‘উন্নয়নের পাশাপাশি এ বার উৎসব’এই স্লোগানকে সামনে রেখে মঙ্গলবার ঝাড়গ্রামে শুরু হল ‘জঙ্গলমহল উৎসব’। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় রাজ্য যুবকল্যাণ দফতরের আয়োজনে প্রায় কোটি টাকা বাজেটের এই উৎসব চলবে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। শেষ দিন উৎসব-মঞ্চে উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্বামী বিবেকানন্দের সার্ধশত জন্মজয়ন্তীর দিনটিতে সমাজকর্মী, ক্রীড়াবিদ, অনগ্রসর ও সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রী, প্রতিবন্ধীদের মধ্যে থেকে কয়েক জনকে ‘বিবেক পুরস্কার’ও দেবেন মুখ্যমন্ত্রী। লাখ টাকার আতসবাজি প্রদর্শনীও থাকছে সে দিন সন্ধ্যায়।
জঙ্গলমহল উৎসব ঘিরে অবশ্য ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে বিতর্ক। স্থানীয় শিল্পী ও শিল্প-সংস্কৃতি সংগঠনগুলি উপেক্ষিত বলে অভিযোগ উঠেছে। আদিবাসী-মূলবাসী শিল্পীদের দূরে রেখে উৎসব আয়োজনের মধ্যে দিয়ে স্থানীয় শিল্পীদের অপমান করা হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ। সাঁওতালি সামাজিক যুব সংগঠন‘জুয়ান গাঁওতা’র সম্পাদক প্রবীর মুর্মুর অভিযোগ, “আদিবাসী সংস্কৃতি সম্পর্কে অনভিজ্ঞরা কলকাতা থেকে সব কিছু চাপিয়ে দিচ্ছেন। উৎসবের সঙ্গে মাটির যোগ থাকছে না। আদিবাসী সংস্কৃতিকে অপমান করা হচ্ছে।”
এ প্রসঙ্গে একটিই আদিবাসী নৃত্যকে দু’টি ভিন্ন নাচ হিসাবে দেখানোর অভিযোগও করেছেন প্রবীরবাবুরা। বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ ছড়িয়েছে আদিবাসী সমাজে। আবার স্থানীয় শিল্পীদের উপেক্ষার অভিযোগ করেছেন ঝুমুরশিল্পী ইন্দ্রাণী মাহাতো, সাঁওতালি সিনেমার জনপ্রিয় অভিনেত্রী বীরবাহা হাঁসদারা। ইন্দ্রাণীদেবীর কথায়, “স্থানীয় প্রবীণ ও অগ্রজ ঝুমুর-শিল্পীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। নতুন প্রজন্মের শিল্পীরাও আমন্ত্রণ পাননি।” তাই নিজে আমন্ত্রণ পেয়েও ‘অন্য কর্মসূচি’র যুক্তিতে উৎসব-মঞ্চে অনুষ্ঠান করতে না পারার কথা জানিয়েছেন তিনি। বীরবাহার প্রশ্ন, “আদিবাসী-মূলবাসী শিল্পীদের বড় অংশকে দূরে রেখে এ ধরনের উৎসব আয়োজনের উদ্দেশ্য নিয়েই সংশয় তৈরি হচ্ছে। কী বার্তা দিতে চাইছে রাজ্য সরকার!” চিত্রকর ও শিল্পী সুখময় শতপথীর মনে হয়েছে, “স্থানীয় মানুষজনকে বাদ দিয়ে যে উৎসব হচ্ছে তাতে প্রাণের স্পন্দন নেই!” আর সে কারণেই মঙ্গলবার দুপুরের উদ্বোধন অনুষ্ঠান বা সন্ধ্যার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সময়ে ঝাড়গ্রাম স্টেডিয়ামের মাঠ ফাঁকা পড়ে থেকেছে বলে মত স্থানীয় সাংস্কৃতিক-কর্মীদের।
তবে প্রশাসনিক কর্তাদের দাবি, উৎকর্ষের নিরিখে জঙ্গলমহলের ঝুমুর, পাইক নাচ, আদিবাসী-নাচ, কাঠিনাচ, রণপা নাচ, লোধা লোক-যাত্রাপালা, শীতলা গানের অনুষ্ঠান থাকছে। পাশাপাশি, প্রশাসনেরই একটি সূত্রের স্বীকারোক্তি, অনুষ্ঠানের জন্য বিভিন্ন সরকারি দফতর থেকে বাইরের শিল্পী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির নাম নিয়ে এত ‘তদ্বির’ হয়েছে যে, অনেক স্থানীয় শিল্পীর নাম শেষে মুহূর্তে ছেঁটে ফেলতে হয়েছে। এমনকী উৎসব-মঞ্চ, মণ্ডপ নির্মাণের কাজও করেছে কলকাতার ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থা। যে কারণে ক্ষুব্ধ স্থানীয় মণ্ডপশিল্পীরা কিছু দিন আগে মহকুমাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও জানিয়েছিলেন। পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন মন্ত্রী সুকুমার হাঁসদা বা মঙ্গলবার উৎসব উদ্বোধনে আসা যুবকল্যাণ মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসের অবশ্য বক্তব্য, স্থানীয় শিল্পীদের কেউই তাঁদের কাছে ক্ষোভের কথা জানাননি।
|
ফাঁকা মাঠে শুরু কোটি টাকার উৎসব |
ঝাড়গ্রামে দেবরাজ ঘোষের ছবি |
জঙ্গলমহল উৎসবে দুই মন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র |
খরচের খতিয়ান |
• ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা: ৭ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা।
• অন্যান্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বাবদ: ৫ লক্ষ টাকা।
• স্মারক পত্রিকা, প্রচার: ১৫ লক্ষ টাকা।
• তিন দিনের খাওয়া-দাওয়া বাবদ: ২৪ লক্ষ টাকা।
• স্টল-মঞ্চ, সিকিউরিটি ব্যারিকেড বাবদ: ৬ লক্ষ ২০ হাজার।
• আলো ও শব্দ-প্রক্ষেপণ: ১০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
• ২০টি তোরণ তৈরিতে খরচ: ৫ লক্ষ টাকা।
• অতিথিদের জল সরবরাহ, স্যানিটেশন: ২ লক্ষ ৫০ হাজার।
• ভিভিআইপি-দের আপ্যায়ন: ৫ লক্ষ টাকা।
• ভিভিআইপি-দের অতিথিশালার ভাড়া: ৬ লক্ষ ৭৫ হাজার।
• আনুষঙ্গিক প্রশাসনিক খরচ: ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
• সমাপ্তি-সন্ধ্যায় আতসবাজির প্রদর্শনী: ১ লক্ষ টাকা। |
|