‘স্বঘোষিত টিএমসিপি’, বিধায়কের মন্তব্যে ক্ষোভ
ধ্যক্ষ-হেনস্থার ঘটনা থেকে নিজের দলের দায় ঝেড়ে ফেলতে গিয়ে পাল্টা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লেন রামপুরহাটের তৃণমূল বিধায়ক আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই ঘটনায় অভিযুক্তদের ‘স্বঘোষিত’ তৃণমূল ছাত্র পরিষদ (টিএমসিপি) বলে বিধায়ক দাবি করলেও ছাত্র সংগঠনটির বীরভূম জেলা সভাপতি প্রয়োজনে অভিযুক্তদের আইনি সাহায্য দেওয়ার কথা বলে বিধায়কের বিড়ম্বনা আরও বাড়িয়েছেন।
ইতিমধ্যে বৃহস্পতিবার রামপুরহাট কলেজের অধ্যক্ষ শিবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় পুলিশের কাছে টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে এফআইআর করেছেন। নির্দিষ্ট করে কোনও ছাত্রের নাম অবশ্য তিনি সেই লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেননি।
বুধবার শিবাশিসবাবুকে মানসিক হেনস্থা করা ও তাঁর সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়ার খবর বৈদ্যুতিন মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর পরই আশিসবাবু আসরে নামেন। অধ্যক্ষ ‘নাটক’ করছেন বলার পাশাপাশি তিনি দাবি করতে থাকেন, ঘটনার সময় অধ্যক্ষের ঘরে টিএমসিপি-র কেউ ছিলেন না। দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বের তরফ থেকে ‘নির্দেশ’ যায় যে, এই ঘটনাকে এসএফআইয়ের ‘চক্রান্ত’ হিসাবেই প্রতিপন্ন করতে হবে। সিপিএম এবং এসএফআইয়ের সঙ্গে অধ্যক্ষের ‘যোগসাজশ’-এর অভিযোগ বুধবার থেকে ধারাবাহিক ভাবে তুলে আশিসবাবু দলের ‘নির্দেশ’-ই পালন করেছেন।

আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
সেই সূত্রেই তৃণমূলের জেলা চেয়ারম্যান আশিসবাবু বৃহস্পতিবার বলেছেন, “রামপুরহাট কলেজে মাস দুয়েক আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের পরে সেখানে নতুন করে ছাত্র সংগঠনের কলেজ ইউনিট গড়ার কথা। সে জন্য আমরা পুরনো কমিটি ভেঙে দিয়েছি। বর্তমানে কলেজ ইউনিটের সভাপতি বলে কেউ নেই। যে বা যারা দাবি করছে, তারা টিএমসিপি-র কলেজ ইউনিটের সভাপতি বা সদস্য, তারা সব স্বঘোষিত টিএমসিপি!”
বিধায়ক তথা দলীয় নেতার এই বক্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন টিএমসিপি-র কলেজ ইউনিটের সভাপতি হিসাবে নিজেকে দাবি করা তথা অধ্যক্ষ-নিগ্রহের সময় উপস্থিত থাকা ওই কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র অমিত ঘোষাল। এ দিন তিনি বলেন, “আমরা টিএমসিপি-তেই আছি। থাকবও। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার নির্দেশেই এই কলেজে এসএফআইয়ের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমি যে ইউনিট সভাপতি, তা কলেজের সব ছাত্রছাত্রীই জানেন। আজ যদি হঠাৎ বিধায়ক আমাকে স্বঘোষিত টিএমসিপি হিসাবে দাবি করেন, আমি কী-ই বা করতে পারি!”
