|
|
|
|
ভয় হচ্ছে, বিদেশে পুরনো আমলের
ব্যাটিংয়ে আমরা ফিরে গেলাম কি না |
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় |
পার্থে নামার আগে ধোনি আর ডানকান ফ্লেচারের চিন্তায় থাকার কথা প্রথম দুই টেস্টে হারের ধরন নিয়ে। বিদেশে টানা ছ’টা টেস্ট একপেশে ভাবে হারল ভারত। ছ’টার মধ্যে চারটে টেস্ট চার দিনে শেষ হয়ে গিয়েছে।
গত দশ বছরে ভারতীয় ক্রিকেটের গৌরবজনক ব্যাপার, বিদেশে আমাদের পারফরম্যান্স। কিন্তু এই টিমটাকে গত এক বছর ধরে দেখে ভয় হচ্ছে, আমরা আবার পিছিয়ে পড়তে শুরু করলাম না তো? ভারত বরাবরই নিজেদের দেশে খুব শক্তিশালী টিম। প্রায় অপরাজেয়। ২০০০ থেকে আমাদের সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল বিদেশের পারফরম্যান্স উন্নত করা। তেন্ডুলকর, দ্রাবিড়, কুম্বলে, লক্ষ্মণ, সহবাগ, জাহির, হরভজনদের উপস্থিতিতে দীর্ঘ সময় ধরে ভারত সেটা করেছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এতগুলো বড় নাম একসঙ্গে কেরিয়ারের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়ায় আবার কি বিদেশে আমাদের পারফরম্যান্স পড়তির দিকে?
বিদেশে ধোনিদের শেষ ৬ টেস্টের সব ক’টাই কাছ থেকে দেখেছি। বিপর্যয়ের সবথেকে বড় কারণ ব্যাটিং ও বোলিংয়ের একই সঙ্গে টানা ব্যর্থ হওয়া। ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলোর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা। টেস্ট ম্যাচ জেতা-হারা হয় এই সব মুহূর্তগুলোতে। যেমন ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে নটিংহ্যামে দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম দিনে ইংল্যান্ড ১২০-৮ থেকে ২২৫ করল। ভারত আর ম্যাচে ফিরতে পারেনি। মেলবোর্নেও অনেকটা একই রকম ঘটল। অস্ট্রেলিয়া একটা সময় ২১৭-৭ ছিল। কিন্তু টেলএন্ডাররা ৩৩৪ তুলে দিল। অন্য দিকে ভারত ২১৪-৩ থেকে ২৮০ রানে অলআউট। এই মুহূর্তগুলো হাত থেকে বেরিয়ে গেলে ম্যাচ জেতা খুব কঠিন।
আর একটা বড় কারণ ব্যাটিং ব্যর্থতা। গত দশ বছর ভারতীয় ব্যাটিং নিজেদের জন্য খুব উঁচু একটা আসন তৈরি করেছে। কিন্তু শেষ ক’টা টেস্ট ধরে খুব কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এমনকী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টেও প্রথম ইনিংসে ১০০ রানে পিছিয়ে পড়েছিল। ওয়েস্ট ইন্ডিজ খুব খারাপ খেলায় সেই পরিস্থিতি থেকে টিম জামিনমুক্ত হয়। না হলে ওই টেস্টটাও কঠিন হয়ে যেত। অতীতে ভারতীয় ব্যাটিং লাইন-আপ প্রায় প্রত্যেক ইনিংসেই ৪৫০ রান তুলেছে। একটা ইনিংসেও যদি ৪৫০ পেরতে না পারে, বিশেষ করে প্রথম ইনিংসে, তা হলে টিম বিপদে পড়বেই।
নতুন বল খেলাটাও বিরাট সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। হালফিলে ওপেনারদের কেউ সেঞ্চুরি করতে পারেনি। ভাল জুটি গড়তে পারেনি। যাতে মিডল-অর্ডার একটু শ্বাস নিতে পারে। আবার যখন দ্বিতীয় নতুন বল নেওয়ার সময় হচ্ছে, ততক্ষণে প্রতিপক্ষ মিডল-অর্ডারকে সাবাড় করে দিচ্ছে। নীচের দিককার ব্যাটসম্যানরাও লড়াই করতে পারছে না। এই জায়গায় ভারত খুব নরম মনোভাব দেখাচ্ছে। বিদেশে টেস্ট জিততে গেলে এই কঠিন মুহূর্তগুলোতে রগড়ে রগড়ে জিততে হবে। কিন্তু আমরা যেন ছেড়ে-ছেড়ে দিচ্ছি। সিডনিতে ৪০০ তুলেও দ্বিতীয় নতুন বলের সামনে তাড়াতাড়ি ভেঙে পড়লাম।
বিদেশে প্রতিপক্ষরাও অনেক তীক্ষ্ন হয়ে উঠেছে। ওরা যেমন ভারতে এলে ধরেই রাখে টার্নিং ট্র্যাক পাবে, তেমন ওদের দেশে ভারত গেলে পিচে ঘাস রাখাটা মোটামুটি রুটিন হয়ে গিয়েছে। ওরা জানে এই ব্যাটিং লাইন-আপের বয়স হচ্ছে। নতুন প্লেয়াররা সবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখার চেষ্টা করছে। বিদেশের কঠিন পরিবেশে ওদের কাজ সহজ হবে না। এটা খুবই ধুরন্ধর স্ট্র্যাটেজি এবং ভারতকে দ্রুত সমাধান পেতে হবে কী করে এই স্ট্র্যাটেজিকে টেক্কা দেওয়া যায়। |
|
|
|
|
|