রাজ্যে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে যা কাজিয়া চলছে, তা নিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্যে আলাপ-আলোচনা না-করার ‘পরামর্শ’ দিলেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তাঁর মতে, সিপিএমের ‘উপযাচক’ হয়ে বলতে যাওয়ার কিছু নেই। যাঁরা কংগ্রেস-তৃণমূল জোটকে ভোট দিয়েছেন, সেই মানুষই নিজেদের অভিজ্ঞতায় পরিস্থিতি ‘যাচাই’ করে নেবেন।
সোনারপুরের মহামায়াতলায় সিপিএমের দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্মেলনের শেষ দিনে জবাবি বক্তৃতায় মঙ্গলবার বিমানবাবু বলেছেন, তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে লাগাতার কাজিয়া চলছে। কিন্তু ওই প্রসঙ্গে দলীয় কর্মীদের প্রকাশ্য সভা ও বৈঠকে আলোচনা করার দরকার নেই। দলীয় কর্মীদের প্রতি বিমানবাবুর ‘বার্তা’ মনে রাখতে হবে, যাঁরা জোটকে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা তাদের ‘স্থায়ী আমানত’ নন! তাঁরাই কংগ্রেস-তৃণমূলের ভূমিকা বিবেচনা’ করতে পারবেন। ‘প্রকৃত পরিস্থিতি’ বুঝতে পারবেন মানুষই।
কংগ্রেস-তৃণমূলের বিবাদ বাড়লে তাতে সিপিএমের লাভ বই ক্ষতি নেই। কিন্তু এই নিয়ে বাজার গরম করতে শুরু করলে মানুষ ভাববেন বিরোধীরা ‘অধৈযর্’ হয়ে পড়েছেন। সেই জন্যই বিমানবাবু দলের কর্মীদের ‘সতর্ক’ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন বলে সিপিএম সূত্রের ব্যাখ্যা।
তিন দিনের সম্মেলনের শেষে ৭০ জনের জেলা কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী। ‘সর্বসম্মতিক্রমে’ তিনিই আবার জেলা সম্পাদক হয়েছেন।
জেলা সিপিএম সূত্রের খবর, সম্মেলনে আপাতত জেলা কমিটির ৫৯ জন সদস্য মনোনীত হয়েছেন। পরে আরও ১১ জন কমিটিতে আসবেন। বিগত জেলা কমিটি ছিল ৮২ জনের। এখনও ৬টি জোনাল কমিটির সম্পাদক ঠিক হয়নি। সে ক্ষেত্রে ওই ৬ জন জোনাল সম্পাদক জেলা কমিটিতে যাবেন। বাকি পাঁচ জনকেও পরে মনোনীত করা হবে। যাঁরা বাদ গিয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই বয়সজনিত কারণে বলে জেলা সিপিএম সূত্রের বক্তব্য। তবে বর্তমান জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর প্রবীণ সদস্য শিবদাস ভট্টাচার্যকে জেলা কমিটিতে রাখা হয়েছে। ‘আমন্ত্রিত’ সদস্য করে রাখা হয়েছে ৭ জনকে। জবাবি ভাষণে জেলা সম্পাদক সুজনবাবু বলেন, তৃণমূল-কংগ্রেস জোটের দখলে-থাকা জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েতে নানা ‘দুর্নীতি’ চলছে। সেই দিকে ‘নজরদারি’ চালাতে হবে। প্রয়োজনে ওই সব দুর্নীতিকে পুঁজি করে স্থানীয় স্তরে আন্দোলনের পথে যেতে হবে। ফ্রন্ট-চালিত পঞ্চায়েতগুলি কী ভাবে দুর্নীতিমুক্ত রাখা যায়, সেই দিকেও লক্ষ রাখতে হবে। সম্মেলনে প্রতিনিধিদের একটি বড় অংশই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য পরিচালিত সরকারের শিল্পনীতি এবং ‘প্রশাসনিক ব্যর্থতা’র সমালোচনা করেছেন। রেহাই পাননি প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাও। দলের নানা সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে রেজ্জাক যে ভাবে বারংবার মুখ খুলেছেন, কমিউনিস্ট দলে তা ‘বাঞ্ছনীয়’ নয় বলেই সমালোচকদের অভিমত। |