শুধু বাণিজ্যই নয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চিনের মোকাবিলায় সাংস্কৃতিক কূটনীতিকে হাতিয়ার করছে নয়াদিল্লি।
চিনকে চাপে রাখতে তাইওয়ানের মতো দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়েছে ভারত। এবার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করতে চায় নয়াদিল্লি। গত সেপ্টেম্বরে ভিয়েতনাম সংলগ্ন দক্ষিণ চিন সাগরে তেল উত্তোলনের সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। রণকৌশলগত ভাবে গুরুত্বপূর্ণ ওই এলাকায় ভারতের উপস্থিতি মেনে নিতে চায়নি বেজিং।
চিনের প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও দক্ষিণ চিন সাগর নিয়ে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসেনি সাউথ ব্লক। বরং এবার সেই ভিয়েতনামেই সাংস্কৃতিক দৌত্যের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ঠিক হয়েছে সে দেশের মা সন মন্দিরের সংরক্ষণের কাজ করবে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই)। |
আগে কম্বোডিয়ার আঙ্কোরভাট, মায়ানমারের আনন্দ মন্দিরের সংস্কার করেছে এএসআই। ভিয়েতনামে যুদ্ধের সময় মার্কিন বোমায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল মা সন মন্দির। চতুর্থ থেকে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে ওই মন্দির গড়ে ওঠার পিছনে অবদান রয়েছে চম্পা বা চেইন থা রাজবংশের। বিশেষজ্ঞদের মতে মন্দিরটিতে আদতে শিবের উপাসনা হত। যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হত ভদ্রেশ্বর। ভারতীয় ও স্থানীয় সংস্কৃতির মেলবন্ধনের উৎকৃষ্ট নমুনা হিসেবে পরিচিত মা সন।
১৯৯৯ সালে ওই মন্দিরটিকে বিশ্ব হেরিটেজ সাইটের মর্যাদা দেয় ইউনেস্কো। তারপর সেখানে ইতালি ও ফ্রান্সের পুরাতাত্ত্বিক দল সংস্কারের কাজ করেছে। কিন্তু ভারতীয় শিল্পরীতিতে তৈরি বলে গোটা মন্দিরটির সংরক্ষণ করতে ব্যর্থ হয় তারা।
এএসআই-এর অধিকর্তা গৌতম সেনগুপ্তের বক্তব্য, “ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ভারতীয় শিল্পের একটি গভীর যোগ রয়েছে। ভিয়েতনাম তার ব্যতিক্রম নয়। এখানেও ভারতীয় ও স্থানীয় ধর্মবিশ্বাস মিলে গিয়ে একটি নতুন স্থাপত্যশৈলী তৈরি হয়েছিল। যার মূল কাঠামোটি হল ভারতীয়।” তাই মন্দিরের সংস্কার এএসআইয়ের পক্ষে করা সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
এএসআই জানিয়েছে, ভারতীয় শিখর বা টাওয়ার স্থাপত্যশৈলিতে লাল-ইট (রেড ব্রিক) দিয়ে ওই মন্দিরটি তৈরি করা হয়েছিল। মন্দিরটির সংস্কারের জন্য প্রাথমিক ভাবে ১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। তা মঞ্জুর করেছে ভারত সরকার।
বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ভারত ও ভিয়েতনামের মধ্যে সুসম্পর্কের সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। রয়েছে ব্যবসায়িক সম্পর্কও। এবার পালা সাংস্কৃতিক মেলবন্ধনের। ভিয়েতনামের পাশাপাশি অন্য দেশেও এএসআইকে এই ধরনের কাজের দায়িত্ব দেওয়ার কথা ভাবছে ভারত সরকার। প্রতিবেশী দেশের বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন নিজেদের খরচে সংরক্ষণ ও প্রয়োজনে পুনর্নির্মাণ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। |