নিজস্ব সংবাদদাতা • উলুবেড়িয়া |
নিজের ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী এবং তাঁদের শিশুপুত্রকে পুড়িয়ে মারার দায়ে এক ব্যক্তির যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক। মঙ্গলবার উলুবেড়িয়া এসিজেএম আদালতের ফাস্ট ট্রাক কোর্ট (১)-এর জেলা দায়রা বিচারক মুকুলকুমার কুণ্ডু এই রায় দেন। সাজাপ্রাপ্তের নাম অজয় মণ্ডল। বাড়ি হাওড়ার শ্যামপুরের মির্জাপুর গ্রামে। এ ছাড়াও ওই ব্যক্তির ২০০০ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বিচারক।
পুলিশ জানায়, পুড়িয়ে মারার ঘটনাটি ঘটে ২০০৯ সালের ৫ জুলাই। অজয়রা দুই ভাই। অন্য জনের নাম অরূপ মণ্ডল। স্ত্রী সাধনা এবং চার বছরের শিশুপুত্র সুবীরকে নিয়ে অরূপ একটি ঘরে আলাদা বসবাস করতেন। দাদা অজয় অন্য একটি ঘরে থাকত। তার সঙ্গে স্ত্রীর বনিবনা না-হওয়ায় তিনি বাপের বাড়িতে থাকতেন। অজয় একাই থাকত। অজয়, অরূপের বাবা-মা আলাদা বসবাস করতেন। |
বাবা-মাকে অজয় দেখভাল করত না। ভাই অরূপই তাঁদের দেখাশোনা করতেন। সেই কারণে বাবা জগদ্বন্ধু এক বিঘা সম্পত্তি অরূপের নামে লিখে দিয়েছিলেন। তারই জেরে ভাইকে খুনের ষড়যন্ত্র করে অজয়। রাতে নিজেদের বাড়িতে যখন অরূপ স্ত্রী এবং শিশুপুত্র-সহ ঘুমিয়েছিলেন, সে সময়ে তাঁর বাড়ির চারিদিকে পেট্রোল ছড়িয়ে তাতে আগুন ধরিয়ে দেয় অজয়।
ঘটনাস্থলে পুড়ে মারা যায় সুবীর। অরূপ এবং তাঁর স্ত্রীকে অগ্নিদগ্ধ অবস্থায় উলুবেড়িয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে কিছু ক্ষণের মধ্যে দু’জনেই সেখানে মারা যান। চিকিৎসকের কাছে দেওয়া মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে অরূপের স্ত্রী জানিয়ে দেন, অজয়ই তাঁদের পুড়িয়ে মেরেছে। শুধু তাই নয়, ভাইয়ের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার আগে অজয় বাবা জগদ্বন্ধু যে ঘরে থাকতেন তার দরজাতেও শিকল লাগিয়ে দেয়। ফলে বাঁচার জন্য অরূপেরা যখন চিৎকার করছিলেন তখন জগদ্বন্ধু তাঁদের আর্ত চিৎকার শুনতে পেলেও বাইরে আসতে পারেননি। ৭ জুলাই শ্যামপুর থানায় ছেলে অজয়ের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন তিনি।
মামলার সরকারি আইনজীবী হারুচন্দ্র দুয়ারী বলেন, “ছেলের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেও পরবর্তীকালে জগদ্বন্ধু সাক্ষ্য দিতে এসে বিরূপ হয়ে যান। কিন্তু অরূপের স্ত্রী-র মৃত্যুকালীন জবানবন্দি এবং অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিচারক অজয় মণ্ডলকে দোষী সাব্যস্ত করে সাজা দেন।” |