একটানা ১০ দিন সূর্যের মুখ প্রায় দেখেইনি কলকাতা। আজ, বুধবার ১১ দিনের মাথায় মেঘ কেটে কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকায় রোদ উঠবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দফতর।
এবং যার আসার আশায় রয়েছে বাংলা, অকালবৃষ্টির ফাঁড়া কাটিয়ে সেই শীতও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। হাওয়া অফিস জানিয়েছে, মেঘ সরিয়ে রোদ উঠলে কাল, বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতা-সহ প্রায় গোটা দক্ষিণবঙ্গেই ফের অনুভূত হবে শীত। পৌষের বৃষ্টিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কমে যাওয়ার ফলে পড়ে পাওয়া ‘নকল’ শীত নয়। হিমের আসল শীত। কারণ মেঘ সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা ‘সুপবন’-এর সুখবর আছে। সেই ‘সুপবন’ আসলে উত্তরের হিমেল হাওয়া। উচ্চচাপ বলয়ের দাপাদাপিতে সে এই অঞ্চল থেকে মুখ ফিরিয়ে ছিল। মেঘের দেওয়াল ভেঙে পড়লেই সে ধেয়ে আসবে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্ব ভারতে। তার ইঙ্গিত মিলেছে মঙ্গলবারেই।
তবে কলকাতা এবং দক্ষিণবঙ্গের অন্যান্য অঞ্চলে মেঘমুক্তির সম্ভাবনা উজ্জ্বল হলেও ব্যতিক্রম সাগরদ্বীপ এবং দিঘার মতো উপকূলবর্তী এলাকা। সেখানে আজ, বুধবারেও আকাশ মেঘলা থাকবে। ওই সব অঞ্চলে হাল্কা বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছেন আবহবিদেরা। তবে বৃহস্পতিবার থেকে সেখানেও আকাশ পরিষ্কার হতে শুরু করবে বলে আবহবিদদের আশা।
নতুন বছরের শুরু থেকে কলকাতার আবহাওয়া রীতিমতো বিরক্তিকর হয়ে উঠেছিল। আকাশে মেঘ। রোদ আর উঠছেই না। মাঝেমধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির পরে বইছে দখিনা বাতাস। দিনের তাপমাত্রা কম থাকায় সূর্যাস্তের আগে পর্যন্ত একটা ঠান্ডা-ঠান্ডা ভাব থাকছে। কিন্তু রাত হলেই বাড়ছে অস্বস্তি। কারণ পৌষে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গিয়ে হিমের পরশমাখা শীত যে উধাও! তবে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই আবহাওয়ার একটা পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে। আকাশে মেঘ থাকলেও মাঝেমধ্যেই উত্তর দিক থেকে হাওয়া বইছে। মাঝেমধ্যে ঝিরঝিরে বৃষ্টি সত্ত্বেও চলতি জানুয়ারিতে এ দিনই প্রথম কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছে ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে। যদিও এই সময়ের স্বাভাবিকের থেকে এখনও তা তিন ডিগ্রি বেশি। পরের পর উচ্চচাপ বলয়ের প্রতাপেই তাপমাত্রার এই অস্বাভাবিক আচরণ। এবং সেই কারণেই শীত এসেও মুখ প্রায় ফিরিয়ে নিয়েছিল।
এই অবস্থায় আলিপুর আবহাওয়া দফতর এ দিন খানিকটা অভয় দিয়েছে। ওই দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “বঙ্গোপসাগরের উচ্চচাপ বলয় দুর্বল হয়ে গিয়েছে। বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত আরও দুর্বল হয়ে সরে গিয়েছে ওড়িশা উপকূলের দিকে। তাই দক্ষিণবঙ্গের আবহাওয়া ভাল হওয়ার পথে আপাতত আর কোনও বাধা নেই। বুধবার দুপুরের পর থেকেই তা বোঝা যাবে।” আর আবহাওয়া ভাল হওয়া মানেই মহানগরীর শীত-ভাগ্য অন্তত কিছুটা প্রসন্ন হওয়া।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, মেঘ সরে গেলেই যে শীত ফের দক্ষিণবঙ্গে ঢুকে পড়বে, তার লক্ষণ স্পষ্ট। যে-কনকনে উত্তুরে হাওয়া জম্মু, কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হিমাচলপ্রদেশে তুষারপাত ঘটাচ্ছে, যার দাপটে দিল্লি-পঞ্জাবে হঠাৎই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩-৪ ডিগ্রি নেমে গিয়েছে, তা উত্তরপ্রদেশ পেরিয়ে এসেছে। এবং বুধবারেই সেই উত্তুরে হিম-হাওয়া ঢুকে পড়বে পূর্ব ভারতে। সে হাজির হলেই পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমতে শুরু করবে। প্রশস্ত হবে শীতের ফেরার পথ। উত্তরবঙ্গে আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। সেখানে, বিশেষ করে হিমালয়ের পাদদেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আরও কমবে বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আবহবিদেরা। |
