|
|
|
|
লজ্জার লাল-হলুদ |
চার গোল খেয়ে ৫৮ বছর আগের দুঃস্বপ্ন ফিরে এল ইস্টবেঙ্গলে |
কুণাল বসু • কলকাতা |
ইস্টবেঙ্গল-১ (টোলগে)
টেকনো এরিয়ান-৪ (চার্লস-হ্যাটট্রিক, গোপাল) |
আত্মসমর্পণ!
বীরের নয়। লজ্জার!
চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহনবাগান নয়, ময়দানের তথাকথিত ‘ছোট দল’ এরিয়ানের কাছেও চার গোল খেল ইস্টবেঙ্গল!
যে মাঠে ভাগাভাগি দু’দলের, সেই মাঠের দখল ম্যাচে পুরোপুরি নিল টেকনো এরিয়ান। সুব্রত ভট্টাচার্যের মতোই কি ব্রিটিশ কোচ ট্রেভর মর্গ্যানের গাঁট হয়ে উঠছেন রঘু নন্দী? গত বারের কলকাতা লিগে এরিয়ান এই ম্যাচ জিতেছিল ৩-১।
সল্টলেকের বাড়িতে বসে খেলা দেখছিলেন ৫৮ বছর আগের এরিয়ান ক্লাবের এক নায়ক। ১৯৫৪-র লিগে ইস্টবেঙ্গলকে ৪-০ হারানোর ম্যাচে শেষ গোল ছিল তাঁর। তিনি পি কে বন্দ্যোপাধ্যায় স্মৃতির রাস্তায় পিছিয়ে গিয়ে বললেন, “মোহনবাগান থেকে বাতিল হয়ে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ ছিল সেই ম্যাচে। প্রথম বড় দলের বিরুদ্ধে ম্যাচ। আজ সেরকমই গোল হতে দেখতে দেখতে মনের ভেতর আলোড়ন হচ্ছিল।”
চার গোল খাওয়ার কারণ খুঁজে পেতে নাকাল এমনকী লাল-হলুদ কোচ মর্গ্যানও। ‘ডার্বি’ হারের হ্যাংওভার থেকে যাওয়া? নাকি এ দিন মর্গ্যানের স্ট্র্যাটেজিগুলোর একে একে জলাঞ্জলি যাওয়া? মর্গ্যান স্বীকৃতি দিচ্ছেন না দু’টোকেই। বরং সামনে এনেছেন নিজস্ব যুক্তি ফুটবলারদের ভুলের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। |
|
সমর্থকদের ক্ষোভের মুখে মর্গ্যান। |
একেবারে ঠিক। কিন্তু তার সঙ্গে যে ‘জিততেই হবে’ মানসিকতাটা টোলগেরা মাঠেই নিয়ে নামেননি এ দিন! মোহনবাগানের কাছে পাত্তা না পেয়ে ০-২ হারের টেনশন যাতে টিমের ঘাড়ে গেড়ে বসতে না পারে, তার জন্য মর্গ্যান নিজের মতো করে ‘পেপ টক’ দিয়েছিলেন এই ম্যাচের আগে। বলেছিলেন, প্রথম ডার্বি হারের পরেই কিন্তু ইস্টবেঙ্গল ৮ গোল দিয়েছিল হ্যালকে। মঙ্গলবার বিরতির কিছু পরেই নামেন মেহতাব ও পেন। তার পর ৬০ থেকে ৬৮ মিনিটের মধ্যে তিন গোল খায় ইস্টবেঙ্গল। ওপারাকে মর্গ্যান নামান ৭০ মিনিটে। ৮৫ মিনিটে এরিয়ানের চার নম্বর গোল করে নিজের হ্যাটট্রিক সারেন চার্লস। যার অর্থ, সব তারকাকে নিয়েই লজ্জার হার লাল-হলুদের। যে স্কোরলাইন সমর্থকদের স্মৃতিতে অবশ্যই দগদগে দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকবে অনেক অনেক দিন।
আবার মর্গ্যানের দলের অভাবিত হারে অবশ্যই আশার আলোয় মোহনবাগান। সুব্রত বলছিলেন, “কলকাতা লিগ পেতে আমাদের বাকি তিনটে ম্যাচই জিততে হবে। তার পর ইস্টবেঙ্গলের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।” সে ক্ষেত্রে ইস্টবেঙ্গল বাকি দু’ম্যাচের একটি ড্র করলেই লিগ মোহনবাগান তাঁবুতে।
কত অল্প দিনে বদলে যায় সব কিছু! গত আই লিগের সেরা ফুটবলার মেহতাব হোসেন। ওই বছরই সর্বোচ্চ গোলদাতা টোলগে। বলা হয়, এই মুহূর্তে দেশের সেরা বিদেশি স্টপার উগা ওপারা। বলা হয়, সেরা বিদেশি মিডিও পেন ওরজি। অসংখ্য লাল-হলুদ সমর্থকদের ‘রত্ন’রা যখন মঙ্গলবার বিকেলে মাঠ ছাড়ছেন, উপর থেকে তাঁদের মাথায় পড়ল ধিক্কারের থুতু, কুলকুচি করে ছোড়া জল! |
গোল নম্বর চার। |
বিধ্বস্ত টোলগেরা। |
মঙ্গলবার ইস্টবেঙ্গল মাঠের তিন মুহূর্ত |
সমর্থকের কান্না। |
|
মর্গ্যানও মানছেন, গত চার দিনই ভারতে তাঁর কাটানো সবচেয়ে খারাপ দিন। তীব্র হতাশ মর্গ্যানের কথায়, “জানি না ফুটবলারদের কী বলব! আজ বাড়ি গিয়ে ঘুমোব। কাল আবার আসব। ছেলেদের পাশে আমাকে থাকতে হবে।” সালগাওকরের কাছে আই লিগে ০-৪ ‘একটা খারাপ দিন’-এর যুক্তিতে ভুলে থাকতে পারেন মর্গ্যান। তা বলে এরিয়ান!
