জয়চণ্ডী পাহাড়কে ঘিরে পর্যটনের পরিকাঠামো গড়তে সিপিএম এবং তৃণমূল যৌথ ভাবে কাজ করতে চাইছে। কিন্তু সেই পুরুলিয়া জেলারই ‘মানভূম মেলা ও বইমেলা’ করা নিয়ে দুই দলের কাজিয়া চরমে উঠেছে। তা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে মানভূম মেলা ও বইমেলার চারদিন আগে তৃণমূল আলাদা করে একই জায়গায় রাঙামাটি মিলন মেলার আয়োজন করেছে। দু’টি মেলারই দিন ক্ষণ মাইকে ঘোষণাও করা হচ্ছে।
তৃণমূলের তরফে ঘোষণা করা হচ্ছে, রাঙামাটি মিলনমেলা ২২ থেকে ২৬ জানুয়ারি হবে। ৫ দিনের এই মেলা বসছে মানবাজার রাধামাধব বিদ্যায়তনের মাঠে। এর চার দিন বাদে ৩১ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সেই একই মাঠে মানবাজার মেলার আয়োজন হয়েছে। মানভূম মেলা এ বার নবম বর্ষে পড়ছে। ২০০৪ সাল থেকে শুরু হওয়া মানভূম মেলা ইতিমধ্যেই এলাকায় সাড়া ফেলে দিয়েছে। ৫ দিনের মেলায় প্রায় লক্ষাধিক লোক আসেন। স্থানীয় রাজনৈতিক সচেতন ব্যক্তিদের মতে, মেলাকে কাজে লাগিয়ে জনসংযোগ বাড়াতে চাইছে দু’দলই। তাই একযোগে তাঁরা মেলা করতে চাইছেন না।
আলাদা করে মেলার আয়োজন করার কারণ কী? ইতিপূর্বে মানভূম মেলা ও বইমেলা কমিটির সভাপতি ছিলেন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক সাম্যপ্যারী মাহাতো। এ বারও মেলা কমিটির সভাপতি হিসেবে তিনিই প্রস্তুতি কমিটির বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠক থেকেই মেলার আয়োজন করা নিয়ে দুই দলের কাজিয়া তৈরি হয়। তৃণমূলের মানবাজার ব্লক সভাপতি দেবেন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, “এলাকার বিধায়কই বরাবর মেলা কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়ে থাকেন। সেই অনুযায়ী, এ বার আমাদের দলের বিধায়ক সন্ধ্যারানি টুডু’র মেলা কমিটির সভাপতি হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।” তিনি জানান, তৃণমূল ও সিপিএম দু’দলের পরিচালনাতেই মেলা অনুষ্ঠিত হোক, এমনটাই তাঁরা চেয়েছিলেন। তাঁর দাবি, “আমরা প্রস্তুতি কমিটির বৈঠকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, বিধায়ককে মেলা কমিটির সভাপতি এবং মানবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে সম্পাদক মনোনীত করে মেলার কাজ শুরু করা হোক। বিধায়ক তৃণমূলের হলেও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সিপিএমের। ভারসাম্য বজায় রেখে আমরা মেলা চালানোর পক্ষে ছিলাম। সিপিএম নেতৃত্ব আমাদের প্রস্তাব মানেননি। তাই আলাদা ভাবেই আমরা মেলা করার উদ্যোগ নিয়েছি।”
আলাদা করে মেলা করার জন্য তৃণমূলকেই দায়ী করেছেন মানভূম মেলা ও বইমেলা কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা তথা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য প্রদীপ চৌধুরি। তাঁর দাবি, “তৃণমূলের সব প্রস্তাব আমরা মানতে বাধ্য নই। ওরা আলাদা ভাবে মেলা করলে করবে।” তিনি বলেন, “মেলার উপদেষ্টা কমিটিতে আমরা বিধায়কের নাম রেখেছিলাম। তিনি রাজি হননি। সাম্যপ্যারীদেবী অভিজ্ঞ বলে তাঁকেই মেলা কমিটির সভাপতির পদে রেখে দেওয়া হয়েছে। আমরা সবাইকে নিয়ে চলতে চাই।” তৃণমূলের ব্লক যুব সভাপতি মানবেন্দ্র চক্রবর্তী পাল্টা বলেন, “বিধায়ক কোন কমিটিতে থাকবেন সেটা কি সিপিএম ঠিক করে দেবে? বিধানসভা এলাকাতে বিধায়কের স্থান সর্বোচ্চ। সিপিএম হেরে গেলেও এখনও অহংকার ছাড়তে পারেনি। জনগণের রায় স্বীকার করে নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে হয়।”
স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের সন্ধ্যারাণী টুডু বলেন, “ওরা তো মানভূম মেলাকে দলীয় মেলার রূপ দিয়েছিল। আমরা চাই দলমত নির্বিশেষে রাঙামাটি মিলনমেলায় সবাই আসুক।” প্রাক্তন বিধায়ক সাম্যপ্যারী মাহাতো বলেন, “মানভূম মেলা ও বইমেলাকে জনপ্রিয় করে তুলতে আমরা বহু পরিশ্রম ও অর্থ ব্যয় করেছি। তৃণমূল মেলা নিয়ে রাজনীতি করছে। নির্ধারিত দিনেই আমাদের মেলা হবে।” তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর অভিযোগ, “সিপিএম মেলা নিয়ে রাজনীতি করছে। তাই এ বার মেলায় আমাদের দলের বিধায়ককে উপেক্ষা করতে চেয়েছিল। এলাকার সাধারণ মানুষের দাবি মেনে আমরা রাঙামাটি মেলার আয়োজন করেছি। এই কমিটিতে সর্বস্তরের মানুষ রয়েছেন।”
তবে দু’দফায় মোট ১০ দিন ধরে মেলার আয়োজন হওয়ায় বিরক্ত স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের বক্তব্য, আমাদের কাছ থেকে চাঁদা তুলে এত দিন মানভূম মেলা হয়েছে। এ বার রাঙামাটি মিলন মেলার চাঁদার বোঝা চাপলে খুবই সমস্যায় পড়ে যাব। তার উপরে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ঠিক আগে এত দিন ধরে মেলা চললে পরীক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেবেন্দ্রনাথবাবু জানান, পরীক্ষার্থীদের অসুবিধার বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা ছুটির দিন দেখে মেলার দিন ধার্য করেছি। ওই ৫ দিনের মধ্যে সরকারি ছুটি রয়েছে তিনটি। সিপিএমের বক্তব্য, “৮ বছর ধরে আমরা মেলা চালিয়েছি। অসুবিধার কথা কেউ আমাদের জানায়নি।” |