‘পানি ব্যবস্থাপনা’য় আরও উদার হোক ভারত, চান শেখ হাসিনা
দিয়েছেন কম নয়, প্রতিদানে চাইছেন নদীর জলের ভাগ। সেই ভাগাভাগির সময়ে ‘বড় দেশ’ ভারত যেন আরও একটু উদার মনোভাব নেয়। ত্রিপুরায় পা দিয়ে আজ সরাসরি এই বার্তা দিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিস্তা চুক্তি নিয়ে টানাপোড়েন, বা এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপত্তি সমস্ত বিষয় নিয়ে আজ এক বারও মুখ খোলেননি মুজিব-কন্যা। কিন্তু সুকৌশলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকারের অগ্রাধিকার একটিই। যত শীঘ্র সম্ভব তিস্তা জল বণ্টন চুক্তিটি সেরে ফেলা।
আজ সন্ধ্যায় দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনা সভায় বক্তৃতা দিতে গিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেন, “দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা বাড়লে তবেই আরও ভাল বাণিজ্য হবে। আবার দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার প্রশ্নে যথেষ্ট সমস্যাও রয়েছে। এই সমস্যাগুলি মোকাবিলায় ভারতকেই এগিয়ে আসতে হবে।” ‘সমস্যাগুলি’ ঠিক কী, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে একটু পরেই হাসিনা বলেন, “পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আরও উদার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে
বাণিজ্য-আলোচনায়
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আসতে হবে নয়াদিল্লিকে। তা হলেই আস্থা বাড়বে দু’দেশের মানুষের মধ্যে। বাড়বে বাণিজ্যও।”
কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী কপিল সিব্বল এবং ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আজ তিস্তা চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁর উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন হাসিনা। জানিয়েছেন তাঁর ঘরোয়া রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কথাও। এই চুক্তির উপর যে তাঁর সরকারের ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করছে, এ কথা এর আগে অনেক বারই ভারতীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন হাসিনা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগও, কেন না ঘরোয়া রাজনীতিতে বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক প্রচার শুরু করেছেন বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়া। এমনকী শরিক নেতা হুসেইন মহম্মদ এরশাদও সরকারের সমালোচনা করে আন্দোলনের ময়দানে নেমেছেন। যে সব বিষয় নিয়ে হাসিনা সরকার দেশে কোণঠাসা, তার অন্যতম হল ভারতের সঙ্গে নিজের শর্তে তিস্তা চুক্তি করতে না-পারা।
এই পরিস্থিতিতে আগরতলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে আসার সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তিস্তা নিয়ে ভারতের উপর চাপ আরও বাড়ানোর কৌশলই নিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে সুনির্দিষ্ট সংকেতও দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে। আজ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের পক্ষ থেকে কপিল সিব্বল তাঁকে বলেছেন, মনমোহন সরকারও চায় দ্রুত তিস্তা চুক্তি হোক। আশা করা হচ্ছে খুব শীঘ্রই এ ব্যাপারে দেশে ঐকমত্য তৈরি করা যাবে। তবে ত্রিপুুরার মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা মানিক সরকারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে, তিনি মুচকি হেসে জানিয়েছেন, “অনেক কিছু নিয়েই কথা হয়েছে। সব তো এখন বলা যাবে না!”
সরকারে আসার পর ভারতের হিতার্থে কী কী করেছেন, সে কথাও বিশদে জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। ভবিষ্যতে কী করার পরিকল্পনা রয়েছে, বর্ণনা করেছেন তা-ও। উপস্থিত ভারতীয় ব্যবসায়ীদের আশার বার্তা দিয়ে বলেছেন, “আমরা আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি, বাংলাদেশে আরও বেশি করে বিনিয়োগ করুন। আমরা ক্ষমতায় আসার পর আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক-সহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। অনেক ক্ষেত্রেই উদারনীতি নেওয়া হয়েছে। সব থেকে বড় কথা, গোটা অঞ্চলে যাতে শান্তিপূর্ণ আবহাওয়া বজায় থাকে, তার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি। কারণ শান্তি না থাকলে বিনিয়োগ আসে না। সরকারে আসার পর তাই সব চেয়ে গুরুত্ব দিয়েছি এই বিষয়গুলিতে।”
হাসিনার হাতে পুষ্পস্তবক তুলে দিচ্ছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী
মানিক সরকার। পাশে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল।
তিস্তা নিয়ে হাসিনার মন রাখতে না পারলেও ভারতের পক্ষ থেকে কিন্তু আজ দিনভর বুঝিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে আরও উদারতা দেখাতে প্রস্তুত নয়াদিল্লি। যদিও এটি একান্তই রাজ্যের অনুষ্ঠান, কিন্তু প্রতিবেশী রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীকে সম্মান জানাতে কসুর করেনি মনমোহন সরকার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে লন্ডন যাত্রা বাতিল করে উড়ে এসেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কপিল সিব্বল। এসেছেন বিদেশ মন্ত্রকের কর্তারাও। হাসিনার এই সফরকে একটি পৃথক মাত্রা দিতে বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাও করা হয়েছে। হাসিনা সন্ধেবেলা মঞ্চে ওঠার ঠিক আগে বিদেশ মন্ত্রকের তরফে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, “বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে ১০০% প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে ভারতে। বাংলাদেশ যদি উত্তর পূর্বাঞ্চল-সহ ভারতের বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলিতে লগ্নি করতে চায়, আমরা স্বাগত জানাব।” হাসিনা বলেন, ত্রিপুরার পালটানা বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠতে সব রকম সাহায্য করেছে বাংলাদেশ। আশুগঞ্জ বন্দরে টার্বাইন নামিয়ে পালটানায় পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম ও মঙলা বন্দর ব্যবহারের সুযোগও দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ পালটানার বিদ্যুৎ চান। এ জন্য দরকারে বিনিয়োগেও প্রস্তুত তাঁর সরকার। রাজভবনে গিয়ে উপরাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারির সঙ্গেও দেখা করেন হাসিনা।

ছবি : উমাশঙ্কর রায়চৌধুরী


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.