এখনও কানে বাজে ‘পিন্টু-উ বা পিট্টু-উ’ ডাক। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দেওয়ার সময়ে মনে পড়ে ছোটবেলায় পিট্টু খেলার সেই স্মৃতি। ময়ূরেশ্বরের বীরনগরীর রতন দাস, সাঁইথিয়ার ভ্রমরকোলের সুবল মণ্ডলরা জানান, তখন গলিতে গলিতে কচিকাঁচাদের গলায় শোনা যেত ‘পিন্টু-উ, বা পিট্টু-উ’। এখন সেই ডাকটাই শোনা যায় না। কেন না খেলাটি হারিয়ে যেতে বসেছে। ছেলেমেয়েরা একত্রে কিংবা আলাদা আলাদা ভাবে খেলতে পারে পিট্টু। দু’টি দলে ৮-১০ জন করে থাকে। খেলার জন্য প্রয়োজন একটি দলে যতজন থাকে তত সংখ্যক খোলামখুচি কিংবা টালি দিয়ে তৈরি গোলাকার বড় বড় গুটি। আর প্রয়োজন ছোট রাবারের বল। কোন দল আগে দান চালবে তা স্থির হয় টসের মাধ্যমে। এর পরে মাঠের মাঝখানে সাজানো হয় গুটিগুলিকে। টসে জয়ী দলের এক জন বল হাতে নিয়ে গুটি থেকে ১০-১৫ ফুট দূরে দাঁড়িয়ে থাকে। সঙ্গীরা এবং বিপক্ষরাও গুটির কাছাকাছি ছড়িয়ে থাকে। ‘রেডি’ বলার সঙ্গে সঙ্গে খেলোয়াড়কে বল ছুঁড়ে যত কম সংখ্যক সম্ভব গুটি ফেলতে হয়। এর পরে পড়ে যাওয়া গুটিকে মাঠের মাঝখানে আগের মতো সাজাতে হবে সঙ্গী খেলোয়াড়দের। অবশ্যই বিপক্ষের আক্রমণকে বাঁচিয়ে। সাজিয়ে দিতে পারলেই সমন্বয়ে চেঁচিয়ে ওঠে পিট্টু বা পিন্টু বলে। অর্থাৎ বিপক্ষকে চিক দেওয়া হয়। |
তবে বিপক্ষের আক্রমণ বেশ মজাদার। কারণ, পড়ে যাওয়া গুটি সাজানোর সময়ে বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা যদি প্রতিপক্ষকে বল ছুঁড়ে মারতে পারে তা হলে মরা হয়ে যায়। অন্যথায় বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে বল লুকিয়ে রাখে। কার কাছে বল আছে তা নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়ে প্রতিপক্ষ। আসলে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড়রা যাতে গুটি সাজাতে না পারে সে জন্য বিপক্ষ দলের খেলোয়াড়রা গোল হয়ে দাঁড়িয়ে বল লুকিয়ে রাখে। যার কাছে বল আছে তা আন্দাজ করতে পারলে তাকে এড়িয়ে গুটি সাজানোর প্রচেষ্টা চলে। বল নেই এমন খেলোয়াড় পোশাকের আড়ালে বল নিয়ে ছুটে আসার ভান করে। কিন্তু গুটি সাজিয়ে ফেলার পরে ধরা পড়ে যায় তার মিথ্যা জারিজুরি। আবার এর উল্টোটাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ওই খেলোয়াড়ের ছোঁড়া বলবল লাগলে গোটা দলটাই মরা হয়ে যায়। তখন একই ভূমিকা নেয় বিপক্ষ দল। যে দল বিপক্ষকে বেশি পিন্টু দিতে পারবে সেই দল জয়ী হয়। রতনবাবু ও সুবলবাবুরা বলেন, “ছোট বেলায় পিট্টু খেলার জন্য সঙ্গীরা ডাকলে সবাই হাজির হতাম। গুটি সাজিয়ে হাততালি দিয়ে পিট্টু বলে চেঁচিয়ে উঠতাম। কিন্তু আমাদের ছেলেমেয়েরা অনেকেই এই খেলার কথা জানে না।”
|
(হারিয়ে যাওয়া খেলা পর্ব-৬) |