তীব্র হতাশ লাল-হলুদ শীর্ষ কর্তা ড্রেসিংরুমে কথা বলেন ফুটবলারদের সঙ্গে। মর্গ্যানের সঙ্গেও বসবেন শীঘ্রই। কলকাতা লিগ আরও নিশ্চিত করতে কর্মকর্তারাই এ দিন মর্গ্যানকে বলেছিলেন শুরুতেই প্রথম দল নামাতে! কোচ সেই রাস্তায় যাননি।
মর্গ্যানের ৪-৩-৩ ছক এ দিন প্রথম থেকেই দানা বাঁধেনি। লাল-হলুদ জার্সিতে টোলগের ৫০ নম্বর গোলটাও এল ফাঁকতালে। এগিয়ে থেকেও বিরতির পর গোটা ইস্টবেঙ্গল দল দাঁড়িয়ে পড়ল। খেলা থেকে হারিয়ে গেল। টোলগে আর সঞ্জু-র দু’টো শট এরিয়ান গোলকিপার শিবরাম দে-র বাঁচানো ছাড়া ইস্টবেঙ্গলের আর কোনও মুভ কারও মনেই পড়বে না। বরং দুই লাল-হলুদ স্টপার সুনীল কুমার এবং সুনীল ঠাকুর যে সব ভুল করলেন, সেই সোনার সুযোগ হাতছাড়া হতে দিলেন না এফেমেনা চার্লস। নাইজিরিয়ান স্ট্রাইকার নিজে তিনটে গোল তো করলেনই, সঙ্গে গোপাল দেবনাথকে দিয়ে একটা গোল করালেন। মর্গ্যানের ডিফেন্সের ভুল থাকলেও চার্লসের গোল চেনার দারুণ দক্ষতা আছে। যার জোরে তিনিই আপাতত কলকাতা লিগে সর্বোচ্চ গোলদাতা (৬)। যার জোরে অর্ধ শতাব্দীর পুরনো দুঃস্বপ্ন ইস্টবেঙ্গলে!
এরিয়ান: শিবরাম, জোহেব, শুভঙ্কর, এরিক, মোহন, রাজীব (সুমন), গোপাল, সৈকত, সুরজিৎ (মুন্না), চার্লস, উগো (পঙ্কজ)।
ইস্টবেঙ্গল: দেবজিৎ, সৈকত, সুনীল কুমার (ওপারা), সুনীল ঠাকুর, রবার্ট, সঞ্জু, সুশান্ত, পাইতে (মেহতাব), টোলগে, বলজিৎ (পেন), লেন। |
কালো দিন |
ডালহৌসি-৭ : ইস্টবেঙ্গল-১ (১৯২৮)
কুমারটুলি-৫ : ইস্টবেঙ্গল-১ (১৯২২)
ইবিআর-৪ : ইস্টবেঙ্গল-০
(১৯২৮)
এরিয়ান-৪ : ইস্টবেঙ্গল-০ (১৯৫৪)
এরিয়ান-৪ : ইস্টবেঙ্গল-১ (২০১২) |
(কলকাতা লিগে ছোট দলের কাছে
ইস্টবেঙ্গলের বড় হারের খতিয়ান)
পরিসংখ্যান: হরিপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায় |
|
ছবি: উৎপল সরকার |
|
|
|
|
|