ইঁদুর মারার সহজ উপায় কী? গৃহস্থেরা বলবেন, বেড়াল। কলকাতার সরকারি হাসপাতালগুলোতে সেই ফর্মুলাও ফেল!
শোনা যায়, বিধান রায়ের আমলে মহাকরণে ইঁদুর কমাতে বেড়াল পোষা হয়েছিল। হালে আর জি কর বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও ‘বেড়াল-দাওয়াই’ প্রয়োগ করার চেষ্টা করেছে। কাজ হয়নি। আর জি কর হাসপাতালের ডেপুটি সুপার সিদ্ধার্থ নিয়োগী বা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সুপার সিদ্ধার্থ চক্রবর্তী সখেদে বলেছেন, “হাসপাতালে ভাত-মাছ-দুধ খেয়ে বেড়ালের মুখে আর ইঁদুর রোচে না। যে ওয়ার্ডে ইঁদুর বেশি, সেখানে হাসপাতালেরই ক’টা বেড়াল এনে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ওরা একটা ইঁদুরেও মুখ দেয়নি।”
ইঁদুর মারা তো দূরের কথা, ইঁদুরের মতো বেড়াল নিজেও সরকারি হাসপাতালের এক মূর্তিমান সমস্যা। সর্বত্র দাপটে ঘুরে বেড়ায় ছোট-বড় বেড়াল। বেড়াল ধরার জন্যও প্রতি বছর রোগী কল্যাণ সমিতি থেকে মোটা টাকা গচ্চা দেওয়া হয়। মার্জার-রাজত্ব শেষ হয় না। সরকারি হাসপাতালে প্রায়ই চিকিৎসক, রোগী, চিকিৎসা-কর্মীদের আঁচড়ে-কামড়ে দেয় বেড়াল, খাবারে মুখ দেয়। রোগীর শয্যায় উঠে বসে থাকে। তাদের থেকে বিভিন্ন রোগ হওয়ারও সম্ভাবনা থেকে যায়। |
বেড়াল কেন তাড়ানো যাচ্ছে না? সরকারি হাসপাতাল থেকে বেড়াল ধরে, এমন এক সংস্থার কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, “অনেক দূরে নিয়ে গিয়ে ফেললেও ওরা চলে আসে। তুখোড় স্মৃতি।” স্বাস্থ্য-কর্তাদের পাল্টা অভিযোগ, “চিরকাল দেখেছি, বস্তা করে বেড়াল ধরা হয়। যাতে তারা পথ চিনে রাখতে না-পারে। এই সংস্থাগুলো খাঁচায় করে বেড়াল নিয়ে যায়। খাঁচা থেকে বেড়াল ফেরার রাস্তা চিনে রাখে।” আর একটি সংস্থার তরফে তুষার সরকার দাবি করলেন, “আমাদের ধরা বেড়াল ফেরে না। আমরা আমাদের নিজস্ব ঘেরা জায়গায় বেড়াল রাখি।” তা হলে হাসপাতাল বেড়াল-মুক্ত হয় না কেন? “আশপাশের অঞ্চল থেকে ক্রমাগতই বেড়াল আসতে থাকে। লোকে বেড়ালের বাচ্চা হাসপাতালে ফেলে যায়।” তাঁর আরও অভিযোগ, “হাসপাতাল চত্বরে ময়লা নিয়মিত সাফ হয় না। এঁটো থালা সরানো হয় না। খাবারের লোভে বেড়াল আসে।” স্বাস্থ্য কর্তারা উত্তরে বলছেন, এ সব কোনও যুক্তি নয়। হাসপাতাল বেড়ালমুক্ত করা সংস্থাগুলির কাজ। তারা করছে না।
এক-এক দিনে বেড়াল ধরার জন্য ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা নেয় সংস্থাগুলি। ইদানীং তারা দিনে ১৫০০ টাকাও হাঁকছে। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের সুপার স্বপন সাঁতরা জানালেন, কিছু দিন আগে একটি সংস্থা সব বেড়াল তাড়িয়ে দেবে বলে দাবি করে এক লপ্তে ৫ হাজার টাকা নিয়েছিল। কিন্তু দু’দিন পরেই অবস্থা যে-কে সেই। এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের অভিজ্ঞতাও একই রকম। দৈনিক ৮০০ টাকার বিনিময়ে বেড়াল তাড়ানোর দায়িত্ব নেয় একটি সংস্থা। কাজের শেষে সব বেড়াল তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এই মর্মে সই করিয়ে টাকাও নিয়ে যায়। কয়েক দিন পর দেখা যায় বেড়ালেরা আগের মতোই ল্যাজ ফুলিয়ে ঘুরছে। মেডিক্যাল কলেজের সুপার সিদ্ধার্থ চক্রবর্তীও একই অভিজ্ঞতা জানান।
বিভ্রান্ত আর জি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাই নতুন নিয়ম করেছেন। কোনও সংস্থাকে আর আলাদা করে বেড়াল ধরার দায়িত্ব দেওয়া হবে না। ঘোষণা করা হয়েছে, কেউ হাসপাতাল থেকে বেড়াল ধরে নিয়ে গেলেই রোগী কল্যাণ সমিতির তরফে তাঁকে হাতে-হাতে ৫০ টাকা দেওয়া হবে। কিন্তু এই ঘোষণার পরেও বেড়াল ধরার লোক পাওয়া যাচ্ছে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, দিন কয়েক আগে এক ব্যক্তি এসে হাসপাতালের সব ক’টি কালো বিড়াল ধরে নিয়ে গিয়েছেন। তার জন্য টাকাও নেননি। কারণ, কালো বিড়াল অনেক টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু সাদা, হলুদ, পাটকিলে, বেড়ালদের ধরতে কেউ আগ্রহী নয়। টাকা হাতে নিয়ে বসে অতএব ‘বেড়ালওয়ালা’র জন্য অপেক্ষা করছে স্বাস্থ্য দফতর।
|