টিএমসিপি-র জেলা সভাপতি সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও বিধায়কের কথার বিরোধিতা করেছেন। তাঁর মন্তব্য, “স্বঘোষিত টিএমসিপি বলে কিছু হয় না। বুধবার যারা অধ্যক্ষের কাছে প্রতিবাদ জানাতে গিয়েছিল, তারা টিএমসিপি-র সমর্থক বলেই আমি জানি।’’ তিনি এ-ও জানান, অমিত রামপুরহাট কলেজ ইউনিটের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি তাঁর বদলে সুমন মণ্ডলকে সভাপতি করা হয়। তবে বর্তমানে কলেজ ইউনিট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ওই কলেজের পড়ুয়ারাও বলছেন, অমিত বরাবরই টিএমসিপি করেন। গত ডিসেম্বরে ওই সংগঠনের হয়েই ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করেছেন। সত্যজিৎবাবু অবশ্য এ-ও জানিয়েছেন, অমিত-সহ বুধবারের ঘটনায় অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করলে তাঁরা সংগঠনের তরফে তাঁদের আইনি সাহায্য দেবেন।
অর্থাৎ, আশিসবাবু যতই দায় ঝেড়ে ফেলার চেষ্টা করুন না কেন, পরিস্থিতি কিন্তু অন্য কথাই বলছে। এমনকী রামপুরহাটের তৃণমূল কর্মীদের একাংশও দলের জেলা চেয়ারম্যানের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করতে পারছেন না।
পুলিশ ওই ছাত্রদের ধরবে কি না বা ধরলেও রায়গঞ্জের মতো ‘লঘু’ ধারায় মামলা করবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। কারণ এ দিন অধ্যক্ষ রামপুরহাট থানায় নির্দিষ্ট কোনও ছাত্রের নামে অভিযোগ দায়ের করেননি। বরং লিখিত অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, টিএমসিপি-র কিছু সদস্য তাঁকে নিগৃহীত করেছিলেন। ছাত্র পরিষদের কিছু সদস্য-সমর্থক ঘটনার সময় তাঁর ঘরে থাকলেও অভিযোগে কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠনের উল্লেখও নেই। কারও নাম করেননি কেন? শিবাশিসবাবুর যুক্তি, “ছাত্রদের ভবিষ্যতের কথা ভেবেই আমি কারও নাম করিনি। তবে সংগঠনগত ভাবে তারা যে টিএমসিপি-র, সে কথা উল্লেখ করেছি। ওই ছাত্রদের এ সব করতে কোনও মহল থেকে প্ররোচিত করা হয়েছে বলেই আমার ধারণা।”
টিএমসিপি-র বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করছেন রামপুরহাট কলেজের অধ্যক্ষ। ছবি: সব্যসাচী ইসলাম
এ প্রসঙ্গে ওই কলেজেরই সদ্য অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আশিসবাবুর বক্তব্য, “অধ্যক্ষ যদি টিএমসিপি-র নাম দিয়ে অভিযোগ করে থাকেন, তা হলে তিনি দলতন্ত্র করছেন। বুধবারই আমি বলেছিলাম নিজের দুর্নীতি ঢাকার জন্য উনি সিপিএমের সঙ্গে সমঝোতা করে চলেন। সেটাই আরও স্পষ্ট হল।”
এ দিন সকালে রামপুরহাটের ডিএম বৈভব শ্রীবাস্তব এবং এসডিপিও বিশ্বজিৎ ঘোষ শিবাশিসবাবুর বাড়িতে যান। তাঁরা যাওয়ার পরেই অধ্যক্ষ থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পাশাপাশি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানিয়ে পুলিশের কাছে তাঁকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার আর্জিও জানান অধ্যক্ষ। কলেজেও পুলিশ মোতায়েনের আবেদন করেছেন। জেলার পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেছেন, “অধ্যক্ষ কোনও ছাত্রের নামে অভিযোগ করেননি। ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। অধ্যক্ষকে নিরাপত্তারক্ষী দেওয়ার বিষয়টি পুলিশ বিবেচনা করবে।” শিবাশিসবাবুর অভিযোগ দায়েরের সময় ঘটনাচক্রে থানারই উদ্যোগে স্বামী বিবেকানন্দের জন্ম সার্ধশতবর্ষ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করছিলেন বিধায়ক আশিসবাবু। দু’জনের অবশ্য কথা হয়নি। বিকেলে রামপুরহাট শহরে অধ্যক্ষ-নিগ্রহের প্রতিবাদে এসএফআই এবং ডিওয়াইএফ ধিক্কার মিছিল করে।
গোটা ঘটনা নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর যাই থাকুক না কেন, কলেজে কলেজে বিশৃঙ্খলা ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে যে রাজ্য উদ্বিগ্ন, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তাঁর কথায়, “কলেজে কলেজে যা ঘটছে, তা নিয়ে সরকার খুবই উদ্বিগ্ন। কী ভাবে তা বন্ধ করা যায়, তার উপায় খুঁজতে এক দিকে নির্বাচন কমিশন, অন্য দিকে ছাত্র সংগঠনগুলির সঙ্গেও আমি কথা বলব।”
বুধবার শিক্ষামন্ত্রী বলেন, কলেজগুলোয় সংঘর্ষের বিষয়টি স্বরাষ্ট্র দফতরের দেখার কথা। তার পরিপ্রেক্ষিত ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “কলেজ চালানোয় অধ্যক্ষদের যথেষ্টই স্বাধীনতা আছে। পরিস্থিতির প্রয়োজনে তাঁরা পুলিশের সাহায্যও নিতে পারেন। কিন্তু লক্ষ করছি, অনেক অধ্যক্ষই পুলিশের সাহায্য না নিয়ে সংবাদমাধ্যমের আশ্রয় নিচ্ছেন। ফলে ঘটনার খবর সময়ে স্বরাষ্ট্র দফতরের কাছে পৌঁছচ্ছেই না। এর থেকে বোঝা যায় যে, কিছু অধ্যক্ষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এটা করছেন। তর্কে না গিয়ে বলা যায় যে তাঁরা বর্তমান সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল নয়।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.