বারুদে পূর্বস্থলী
বোমা বাঁধায় হাতেখড়ি দেয় বাবা-কাকাই
ছর দেড়েক আগের কথা। ফুটবল মাঠের দখলকে কেন্দ্র করে বিবাদ বাধে মাঠের দু’পাশের দুই গ্রামের মধ্যে। মন কষাকষি, বচসা থেকে তা গড়ায় মারামারিতে। ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ তো হতবাক। খেলার মাঠের দখল নিতে তখন বন্দুক, পিস্তল, বোমা হাতে আসরে নেমেছে সমাজবিরোধীরা। দূরে দাঁড়িয়ে দু’দলের লড়াই দেখতে দেখতে এক পুলিশ অফিসার বলে ফেলেন, “ওদের কাছে এমন সব অস্ত্র রয়েছে যে, থানার এই কয়েক জন কর্মী ও বন্দুক নিয়ে ওখানে ঢুকতে যাওয়া বোকামি।” পূর্বস্থলীর আলুনির মাঠ ও ঘোষপাড়ার মধ্যে সংঘর্ষ যখন থামে তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে জনা চারেক গ্রামবাসীর।
সামান্য বচসা থেকে হাতে অস্ত্র তুলে নেওয়ার এমন ‘রেওয়াজ’ অবশ্য পূর্বস্থলীতে নতুন নয়। চরের জমি দখল নিয়ে দ্বন্দ্ব। রাখাল বালকদের মধ্যে তর্কাতর্কি। জমির ফসল গরুতে খাওয়া নিয়ে বিবাদ-সহ নানা ছোটখাট কারণেও মাঝেমধ্যে বোমা-গুলির লড়াইয়ে অশান্ত হয়ে ওঠে পূর্বস্থলী। সম্প্রতি পূর্বস্থলী কলেজে ছাত্র সংঘর্ষের পরে বিধায়কের সঙ্গে জখমদের নবদ্বীপ হাসপাতালে দেখতে গিয়ে গুলিতে খুন হন তৃণমূল নেতা সজল ঘোষ। ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ওই কলেজের এসএফআই নেতা লোকনাথ দেবনাথকে এখনও ধরতে পারেনি পুলিশ। পূর্বস্থলীর তৃণমূল বিধায়ক তপন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, গুলির লক্ষ ছিলেন তিনিই। মাস দু’য়েক আগে তাঁকে বাড়িতে গিয়ে খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগে কাদের শেখ নামে এক ব্যক্তিকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন বিধায়কের দেহরক্ষী। এই ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে, কী ভাবে ছাত্রের হাতে পৌঁছল আগ্নেয়াস্ত্র। ফের সামনে চলে এসেছে পূর্বস্থলীতে অস্ত্রের রমরমার বিষয়টি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, পূর্বস্থলী-২ ব্লকের কাষ্ঠশালী চর, রাজার চর, দেবনগর চর, হাঁপানিয়া, লক্ষ্মীপুর, খড়দত্ত পাড়া-সহ নানা গ্রামে দুষ্কৃতীদের দাপাদাপিতে অনেক সময়ে দিনের বেলাতেও সাধারণ মানুষজনের রাস্তায় চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায়। খুন-খারাপিও লেগেই থাকে। গত তিন দশক ধরে সমাজবিরোধীদের মূল হাতিয়ার ছিল হাত বোমা। বাড়িতে বোমা বাঁধা দেখতে দেখতেই তার কায়দাকানুন শিখে নেয় বারো-চোদ্দো বছরের কিশোরেরা। এই ‘রীতি’ চলে আসছে বেশ কয়েক প্রজন্ম ধরেই। বোমা বাঁধার সময়ে তা ফেটে মৃত্যুও হয়েছে অনেকের।
আলুনির মাঠের ঘটনার পরে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, শুধু বোমা নয়, চোরাপথে এলাকায় ঢুকেছে স্বয়ংক্রিয় পাইপগান, উন্নত বন্দুক, রিভলভার, পিস্তল, কার্বাইন-সহ নানা ধরনের অস্ত্র ও গুলি। পূর্বস্থলী থানার আইসি দিলীপ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ২০১০ সালের অগস্ট থেকে টানা এক বছর নানা অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয় নানা ধরনের ৫৬টি আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২৮৯ রাউন্ড গুলি। বেআইনি ভাবে অস্ত্র রাখার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় ১১৬ জনকে। এর পরে অভিযান চালিয়ে উদ্ধার হয়েছে আরও অস্ত্র।
শুধু পুলিশ নয়, পূর্বস্থলীতে অস্ত্র ভাণ্ডারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি-ও। নানা অভিযানে তারাও উদ্ধার করেছে প্রচুর বন্দুক। পুলিশ ও সিআইডি কর্তারা জানাচ্ছেন, ধৃত দুষ্কৃতীদের জেরা করে জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলীতে চোরাপথে অস্ত্র সরবরাহ করছে আন্তঃরাজ্য পাচারকারীরা। তা ছড়িয়ে পড়ছে এলাকার সমাজবিরোধীদের হাতে।
কয়েক জন দুষ্কৃতীকে জেরা করে মাস সাতেক আগে পুলিশ হরিশঙ্কর সিংহ নামে এক আন্তঃরাজ্য অস্ত্র-ব্যবসায়ীর নাম জানতে পারে। তাকে ধরতে ফাঁদ পাতে পুলিশ। এক জনের মাধ্যমে একটি কার্বাইন বিক্রির টোপ দেওয়া হয় হরিশঙ্করকে। একটি কার্বাইন ও দু’টি ম্যাগাজিন বেচতে কালনা বাজারের কাছে একটি হোটেলে এলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। তাকে জেরা করে কালনার বিভিন্ন এলাকা থেকে পুলিশ উদ্ধার করে সরকারি কারখানায় তৈরি নানা বন্দুক, নকল লাইসেন্স, বিভিন্ন জেলাশাসকের নামাঙ্কিত ভুয়ো স্ট্যাম্প। তাকে জেরা করে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ অসম থেকে অবৈধ কারবারে যুক্ত থাকার অভিযোগে কয়েক জন কর্মীকেও গ্রেফতার করে। পুলিশের দাবি, হরিশঙ্করের মতো ব্যবসায়ীরাই অস্ত্রের জোগান দেয়। কিন্তু কেনে কারা? কেনই বা কেনে?



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.