সম্পাদকীয় ১...
কথা বনাম কাজ
থায় কত দূর? একটি বাংলা প্রবাদকে ঈষৎ বদলাইলে মহাভারত অশুদ্ধ হইবে না। পরিবর্তনের পরে প্রশ্নটি সংক্ষিপ্ত। অর্থাৎ, কথাই কি যথেষ্ট? উত্তরটি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানেন। পরিস্থিতি বলিতেছে, কথা যথেষ্ট নহে। মুখ্যমন্ত্রী ইহা যত দ্রুত উপলব্ধি করেন, ততই মঙ্গল। পশ্চিমবঙ্গের মঙ্গল। কারণ, প্রশাসন দাবি করে কাজ। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার, অন্তত এখনও পর্যন্ত, তেমন কোনও কাজ করিতে পারে নাই। ছয় মাসের অধিক কাল কাটিয়া গিয়াছে। কথা হইয়াছে বিস্তর। এখনও হইতেছে। সাম্প্রতিকতম দৃষ্টান্ত, রাজ্য সরকারের উদ্যোগে শিল্পোদ্যোগীদের সম্মেলন ‘বেঙ্গল লিডস’। সেখানে দাঁড়াইয়া শিল্পোদ্যোগী যোগী দেবেশ্বর জরুরি কথাটি সংক্ষেপে বলিয়াছেন। পশ্চিমবঙ্গকে কাজ করিতে হইবে। অনুক্ত কথাটিও তাৎপর্যপূর্ণ। অন্যথায়, বৃহৎ বিনিয়োগের সম্ভাবনা ক্ষীণ। ‘বেঙ্গল লিডস’ সম্মেলনে যাঁহারা আসিয়াছেন, তাঁহারা প্রায় সকলেই স্থানীয় শিল্পোদ্যোগী। এমন কিছু শিল্পোদ্যোগী আসিয়াছেন, যথা প্রসূন মুখোপাধ্যায়, ডি এল এফ গোষ্ঠী, মল্লিকা শ্রীনিবাসন বা জিন্দল গোষ্ঠী, যাঁহাদের পশ্চিমবঙ্গে আগমন পূর্বতন বাম জমানায়। মমতা বন্দ্যোপাধায়ের সরকার এ পর্যন্ত নূতন কোনও বৃহৎ উদ্যোগীকে টানিতে পারে নাই। বার্তাটি স্পষ্ট। শিল্পোদ্যোগী মহলের নিকট তেমন কোনও ইতিবাচক বার্তা যায় নাই। ফলে, তাঁহারা উৎসাহিত বোধ করেন নাই। অন্তত, এখনও করেন নাই। ইতিবাচক বার্তা যাইলে কী হইতে পারে, তাহার একটি দৃষ্টান্ত ভারতেই বিদ্যমান। ‘ভাইব্র্যান্ট গুজরাত’।
সমস্যা কোথায়, খুঁজিবার জন্য দূরবীক্ষণ লাগিবে না। কাণ্ডজ্ঞান প্রয়োজন। সংকটের কেন্দ্রে আছে জমি। সিঙ্গুর হইতে ন্যানো-র প্রস্থান আক্ষরিক অর্থেই ইতিহাস। তাহা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা পট পরিবর্তনের দিশারি হইতে পারে, একই সঙ্গে এই রাজ্যে শিল্পায়নের আখ্যানে একটি ক্ষতচিহ্নও বটে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের শরীরে সেই আত্মঘাতী ক্ষতটি লাগিয়া আছে। প্রয়োজন ছিল, অতিরিক্ত কয়েক কদম আগাইয়া শিল্পদ্যোগীদের আস্থা অর্জন। তাহা হয় নাই। খাড়া হইয়াছে এক বিচিত্র প্রক্রিয়া। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি মানিয়া বলা চলে, ‘জিন্দল মডেল’। শিল্পোদ্যোগী জমি কিনিবেন। অতঃপর, রাজ্য সেই জমি অধিগ্রহণ করিয়া পুনরায় সেই মালিককেই ‘লিজ’-এ ব্যবহার করিতে দিবে! নাসিকাটি ঘুরাইয়া দেখাইবার এই আয়োজন কেন, সদুত্তর নাই। তৎসহ, শহরে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন, দুঃখের বিষয়, পশ্চিমবঙ্গে এখনও বিদ্যমান। সুতরাং, এক দিকে হাস্যকর একটি প্রক্রিয়া। অন্য দিকে, উর্ধ্বসীমা আইনের ফাঁদ। শিল্পোদ্যোগীরা পশ্চিমবঙ্গ সম্পর্কে উদ্দীপনা বোধ না করিলে বিস্মিত হইবার কারণ নাই।
সুশাসনের অভাবটি বিভিন্ন ক্ষেত্রেই প্রকট। বিনিয়োগের জন্য জমির বন্দোবস্ত তাহার একটি দৃষ্টান্ত। যুক্তি বলিতেছে, রাজ্যকেই জমি অধিগ্রহণ করিয়া উদ্যোগীদের হাতে তুলিয়া দিতে হইবে। অথচ, বাস্তব উল্টা দিকে চলিতেছে। শুধুই জমি নহে, অন্য নানা বিষয়েও সেই অভাবটি দৃশ্যমান। দৃষ্টান্ত, আমরি-কাণ্ড। দোষীর কঠোরতম শাস্তিই কাম্য, কিন্তু ‘অপরাধ’টি প্রমাণ করিবার কিছু সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া আছে। একটি বিচারবিভাগীয় কমিশন গঠিত হইয়াছে। তদন্ত হইবে। এমন সময় স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীই যদি ‘খুন’ ইত্যাদি মন্তব্য করিয়া বসেন, তাহা আইনি প্রক্রিয়ার সহিত সঙ্গতিশীল হয় না। দায়িত্বে অবহেলা মারাত্মক অপরাধ, কিন্তু হত্যার সমার্থক কি না, তাহা বিবেচনার বিষয়। একই সঙ্গে, ‘হেবিয়াস কর্পাস’ একটি মৌলিক অধিকার। তাহা মানা হইতেছে কি? একটি বিশেষ জনগোষ্ঠীভুক্ত ব্যক্তিদেরই বা শুধু গ্রেফতার করা হইয়াছে কেন? অনেক প্রশ্ন। এবং, প্রশ্ন ক্রমেই বাড়িতেছে। রাজ্য ভয়াবহ শক্তি সংকটের সম্মুখীন। জমির জট বহাল, তাই এই মুহূর্তে নূতন কোনও বৃহৎ বিনিয়োগের দেখা নাই। পাশাপাশি, বর্তমান শক্তিকেন্দ্রগুলির হস্তেও কয়লা কিনিবার ন্যায় অর্থ মজুত নাই। অতঃপর আর যাহাই হউক, নূতন বিনিয়োগের কথা ভাবা চলে না। চলিলে ঢাকাই কুট্টি মুচকি হাস্য করিবেন। তাহার পর কী বলিবেন, তাহা কিংবদন্তি। বদলাইবার প্রয়োজন নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.