চলতি আর্থিক বর্ষের বাকি আর ৮১ দিন। আর এই আর্থিক বছরের শেষ দিনের মধ্যেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ১৬ লক্ষ ৭০ হাজার পড়ুয়াকে ঋণ ও বৃত্তির টাকা তুলে দেওয়ার কাজ সেরে ফেলবে রাজ্য সরকার। মঙ্গলবার নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের একটি অনুষ্ঠানে সরকারের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই।
এই সিদ্ধান্ত ঘোষণার মধ্যেই পূর্বতন বাম সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি মমতা। তিনি বলেন, “আমরা ১৬ লক্ষ পড়ুয়াকে সাহায্যের কথা বললেও আগের বাম সরকার দু’লক্ষকেও কিছু দিতে পারেনি। সব চেক বাউন্স করেছিল!”
মুখ্যমন্ত্রীর এই অভিযোগ অবশ্য খারিজ করে দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের সূর্যকান্ত মিশ্র। তাঁর পাল্টা দাবি, “ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম একাধিক বার রাজ্যগুলির মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছে। ওই এক নম্বর জায়গাটা ধরে রাখতে পারবেন কি না, ওঁরা দেখুন!” |
নেতাজি ইন্ডোরে সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র। |
মুখ্যমন্ত্রী নিজেই সংখ্যালঘু উন্নয়ন দফতরের দায়িত্বে আছেন। সে-কথা মনে করিয়ে দিয়েই সূর্যবাবু এ দিন রাজ্যে সংখ্যালঘু মহিলাদের ক্ষমতায়নের একটি বিশেষ প্রকল্প (এমডব্লিউইপি) বন্ধ হয়ে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।
বাম জমানায় প্রকল্পটি চালু হয়েছিল। যার ৩০ শতাংশ ভর্তুকি দিত সরকার এবং সুদ হত তিন শতাংশ। সূর্যবাবুর প্রশ্ন, “রাজ্যে এক জন মহিলা মুখ্যমন্ত্রী তথা সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী থাকা সত্ত্বেও ওই প্রকল্পের কাজ বন্ধ হয়ে আছে কেন?” বাম জমানায় সংখ্যালঘু এবং মাদ্রাসার জন্য দু’টি ‘ডিরেক্টরেট’ গড়ে উঠেছিল এবং জেলায় জেলায় সংখ্যালঘু দফতর খোলা হয়েছিল বলেও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী সূর্যবাবু।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী এ দিন তিন লক্ষ ১১ হাজার জনের হাতে ৬৩ কোটি ৬৪ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন। এর আগে, গত ৩০ জুলাই নিগমের অনুষ্ঠানে ২১ কোটি ৩৭ লক্ষ টাকার সহায়তা পেয়েছিলেন ৫৪ হাজার ১৪১ জন। নিগমের সভাপতি আবু আয়েশ মণ্ডল জানিয়েছেন, পরবর্তী পর্যায়ে জেলায় জেলায় গিয়ে নিগমের তরফে সব মিলিয়ে ৪১৫ কোটি ৪৯ লক্ষ টাকার সাহায্য পৌঁছে দেওয়া হবে।
ধর্মীয় ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের উন্নয়নে নিজেদের ‘দায়বদ্ধতা’র কথাও বলেন মমতা। তিনি বলেন, “রাজারহাটে ‘হজ টাওয়ার’ গড়ে উঠছে। আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি দিচ্ছে রাজ্য সরকার।” সব জেলায় সংখ্যালঘু দফতরের জন্য রাজ্য ১৪ কোটি টাকা দেবে বলেও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সাত কোটি টাকা ইতিমধ্যে মঞ্জুর হয়ে গিয়েছে। মমতার দাবি, সংখ্যালঘুদের জন্য কর্মসংস্থান ব্যাঙ্ক গড়া হচ্ছে। তিনি জানান, রাজ্যে সংখ্যালঘুদের তালিম দেবে ছ’টা আইটিআই এবং দু’টি পলিটেকনিক কলেজ।
এ দিনের অনুষ্ঠানে অন্তত ৩০ জনের হাতে জমির পাট্টা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সংখ্যালঘুদের পাট্টা বিলির কাজ বাম সরকার ঠিক ভাবে করেনি।” সূর্যবাবুর পাল্টা বক্তব্য, “বাম জমানায় যত জনকে পাট্টা দেওয়া হয়েছে, তার ১৮ শতাংশ সংখ্যালঘু। আর এখন পাট্টাদারদের কাছ থেকে পাট্টা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। যাঁদের পাট্টা কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রায় অর্ধেকই সংখ্যালঘু!” |