নিজস্ব সংবাদদাতা • রিষড়া |
সোমবারই রিষড়া পুরসভার চার কাউন্সিলর দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। পুরপ্রধান-সহ কংগ্রেসের বাকি পাঁচ কাউন্সিলরও শীঘ্রই একই পদক্ষেপ করতে পারেন বলে দাবি করলেন তৃণমূল নেতারা। তাঁদের আরও দাবি, মঙ্গলবারই ওই কাউন্সিলরদের নিয়ে তাঁরা আলোচনায় বসেছিলেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “কংগ্রেস ছেড়ে বাকি কাউন্সিলরেরাও আমাদের দলে আসছেন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা শুধু বাকি।” পুরপ্রধান কংগ্রেসের শঙ্কর সাউ বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেননি। তাঁর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, “আমার কাছে কোনও খবর নেই।” কংগ্রেসের জেলা সভাপতি দিলীপ নাথ অবশ্য বলেন, “নতুন করে কেউ আমাদের দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দিচ্ছেন, এ কথা সত্য নয়।”
গত পুরভোটে কংগ্রেস-তৃণমূল এখানে জোট করে লড়েছিল। ২৩টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ৯টি ও তৃণমূল ৮টি আসনে জেতে। বামফ্রন্টের হাতে আছে ৬টি আসন। কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পুরবোর্ড গঠন করে। পুরপ্রধান শঙ্করবাবু। সোমবার চার কাউন্সিলর কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এই মূহূর্তে কংগ্রেসের দখলে রইল ৫টি আসন। তৃণমূলের আসন সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১২। সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিরিখে তৃণমূূলই বোর্ড গঠন করতে চলেছে। পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে সোমবারই মহকুমাশাসকের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তাঁরা।
যে সমস্ত ‘কারণে’ কাউন্সিলরদের দলবদল, তার অন্যতম ছিল পুরপ্রধান পদ। ওই পদের একাধিক দাবিদার থাকায় কংগ্রেসের তরফে ভোট করে পুরপ্রধান ঠিক করা হয়। তাতেই প্রবল অসন্তুষ্ট হন সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া এক কাউন্সিলর। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের সব কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দিলে পুরপ্রধান স্থির করা নিয়ে একই সমস্যার মুখে পড়তে পারে তৃণমূলও। এই মূহূর্তে উপপ্রধানের পদ সামলাচ্ছেন তৃণমূলের আফরিন আলি অপূর্বা পোদ্দার। তিনি রিষড়ার এক তৃণমূল নেতার স্ত্রী। তিনিও পুরপ্রধান পদের দাবিদার। তৃণমূলের এক সাংসদ বলেন, “পুরপ্রধান কে হবেন, তা ঠিক করা হয়নি।” তপনববাবুর বক্তব্য, “দলীয় নেতৃত্ব হুইপ জারি করে পুরপ্রধান ঠিক করবেন। দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায়ের সঙ্গে আলোচনা করে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
সদ্য দলে যোগ দেওয়া পোড়খাওয়া এক কংগ্রেস কাউন্সিলরকে নিয়ে ক্ষুব্ধ তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী। তাদের অভিযোগ, অতীতে বেশ কয়েক বার রীতিমতো ‘রফা করে’ সিপিএমকে সুবিধা পাইয়ে দিয়েছিলেন ওই কাউন্সিলর। অভিযোগ, তাঁর মদতে পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে রমরমিয়ে জুয়া-সাট্টার ঠেক চলে। দুষ্কৃতীরা দাপিয়ে বেড়ায়। সোমবার তৃণমূল কাউন্সিলরেরা পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন শ্রীরামপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে। তবে সেই অনাস্থাপত্রে তৃণমূলের দুই কাউন্সিলর সই করেননি। তাঁদের মধ্যে ভাইস-চেয়ারম্যান রয়েছেন। অন্য জন অশোক দেউটিয়া।
রিষড়ায় কাউন্সিলরদের নিয়ে চাপানউতোর নতুন কিছু নয়। রিষড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবৈধ নির্মাণের রমরমা ব্যবসা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। একটা সময় হুগলির ত্রাস হুব্বা শ্যামলের দলবল রিষড়ায় দাপিয়ে বেড়াতো। বন্ধ কারখানার জমি ভরাট করা থেকে খুনজখম কোনও কিছুই বাদ থাকেনি। এই সমস্ত কাজে দুষ্কৃতীদের সরাসরি মদত দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বেশ কিছু সিপিএম কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে। রিষড়ায় এখন সিপিএমের শক্তি কমেছে। দুষ্কৃতীদের ‘মদত’ দেওয়ার বিষয়টিও তাদের হাত থেকে মুষ্টিমেয় কিছু কংগ্রেস ও তৃণমূল কাউন্সিলরদের হাতে চলে এসেছে বলে অভিযোগ। কয়েক মাস আগে শ্যামল খুন হয়েছে। অন্য এক কুখ্যাত সমাজবিরোধী রমেশ মাহাতো জেলে। পুলিশ সূত্রেরই খবর, জেলের ভিতরে থেকেই সে রিষড়ায় অবৈধ কারবার নিয়ন্ত্রণ করছে। অভিযোগ, এ কাজে তার সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেন কংগ্রেসেরই দুই ‘প্রভাবশালী’ কাউন্সিলর। তাঁদের এক জন পুরসভায় অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকায় ‘ঘুরপথে উপার্জন’ও করছিলেন বেশি। এ জন্যই অন্য জন দল ছাড়েন। এ সব নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে চাপানউতোর চলছিল। কিন্তু সকলে এক রাজনৈতিক ছাতার তলায় চলে এলে কী পরিস্থিতি হয়, এখন সেটাই দেখার। |