|
|
|
|
তিরিশ ভাগ খেলেই চার গোল |
সুব্রত ভট্টাচার্য • কলকাতা |
বায়ার্ন মিউনিখ-৪ (গোমেজ, মুলার-২, সোয়াইনস্টাইগার)
ভারত-০ |
মাঝে মাঝেই দেখি, বাইরে থেকে বিদেশি দল আসছে আমাদের সঙ্গে খেলতে। নামী-দামি টিম। রাশভারি নাম। উল্টো দিকে থাকে হয় ভারত। নইলে কোনও ক্লাব। কোনও টিম চার-পাঁচ গোল দিয়ে যায়। আমরা ভাবি যাক, খুব বেশি সম্মান খোয়াতে হল না। আট-নয় গোল খেলে আমাদের ফুটবলমহলে ঝড় ওঠে। হাসাহাসি চলে। সমালোচনা হয় পরের কয়েকটা দিন। কিন্তু ভারতীয় ফুটবল যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থাকে।
মঙ্গলবারের বায়ার্ন মিউনিখ ম্যাচটাও আলাদা কিছু হল না। দিল্লির জওহরলাল নেহরু স্টেডিয়ামে রবেন-রিবেরিদের সঙ্গে ভাইচুং-নবিদের লড়াইটাকে যদি স্রেফ গোল সংখ্যা দিয়ে বিচার করেন, তা হলে ভারতের ০-৪ হারকে খুব লজ্জার মনে হবে না নিশ্চয়ই। বিশেষ করে উল্টো দিকে যখন সোয়াইনস্টাইগার, মুলার, গোমেজ, ফিলিপ লামের মতো বিশ্বসেরা ফুটবলাররা। তবে টিভিতে ম্যাচটা দেখে যা বুঝলাম, বায়ার্ন খুব বেশি হলে নিজেদের শক্তির তিরিশ ভাগ খরচ করেছে! তাতেই চার গোল! আসলে এই সব হাইপ্রোফাইল ইউরোপিয়ান টিমগুলো যখন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া সফরে আসে, তখন ওদের ঠিক করা থাকে কাদের বিরুদ্ধে কতটা শক্তি খরচ করবে। আর ক’দিন বাদেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে নামবে বায়ার্ন। তখন দেখবেন ওরা আসলে কোন গতিতে ফুটবলটা খেলে। এ দিন তার সিকিভাগও দেখলাম না। |
|
ভাইচুংকে বিদায়ী অভিনন্দন রিবেরি, সোয়াইনস্টাইগারের।-এএফপি |
এই ম্যাচটা আবার ভাইচুংয়ের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ ছিল। অনেকে বলছেন, ভারত যদি পাল্টা একটা গোলও করতে পারত তা হলেও ভাইচুংয়ের জন্য কিছুটা সম্মান থাকত ওর বিদায়ী ম্যাচে। কিন্তু করবে কারা? কী ভাবে? গোলমুখী একটাও পাস দেখলাম না। ড্রিবল বলে কোনও ব্যাপার নেই। ন’জন মিলে ডিফেন্স করছে। বল উড়িয়ে দিচ্ছে। এক কথায়, খুব খারাপ স্ট্র্যাটেজি ভারতীয় দলের।
জানি, বায়ার্নের বিরুদ্ধে এই ভারতের গোল করা সম্ভব নয়। তবু একটা চেষ্টা তো থাকবে। আমরাও তো কসমসের বিরুদ্ধে খেলেছি। পেলে ছিলেন উল্টো দিকে। ২-২ ড্র করেছিলাম ম্যাচটা। তবে এটা ঠিক যে, প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো কোচ ছিলেন মোহনবাগানে। স্যাভিও মেদেইরা তো আর পিকে নয়। ম্যাচে নামার আগে প্রদীপদা আমাদের বলেছিলেন, পেলে সমেত ওদের আটটা বিশ্বকাপার। একজন বল ধরলে আমরা যেন তিন জন সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে তাড়া করি। করেওছিলাম। আর বায়ার্ন ম্যাচে কে যে কাকে মার্ক করবে সেটা বুঝে উঠতেই নব্বই মিনিট শেষ ভারতীয় টিমের। আরও মুশকিল, ওরা বড় বেশি ভাইচুংয়ের উপর নির্ভর করেছিল। বোঝা উচিত ছিল, ভাইচুং গত তিন-চার বছর সে ভাবে ফুটবলের মধ্যে নেই। ম্যাচের শেষ দিকে ভাইচুং যখন মাঠ ছাড়ছে, তখন দেখলাম ওকে একে-একে জড়িয়ে ধরছে সোয়াইনস্টাইগার, রিবেরিরা। গোটা স্টেডিয়ামের দর্শক উঠে দাঁড়িয়ে বিদায়ী অভিনন্দন জানাল। কিছুটা রং লাগল ঠিকই, কিন্তু ভাইচুং শেষ ম্যাচটা থেকে মনে রাখার মতো কিছু পাবে না।
বরং আমরা কোচরা যারা খেলাটা দেখলাম, তাদের ম্যাচটা থেকে শেখার থাকল অনেক কিছু। সোয়াইনস্টাগারদের জায়গা নেওয়াটা দেখার মতো। এক জন বল ধরলেই দু’জন পরের পাসটার জন্য ঠিক জায়গায় পৌঁছে যাচ্ছে। ফুটবলারদের ‘পেরিফেরাল ভিশন’ দুর্দান্ত। ফাইনাল পাস দেওয়ার সময় মাথা না তুলেই ওরা দেখে নিচ্ছিল কে কোথায় দাঁড়িয়ে। নিখুঁত পাসিং, সেট পিস। প্রথম গোলটাই ধরুন। পেনাল্টি বক্সে মুলারের পাস থেকে স্রেফ টোকা মেরে গোল করে গেল গোমেজ। কিংবা দ্বিতীয় গোলের সময় রবেনের ইনসুইং মেশানো হাল্কা চিপ। এগুলোই মনে থাকবে অনেক দিন। সত্যি বলতে, ভারতের ফুটবল নিয়ে ভেবে লাভ নেই। সাফ কাপে নেপাল-মলদ্বীপকে হারিয়ে নাচানাচি হবে। আবার কাতারের মুখে পড়লেই ৯ গোল খাবে। স্যাভিও-কোলাসো-হাউটন কেন, স্বয়ং গুয়ার্দিওলা এলেও এ দেশের ফুটবল এগোবে না। |
|
|
|
|
|