজাও লাগছে। পারথে এখন বেশ গরম। সে জন্যই দেখতে আগ্রহী এই তাজা ভাব উইকেট কতক্ষণ ধরে রাখতে পারে। দেখে মনে হচ্ছে প্রথম দিকে উইকেটে সিম মুভমেন্ট থাকলেও প্রথম দিন গতি তেমন থাকবে না। তবে টেস্ট ম্যাচ যত এগোবে, উইকেট তত গতিশীল হবে। মাঠের মাঝখানে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকালে মাঠটাকে খুব বড় মনে হয় না। বরং উইকেটের স্কোয়ারে বাউন্ডারি ছোট এবং সে জন্য ব্যাটসম্যান ভাল শটের দাম পাবে। সিরিজে ফিরে আসার শেষ সুযোগ ভারতের সামনে, কিন্তু তার জন্য মানসিক যুদ্ধটাও দারুণ ভাবে জিততে হবে। বিদেশে টানা ছ’টা টেস্ট হারার পরে আত্মবিশ্বাস হারানোটা খুব সোজা, কিন্তু ভারতীয়দের মনে রাখা উচিত, এর চেয়ে খারাপ আর কী হবে? আসল ব্যাপার হল মানসিক যুদ্ধ এবং সেটার জন্য তৈরি হওয়ার সময় এসেছে। সোজা কথা মাঠে নেমে সব ভুলে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে। দুটো টিমের মধ্যে কথার যুদ্ধও ভাল লাগছে। জাহির আর হ্যাডিন ম্যাচের আগে একে অপরকে এক হাত নিয়েছে। রিকি পন্টিংও কথার লড়াইয়ে নেমে পড়েছে এবং ওর আর জাহিরের লড়াইটা দেখতে মুখিয়ে আছি। এসব পরিস্থিতিতে জাহির বোলিংটা উপভোগ করবে। ভারতীয় দলে ভাঙন নিয়ে যা বলা হচ্ছে, আমার মনে হচ্ছে না সে সব সত্যি। অস্ট্রেলিয়াতে সফরকারী দল হারলে অস্ট্রেলীয় মিডিয়া এরকমই করে থাকে এবং ভারত এতে প্রভাবিত হবে না। বরং এই প্রচার ভারতের পক্ষে ইতিবাচক ভাবে কাজ করবে। ভারতকে লম্বা সময় নেতৃত্ব দিয়েছি বলে জানি, এ রকম পরিস্থিতিতেই টিম ভাল খেলে এবং আশা করা যাক এ বারও খেলবে। অতীতে এমন উদাহরণ আছে, যেমন গতবারের সিডনি। বিতর্ক ভারতকে তাতিয়ে দিয়েছিল এবং তারপর পারথে টেস্টটা দুর্দান্ত ভাবে জেতা গিয়েছিল। আশা করা যাক, এ বারও টিম নিজেদের স্বার্থে ঘুরে দাঁড়াবে। |