শ্রমিকেরা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ। কারখানার কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এই অভিযোগে গত বছর ৪ নভেম্বর আসানসোলের ধাদকা এলাকায় একটি বেসরকারি নীল তৈরির কারখানায় ‘সাসপেনসন অফ ওয়ার্ক’ নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এই অবস্থায় কর্মহীন হয়ে পড়েন শ্রমিক-কর্মীরা। সম্প্রতি ওই কারখানার শ্রমিক-সমস্যা মেটাতে কর্তৃপক্ষ ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন রাজ্যের শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। শীঘ্রই পৃথক ভাবে দু’পক্ষের সঙ্গে ফের বৈঠক করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
কারখানাটি ২০০৬ সালের অগস্ট মাসে রেকিট অ্যান্ড কোলম্যান কোম্পানি একটি বেসরকারি সংস্থাকে হস্তান্তর করে। শ্রমিক-কর্মীদের অভিযোগ, এর কিছুদিন পর থেকেই সমস্যা শুরু হয়। ২০০৯-এর নভেম্বরে প্রথম বার কর্মবিরতির নোটিস ঝোলান কর্তৃপক্ষ। তিন মাস পরে ফের সেটি চালু হয়। ২০১১ সালের ৪ নভেম্বর ফের কর্মবিরতি ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। |
আসানসোলের ধাদকা এলাকায় ওই কারখানায় কর্মরত প্রায় দেড়শো জন স্থায়ী শ্রমিক এবং ৬০ জন ঠিকা শ্রমিকেরা শ্রমমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। এ বছর ৬ জানুয়ারি নিজের দফতরে শ্রমিক নেতা ও কারখানা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেন শ্রমমন্ত্রী। কারখানা কর্তৃপক্ষ তাঁর কাছে অভিযোগ করেন, শ্রমিক-কর্মীরা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করছেন না। কারখানার কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। নীলের আর্ন্তজাতিক বাজারের চাহিদা পড়ে যাওয়ায় দেশের বাজারের উপর নির্ভর করে কারখানাকে লাভজনক করে তুলতে অসুবিধা হচ্ছে।
পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “এই কারখানাটি এখন আর লাভজনক নয়। কী ভাবে এই কারখানাকে লাভজনক করে তোলা যাবে, সে বিষয়ে শ্রমিকদের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। আবার মালিকপক্ষের কাছেও তাঁদের সমস্যাগুলি জানতে চেয়েছি।” ১৫ দিনের মধ্যেই ফের পৃথক দু’টি সভা করে মালিক ও শ্রমিক পক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
এ দিকে, প্রায় তিন মাস ধরে কারখানাটি বন্ধ হয়ে পড়ে থাকায় সমস্যায় পড়েছেন শ্রমিক-কর্মীরা। প্রচুর টাকা বিদ্যুৎ বিল বাকি থাকায় কারখানা-সহ আবাসন এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় আবাসনের শ্রমিক-কর্মীরা জল, আলো পাচ্ছেন না। ধাদকা এলাকার ওই কারখানা আবাসনের বাসিন্দা, ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী পাপিয়া মণ্ডল বলে, “আলো না থাকায় রাতে পড়াশোনা করতে পারি না।” দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া প্রিয়া দাস বলেন, “সামনেই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সন্ধ্যার পরে আর পড়াশোনা করতে পারছি না। কী ভাবে পরীক্ষা দেব জানি না।” এই কারখানায় ১৩ বছর ধরে কাজ করছেন চণ্ডীচরণ মণ্ডল। তিনি বলেন, “প্রায় ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। সংসার চালাতে হিমসিম খাচ্ছি।” বাধ্য হয়েই শ্রমিক-কর্মীরা আবেদন করেছেন, যাতে রাজ্য সরকার উদ্যোগে কারখানা খোলানোর ব্যবস্থা করা হয়। কারখানার একমাত্র অরাজনৈতিক শ্রমিক সংগঠন রেকিট অ্যান্ড কোলম্যান ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কিশোন বাউরির দাবি, “আমরা চাই কারখানাটি খুলুক। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের জন্য সব রকমের সহযোগিতা করব।” তবে কারখানার কাজের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ মালিকপক্ষ করেছেন তা মানতে চাননি কিশোনবাবু। তাঁর দাবি, কাঁচামালের অভাবেই উৎপাদন মার খেয়েছে। |