রায়গঞ্জ কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিগ্রহের ঘটনায় অভিযুক্তরা লঘু ধারায় মামলা দায়েরের জেরে জামিন পাওয়ায় উত্তরবঙ্গের বিদ্বজ্জনদের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে। গত বিধানসভা ভোটে যে বিদ্বজ্জনেরা পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন, তাঁদেরই অনেকেই ‘দলতন্ত্রের পুনরাবৃত্তির’ আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন। ইতিমধ্যেই বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক সৌমেন নাগ রায়গঞ্জের ঘটনার পরে শিলিগুড়ি কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। তৃণমূল শিক্ষা সেল সূত্রের খবর, বিদ্বজ্জনদের মধ্যে অন্তত আরও ১০ জন নানা পদ থেকে সরে যাওয়ার কথা ভাবছেন। তাঁদের মধ্যে বালুরঘাট, মালদহ, রায়গঞ্জ, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি ও আলিপুরদুয়ারের বিশিষ্টজনেরাও রয়েছেন। তৃণমূল শিক্ষা সেলের উত্তরবঙ্গের একাধিক নেতা গোটা বিষয়টি প্রদেশ দফতরে জানিয়েছেন। দলীয় সূত্রের খবর, শীঘ্রই শিক্ষা সেলের প্রদেশ নেতৃত্ব উত্তরবঙ্গের একাধিক জেলায় সফরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এই ঘটনায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবও কিছুটা বিব্রত। কারণ, মূলত তাঁরই উদ্যোগে সৌমেনবাবু রাজ্য সরকারের মনোনীত প্রতিনিধি হিসেবে শিলিগুড়ি কলেজের পরিচালন সমিতির সদস্য হন। একটি বৈঠকে যোগ দেওয়ার পরে গত বৃহস্পতিবার সৌমেনবাবু পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন কলেজের অধ্য তথা পরিচালন সমিতির সচিবের কাছে। ঘটনা হল, ওই দিনই রায়গঞ্জ কলেজের ঘটনাটি ঘটেছে। কলেজের ইস্তফার বিষয়ে সৌমেনবাবু কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তবে সৌমেনবাবু বলেছেন, “একসময়ে কমিউনিস্ট পার্টি করলেও সামগ্রিক অবক্ষয় দেখে পরিবর্তনের পক্ষে আমিও বহুদিন ধরে সওয়াল করেছি। এখনও প্রতিবাদের অধিকার আমার রয়েছে। তা কেড়ে নেওয়া যাবে না।” সৌমেনবাবুর পদত্যাগপত্র দেওয়ার বিষয়টি শুনেছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। এদিন কলকাতা থেকে টেলিফোনে গৌতমবাবু বলেন, “আমি শুনেছি সৌমেনদা কলেজের পরিচালন সমিতি থেকে ইস্তফা দিতে চেয়ে অধ্যক্ষকে চিঠি পাঠিয়েছেন। নিয়ম মতো চিঠি পাঠাতে হবে শিক্ষা দফতরকে। যাই হোক, সৌমেনদা রাজি হয়েছিলেন বলেই ওঁকে সরকার মনোনীত করেছে। এখন ওঁর কী অসুবিধে হচ্ছে সেটা জানতে হবে। আমি কলকাতায় রয়েছি। টেলিফোনে আলোচনা করে হবে না। আমি গিয়ে ওঁর সঙ্গে কথা বলে সমস্যা বোঝার চেষ্টা করব।” তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সৌমেনবাবু যাতে ইস্তফাপত্র প্রত্যাহার করেন, সে জন্য তৃণমূল শিক্ষা সেলের তরফেও একাধিক নেতা অনুরোধ তাঁকে অনুরোধ করেছেন। প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাঙ্কের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী সৌমেনবাবু একসময়ে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন। কিন্তু, বামেদের ত্রুটি-বিচ্যূতির সমালোচনায় বহুদিন ধরেই সরব তিনি। গত বিধানসভা ভোটের আগে প্রকাশ্যেই পরিবর্তনের পক্ষে সওয়াল করেছেন তিনি। সেই সৌমেনবাবু অবস্থান পরিবর্তন করায় তৃণমূল মহলেই প্রশ্ন উঠেছে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক-শিক্ষাকর্মীদের একাংশ স্থানীয় নেতাদের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষকদের অভিযোগ, যে ভাবে দুর্নীতিগ্রস্তদের আড়াল করতে দলের একাংশ সক্রিয় হয়ে উঠছে তাতে শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে। তৃণমূলের শিক্ষা সেলের কোচবিহার ও আলিপুরদুয়ারের একাধিক নেতা জানান, তাঁরাও রায়গঞ্জের ঘটনার পরে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছিলেন। সে কথা জানানোও হয়। সেখান থেকে আশ্বাস দেওয়ার পরেও কেন লঘু ধারায় মামলা দায়ের করে দলের ভাবমূর্তি বিপন্ন করা হল সেই প্রশ্নে বিদ্বজ্জনেরা অনেকেই বিরক্ত। |