সম্পাদকীয় ২...
কৃপণ মহানগরী
ন্তত ত্রিশ লক্ষ মানুষ ভারতের পনেরোটি শহরে এই শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে খোলা আকাশের নীচে রাত্রিযাপন করিতেছেন। তাঁহাদের একাংশ যে তীব্র ঠাণ্ডায় মারাও যাইতেছেন, তাহাতে সন্দেহ নাই। সংখ্যাটি ত্রিশ লক্ষ না হইয়া তিন কোটিও হইতে পারে। কেননা শহরের আনাচেকানাচে, উড়ালপুলের নীচে, ফুটপাথের উপর যে-সকল ছায়া-শরীর প্রতিটি নির্জন শীত-রাতে কেবল পরস্পরের উত্তাপ লইয়া জড়াজড়ি করিয়া নিশিযাপন করে, তাহাদের কোনও নিশ্ছিদ্র সুমারি হয় না। অনুমান ও অনেকটা আন্দাজের উপর নির্ভর করিয়াই এই শরীরের অধিকারীদের সংখ্যা ধার্য করা হয়। তথাপি সেই অসম্পূর্ণ সমীক্ষাতেও প্রকাশ পাইতেছে, রাজ্যে-রাজ্যে নিরাশ্রয় মানুষদের প্রতি সরকারের, প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের অমানবিক ঔদাসীন্যের ছবিটি। দেখা যাইতেছে, শীতের কামড় হইতে এই ভাগ্যহত মনুষ্যশরীরগুলিকে রক্ষা করার জন্য যে নৈশ আশ্রয়ের ব্যবস্থা থাকা উচিত, অধিকাংশ রাজ্যই তাহা নির্মাণে চরম অবহেলা করিয়া থাকে। আদালতের তাগাদা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে গড়িমসি করার ঐতিহ্যটি বহাল রহিয়াছে। ইহা লজ্জাজনক।
চমকপ্রদ তথ্যটি হইল, এ ব্যাপারেও, অর্থাৎ আশ্রয়হীনদের শীতকালীন নৈশ আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করার ক্ষেত্রেও, পশ্চিমবঙ্গের স্থান সবার নীচে। আশ্রয় তৈয়ারির লক্ষ্যমাত্রার কুড়ি শতাংশ অর্থাৎ এক-পঞ্চমাংশও এই রাজ্য রূপায়ণ করিতে পারে নাই। না-পারার কারণ কোনও স্থানাভাব বা তহবিলের সীমাবদ্ধতা নয়, নিছকই সদিচ্ছার সম্পূর্ণ অভাব এবং ইচ্ছাকৃত ঔদাসীন্য। কী লাগে কয়েকটি শীতকালীন নৈশ আশ্রয় তৈয়ার করিতে? মাথার উপর টিন কিংবা টালির আচ্ছাদন, চারটি দেওয়াল আর দুই-একটি কপাট দেওয়া জানালা। হাজার-হাজার কোটি টাকার তহবিল লইয়া কলিকাতা পুরসভা এমন কয়েকটি অকিঞ্চিৎকর মূল্যের নৈশ আশ্রয় বানাইতে পারে না? যে-অর্থে কলিকাতাকে লন্ডন করিতে চাওয়া পুর-কর্তৃপক্ষ শহরের সব পার্ক-উদ্যানকে নীল-শাদা রঙে রঞ্জিত করিতে তৎপর, তাহার চেয়ে অনেক কম ব্যয়ে হতভাগ্য নিরাশ্রয়দের শীতের রাতে মাথা-গোঁজার ঠাঁই করিয়া দেওয়া যায়। তাহাতে নগরের সৌন্দর্যায়নের কাজে কোনও ব্যাঘাত হওয়ারও কথা নয়। কিন্তু বারংবার এ ব্যাপারে অনুরোধ করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষকে সক্রিয় করা যায় নাই। তাই খোলা আকাশকে চাঁদোয়া বানাইয়া শহুরে গরিব, ভবঘুরে, ভিখারি ও নিরাশ্রয় মানুষরা পৌষের অকালবর্ষণ মাথায় করিয়া রাত্রিযাপন করিতেছেন। নাগরিক আশ্রয়হীনরা অসংগঠিত, ইউনিয়নবদ্ধ নন, তাই তাঁহাদের আশ্রয়ের অধিকার লইয়া কোনও দাবি মুখর হইতে পারে না। রাষ্ট্র যেন তাঁহাদের প্রতি দয়াপরবশ হইয়া নৈশ আশ্রয়স্থল বানাইয়া দিতে চায়। এই দয়া করার দৃষ্টিভঙ্গিই সরকার ও পুর-কর্তৃপক্ষকে উদাসীন করিয়া তোলে। আশ্রয়হীনের আবাসন বা নিদেনপক্ষে শীতকালীন অস্থায়ী নৈশ আশ্রয়স্থলের কথাটি কখনও মনে উদয় হয় না। সমীক্ষার পর দুই-দুইটি শীত চলিয়া গিয়াছে। কর্তৃপক্ষকে আদালতের অফিসাররা দুই-দুই বার তাঁহাদের কৃত্যের কথা স্মরণ করাইয়াছেন। ফল হয় নাই। আরও একটি পৌষ সংক্রান্তিমুখী।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.