ওয়াকার বাইশ গজে পানীয় সহযোগে নৈশভোজ? তা-ও টেস্ট শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে?
অভাবনীয়, অবিশ্বাস্য এবং অত্যাশ্চর্য এই ঘটনা ঘটে গিয়েছে পারথের ওয়াকায়, যা আইসিসি-র নিয়মে একেবারেই আইনবিরুদ্ধ এবং চূড়ান্ত শাস্তিযোগ্য অপরাধ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ স্টার আনন্দ ফুটেজ সহ ওয়াকার পিচের উপরে পার্টি হওয়ার ছবি দেখাতে শুরু করে। সেখানে দেখা যায়, ওয়াকার উইকেটের উপরে বিয়ারের বোতল রয়েছে, সেখানে দাঁড়িয়ে রীতিমত পার্টি করার মেজাজে হেসে খেলে বারমুডা আর রংচঙে টি শার্ট পরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন জনা দশ বারো। জানা গিয়েছে পারথের সময় রাত আটটা নাগাদ তাঁরা মাঠে ঢুকে পড়েন। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার মাঠকর্মী, যাঁদের গলায় পরিচয়পত্র ছিল। কারও গলায় তাও ছিল না। কেউ কেউ আবার গুডলেংথ স্পটে দাঁড়িয়ে শ্যাডো প্র্যাক্টিসও করেছেন। পিচের চারপাশে কিউরেটর বা কোনও নিরাপত্তারক্ষীকে দেখা যায়নি। খবর প্রকাশ হতেই ক্রিকেটদুনিয়ায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। |
ওয়াকায় ইভনিং ওয়াক: পিচে বিয়ারের বোতল হাতে পার্টি। |
প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে ভারতীয় বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজীব শুক্ল বলেন, “ঘটনা একেবারেই নজিরবিহীন। পিচের মধ্যে বিয়ারের বোতল দেখা যাচ্ছে। ম্যাচের আগের দিন বাইশ গজ সুরক্ষিত রাখার কাজ কিউরেটরের। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার গোটা বিষয়টা দেখা উচিত। আমরা নিশ্চয়ই এই নিয়ে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার কাছে জানতে চাইব।”
ওয়াকার কিউরেটর ক্যামেরন সাদারল্যান্ড এখন অপরাধীর কাঠগড়ায়। কারণ ম্যাচের আগের দিন উইকেট রক্ষা করার দায়িত্ব তাঁরই। আরও প্রশ্ন, ওয়াকার মূল গেটের নিরাপত্তারক্ষীরাই বা কোথায় ছিলেন? মাঠকর্মীদের সঙ্গে বহিরাগতরা কী করে মাঠে ঢুকলেন? ক্রিকেটমহলের একটা গরিষ্ঠ অংশ এখন এই বিষয়ে ম্যাচ রেফারি রঞ্জন মদুগলে কী ব্যবস্থা নেন, তা দেখার অপেক্ষায়।
পারথের পিচ কেলেঙ্কারির কয়েক ঘণ্টা আগে আবার নিজের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করে বিতর্ক তুলে দিলেন মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। জানিয়ে দিলেন, ২০১৫ বিশ্বকাপে তাঁকে যদি খেলতে হয়, তা হলে ২০১৩-র মধ্যে টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। এর আগে ধোনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ২০১৩-র মধ্যে ঠিক করবেন, পরের বিশ্বকাপ খেলবেন কি না। আর এখন তিনি বলছেন, দু’ধরনের ক্রিকেট থেকে একটাকে তাঁকে বেছে নিতে হবে। “যদি ২০১৫ বিশ্বকাপে আমাকে খেলতে হয়, তা হলে ক্রিকেটের একটা ফর্ম্যাট থেকে সরে দাঁড়াতে হবে,” এ দিন সাংবাদিকদের বলেছেন ধোনি। এ ক্ষেত্রে তাই জল্পনা চলছে, বিশ্বকাপ খেলার জন্য ভারত অধিনায়ক টেস্ট ক্রিকেটকে আগে ভাগে বিদায় জানাবেন কি না। বিশেষ করে যেখানে বিদেশে টেস্টে তাঁর ফর্ম এবং নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। |
পিচের উপরেই বিয়ারের বোতল রেখে শ্যাডো প্র্যাক্টিস। |
ধোনি অবশ্য এ দিন এক হাত নিয়ে গেলেন তাঁর সমালোচকদের। সুনীল গাওস্করের মতো কিংবদন্তিও রেহাই পাননি। দিন কয়েক আগে গাওস্কর উষ্মা প্রকাশ করে বলেছিলেন, দরকারের চেয়ে অনেক বেশি প্র্যাক্টিস থেকে ছুটি নিচ্ছে ধোনির টিম। বৃহস্পতিবার ধোনি যার উত্তরে সাফ বললেন, “আমরা এমন একটা টিম, যারা সবচেয়ে বেশি কঠোর প্র্যাক্টিসে ডুবে থাকে। প্রত্যেক দিন আমরা চার ঘণ্টা করে নেটে পড়ে থাকি। বরং আমরা চেষ্টা করছি প্র্যাক্টিসের সময় কমিয়ে বিনোদনমূলক কাজকর্মে কিছুটা ডুবে থাকতে।” পর পর দু’টেস্টে বিশ্রী হারের পর এমনও বলা হয়েছে, চাপের মুখে তিনি ডিফেন্সিভ হয়ে পড়েন। ধোনি এ সব সমালোচনাকে পাত্তা দিচ্ছেন না। বরং বলছেন, “বাইরে থেকে নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে মন্তব্য করা খুব সোজা।”
|
ছবি: স্টার আনন্দের সৌজন্যে |