সহকর্মীদের মারধরে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে এবং পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখালেন বসিরহাট আদালতের আইনজীবী ও মুহুরিরা। মঙ্গলবার সকালে বসিরহাটে মহকুমাশাসকের বাংলোর সামনে ইছামতী সেতুর কাছে ইটিন্ডা রাস্তার মধ্যে চেয়ার-বেঞ্চ পেতে অবরোধ করলে সমস্যায় পড়েন যাত্রীরা। দু’ঘণ্টা ধরে বিক্ষোভ চলার পরে দুপুর ১২টা নাগাদ বসিরহাটের এসডিপিও এবং ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের এক অফিসার ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তারপরে অবরোধ ওঠে।
এ দিন সকালে ব্যস্ত সময়ে আচমকা অবরোধে আটকে পড়েন অফিসযাত্রী থেকে ছাত্রছাত্রীরা। আগাম কোনও খবর না দিয়ে যখন তখন এ ধরনের অবরোধে যে তাঁদের নিত্য নাকাল হতে হচ্ছে সে কথা জানিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তাঁরা। তাঁদের বক্তব্য, যে কোনও সমস্যায় রাস্তা অবরোধ করা এখন অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের। অবরোধে যে সাধারণ মানুষের কত অসুবিধা হয়, সমস্যায় পড়তে হয় মুমূর্ষু রোগীকে সে কথা তাঁরা ভাবেন কি? অবরোধকারীদের প্রতি তাঁদের বক্তব্য, যা পুলিশের কাজ তা তাঁরা না করলে অবরোধকারীরা থানা ঘেরাও করুক। কিন্তু তা না করে রাস্তা অবরোধ করে সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে সমস্যার সমাধানের পথ খুঁজছে। |
অন্যদিকে রাস্তা অবরোধ নিয়ে আইনজীবী ও মুহুরিদের বক্তব্য, বার বার পুলিশকে বলা সত্ত্বেও তাঁরা কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় বাধ্য হয়েই এই পন্থা নিতে হয়েছে। সাধারণ মানুষকে সমস্যায় ফেলা তাঁদের উদ্দেশ্য নয়।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হাসনাবাদের কালুতলা গ্রামের বাসিন্দা দুলালচন্দ্র দাস ও বিশ্বনাথ দাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিবাদ রয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মামলা হয়। বসিরহাট দেওয়ানি আদালতের বিচারকের নির্দেশে কমিশনার হিসেবে গত ১৮ ডিসেম্বর আইনজীবী দেবাশিস দাস ও মহুরি তাপস মণ্ডল ওই গ্রামে যান। অভিযোগ, সে সময়ে বিশ্বনাথ দাসের নেতৃত্বে এক দল লোক তাঁদের উপরে চড়াও হয়। ঘরে আটকে রেখে প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ঘটনার পরে বিশ্বনাথ দাস-সহ ১১ জনের নামে থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু পুলিশ অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করায় এসডিপিও-র কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। বিক্ষোভও দেখানো হয়। বিচারকের কাছেও স্মারকলিপি জমা পড়ে। কর্মবিরতিও পালন করা হয়েছিল।
মুহুরি অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মিহির বাগচি বলেন, “আদালতের নির্দেশ পালন করতে গিয়ে আমাদের সহকর্মীদের মারধর খেতে হল। তারপরে বেশ কয়েকটি দিন কেটে গেলেও মূল অভিযুক্ত গ্রেফতার হল না। অথচ অভিযুক্ত প্রকাশ্যে ঘুরে বেরিয়ে হুমকি দিচ্ছে। গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।” দেওয়ানি আদালতের বার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অমিত মজুমদার বলেন, “প্রশাসনের সর্বত্র জানানো হয়েছে। জেলা ও দায়রা জজ এবং সিজেএম এসেছেন। তা সত্ত্বেও পুলিশ প্রধান অভিযুক্তকে ধরতে পারল না।” পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বনাথ দাস বিদ্যুৎ দফতরের কর্মী। ওই জমি নিয়ে গোলমালের জেরে তাঁকে আগেও দু’বার গ্রেফতার করা হয়েছে। দু’বারেই জেল হেফাজত হয় তার। এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “অভিযুক্ত বিশ্বনাথ দাসকে গ্রেফতারের জন্য পুলিশ সবরকমের চেষ্টা চালিয়ে যাবে। এলাকা ছেড়ে পালানোয় তাঁকে ধরতে একটু দেরি হচ্ছে।” |