সুকুর আলিই ফের সম্পাদক গড়বেতা জোনাল সিপিএমে
লাকায় ‘শেষ কথা’ ছিলেন যিনি, সেই প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ এখন জেলে। রাজ্যে পালাবদলের পরে আরও অনেক ‘দাপুটে’ সিপিএম নেতা-কর্মীই এলাকা ছাড়া। ছোট আঙারিয়া মামলা নতুন করে শুরু হয়েছে। একাধিক কঙ্কাল-মামলাতেও নাম জড়িয়েছে দলের আরও কয়েক জন নেতা-কর্মীর। পরিস্থিতি যা তাতে গড়বেতায় জোনাল সম্মেলন করার পরিস্থিতি ছিল না বলেই মনে করেছেন সিপিএম নেতৃত্ব। তাই কেশপুরের মতোই সিপিএমের গড়বেতা জোনাল কমিটির সম্মেলনও হল মেদিনীপুর শহরেই। এবং চূড়ান্ত গোপনীয়তার মধ্যে। দলের জেলা কার্যালয়ের অদূরে কৃষকভবনে মঙ্গলবারের এই সম্মেলন সম্পর্কে জানতেন না এমনকী দলের অনেক কর্মীও!
সম্মেলনে অবশ্য সেই ‘বিতর্কিত’ সুকুর আলিই জোনাল সম্পাদক পদে পুনর্নির্বাচিত হলেন। জোনাল কমিটিতে থেকে গেলেন আর এক ‘বিতর্কিত’ তপন ঘোষও। তাঁরা দু’জনেই অবশ্য সম্মেলনে হাজির ছিলেন না। জোনাল কমিটি মোটের উপরে অপরিবর্তিতই রইল। আগের কমিটিতে ১৯ জন ছিলেন। রাজ্যে পালাবদলের পরের দিনই অর্থাৎ, গত ১৪ মে খুন হয়েছিলেন জোনাল সদস্য জিতেন নন্দী। এ বার কমিটির সদস্য-সংখ্যা হয়েছে ১৭।
তখনও স্বমহিমায়। গত বিধানসভা ভোটের দিন সুশান্ত ঘোষের সঙ্গে তপন-সুকুর। গড়বেতায়। ফাইল চিত্র।
দলীয় সূত্রে খবর, মঙ্গলবারের সম্মেলনে সব মিলিয়ে ১০৬ জন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের অধিকাংশই এখন এলাকা ছাড়া। হয় মেদিনীপুর শহর বা শহরতলিতে ভাড়াবাড়িতে রয়েছেন, না হলে কোনও আত্মীয়বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। গড়বেতার মতো স্পর্শকাতর এলাকার জোনাল সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক দীপক সরকার। তবে তাঁর উপস্থিতিতেই একাংশ প্রতিনিধি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁদের বক্তব্য, পার্টির কিছু ‘কাজ’ সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি করেছিল। এক প্রতিনিধি বলেন, “প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ জেলা নেতৃত্বকেই দেখাতে হবে।” জেলা সম্পাদক অবশ্য বলেন, “আগেও এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ অবশ্যই আসবে।” তিনিও সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার উপরে জোর দিয়েছেন।
গড়বেতা জোনাল-এলাকায় সিপিএমের মোট ৭টি লোকাল কমিটি রয়েছে। আমলাগোড়া, খড়কুশমা, ফতেসিংহপুর, ধাদিকা, চমকাইতলা, ফুলবেড়িয়া ও গড়বেতা। আগেই এই ৭টি লোকাল কমিটির সম্মেলন হয়ে গিয়েছিল। প্রতিটিই ‘গোপনে’ এবং মেদিনীপুর শহরেই। ‘খাতায়-কলমে’, নামমাত্র প্রতিনিধির উপস্থিতিতেই হয়েছিল লোকাল-স্তরের সম্মেলন। এর মধ্যে একমাত্র গড়বেতা লোকাল কমিটির সম্পাদক পদেই পরিবর্তন এসেছে। আগে এই লোকাল কমিটির সম্পাদক ছিলেন দেবু সিংহ। তাঁর জায়গায় এ বার এসেছেন অজয় শর্মা। বাকি ৬টি লোকাল কমিটির সম্পাদক পদে থেকে গিয়েছেন পুরনোরাই। আমলাগোড়ায় সম্পাদক রয়েছেন অরুণ গোস্বামী, খড়খুশমায় কাজেম আলি, ফতেসিংহপুরে প্রদ্যোৎ দে, ধাদিকায় কিরীটী হাজরা, চমকাইতলায় বিশ্বনাথ মণ্ডল এবং ফুলবেড়িয়ায় দিবাকর ভুঁইয়া।
সুশান্ত ঘোষের অঙ্গুলিহেলনে গড়বেতায় পার্টির কাজকর্ম দেখভাল করতেন তপন-সুকুরই। রাজ্যে পালাবদলের পর ছোট আঙারিয়া মামলা নতুন করে ‘প্রাণ’ পায়। গ্রেফতার হন দশ বছর ধরে ‘ফেরার’ অভিযুক্ত দিল মহম্মদ। তার আগেই অবশ্য আতঙ্কে এলাকা ছাড়েন তপন-সুকুর। পরে একটি কঙ্কাল-মামলায় নাম জড়িয়েছে তাঁদের। নন্দীগ্রামের নভেম্বরের নিখোঁজ-কাণ্ডেও তাঁদের খোঁজ করছে সিআইডি। সিপিএম জেলা নেতৃত্বের একাংশের মতে, তপন-সুকুরদের আগেভাগে এলাকা ছাড়া উচিত হয়নি। তাঁরা থাকলে ভোট মেটার সঙ্গে সঙ্গেই এলাকার ‘নিয়ন্ত্রণ’ হাত ছাড়া হত না। তার পরেও অবশ্য এই দুই নেতাকে স্বপদে রাখারই সিদ্ধান্ত হল ‘গোপন’ জোনাল সম্মেলনে। ছোট আঙারিয়া মামলায় এক দফা খালাস পাওয়ার পরে এই দুই নেতার সংবর্ধনা-সভায় দীপকবাবু স্বয়ং তাঁদের ‘সম্পদ’ বলেছিলেন। দেখা গেল, এখনও তাঁদের প্রতি জেলা সম্পাদকের একই রকম ‘আশীর্বাদ’।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.