ভোটে উত্তরপ্রদেশ
মায়া-মূর্তি ঢাকা পড়ায় মাথাব্যথা বিরোধীদেরই
হাতি নিয়ে হট্টগোল না মূর্তি নিয়ে মাথাব্যথা! লালমোহন গাঙ্গুলি ওরফে জটায়ু এই মূহূর্তে উত্তরপ্রদেশ নিয়ে উপন্যাস ফাঁদলে কোন শিরোনামটি দিতেন? কারণ এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছে মায়াবতীর রাজ্যে! এক দিকে কমিশনের তত্ত্বাবধানে রাজ্যের প্রশাসনিক কর্তারা গত ৭২ ঘণ্টা ধরে প্রাণপণে হিসেব কষে গিয়েছেন যে ৩০০-রও বেশি হাতির মূর্তি ঢাকতে কত পলিথিন লাগবে? আবার কংগ্রেস, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টির নেতারা মাথায় হাত দিয়ে ভাবছেন, মূর্তি ঢাকার ফরমান নির্বাচন কমিশন জারি না করলেই ভাল হত!
কমিশনের নির্দেশ, ভোট বাতাবরণ নিরপেক্ষ রাখতে তামাম উত্তরপ্রদেশ জুড়ে মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতী এবং সব হাতির (বহুজন সমাজ পার্টির ভোট-প্রতীক) মূর্তি ঢেকে দিতে হবে চাদরে-পলিথিনে, আগামিকালের মধ্যেই। তাতে মুখ শুকিয়েছে উত্তরপ্রদেশের তিন বিরোধী দলকংগ্রেস, সপা ও বিজেপির! তাঁদের ভয়, মায়া-মূর্তি ঢেকে দেওয়ার
নির্দেশ ভোটের মুখে দলিত আবেগকে নিঃসন্দেহে উস্কে দেবে। এমনিতেই উত্তরপ্রদেশের দলিত সম্প্রদায় মায়ার মজবুত ভোট ব্যাঙ্ক। তার উপরে কমিশনের নির্দেশের ফলে ভোটের এক মাস আগেই ফের দলিত মেরুকরণের ক্ষেত্র তৈরি হল বলেই তাঁরা মনে করছেন। ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস ও বিজেপি নেতারাই স্বীকার করছেন, মূর্তিগুলো প্রকাশ্যে থাকলেই তাঁদের ভাল হত। জনকল্যাণের অর্থ মায়াবতী যে ভাবে নিজের মূর্তি তৈরিতে খরচ করেছেন তা রাজ্যের শিক্ষিত সমাজের বড় অংশের উষ্মার কারণ এবং মূর্তিগুলো দেখিয়ে তা খুঁচিয়ে তোলা যেত।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ঢাকা হচ্ছে হাতির মূর্তি। লখনউয়ের গোমতী নগরে মঙ্গলবার। ছবি: পিটিআই
কিন্তু সে গুড়ে বালি! মায়াবতী ও হাতির সব মূর্তি ঢেকে ফেলার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। কাপড় বা পলিথিনের রঙ কী হবে তা স্থির করতেই অবশ্য কেটে গিয়েছে প্রথম দু’দিন। কারণ, নীল কাপড় বা পলিথিনে মূর্তি ঢাকা চলবে না। সেটি বসপা-র পতাকার রঙ। একই ভাবে বাদ পড়েছে লাল, সবুজ, সাদা, গেরুয়া-ও। শেষমেশ গোলাপি রঙ বেছে নেওয়া হয়েছে। যদিও তা আবার মায়াবতীর প্রিয় রং। হিসেব কষে আপাতত দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ পলিথিন কিনেছে উত্তরপ্রদেশ প্রশাসন। এ জন্য খরচ হয়েছে এক কোটি টাকা। তবে পলিথিনে কেবল হাতির মূর্তি ঢাকা হবে, মায়া-মূর্তি ঢাকা থাকবে চাদরে। সেজন্য নাকি আবার ডাক পড়েছে দর্জিদের! মজা করে এ-ও বলা চলছে, খোদাই শিল্পীদের পর এ বার উত্তরপ্রদেশে দর্জিদের কপাল খুলবে! মূর্তির সংখ্যা তো নেহাত কম নয়!
মায়াবতী জমানায় লখনউ-এর গোমতী নগরে তৈরি ভীমরাও অম্বেডকর পরিবর্তন স্থলে মায়াবতীর দু’টি মূর্তি রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে ১৫৬টি পাথরের তৈরি হাতি। আর দিল্লি সংলগ্ন নয়ডায় ৬৮০ কোটি টাকা খরচ করে যে দলিত প্রেরণাস্থল গড়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সেখানেও তাঁর দু’টি ব্রোঞ্জ মূর্তি রয়েছে। নয়ডায় ব্রোঞ্জের তৈরি হাতির মূর্তি রয়েছে ২২টি আর ৩০টি পাথরের হাতি রয়েছে। এ ছাড়াও গ্রেটার নয়ডা, মায়াবতীর জন্মস্থান গাজিয়াবাদের বাদলপুর-সহ উত্তরপ্রদেশ জুড়ে তাঁর নিজের মূর্তি কম নেই।
স্বাভাবিক ভাবেই এ সব মূর্তি ঢাকার নির্দেশ নিয়ে দলিত আবেগে সুড়সুড়ি দিতে ছাড়ছেন না মায়া। তাঁর কথায়, “কংগ্রেসের অঙ্গুলিহেলনেই নির্বাচন কমিশন এই পদক্ষেপ করেছে।” প্রমাদ গুনে বিষয়টি থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কংগ্রেস। বিজেপি এবং সমাজবাদী পার্টিরও হাল এক!
রাজনৈতিক সূত্রে বলা হচ্ছে, মায়াবতীর দলিত ভোটব্যাঙ্কে ভাঙন ধরাতে কংগ্রেস তথা রাহুল গাঁধী গত আড়াই বছরেরও বেশি সময় ধরে তৎপর। রাতের পর রাত দলিতদের ঘরে থেকেছেন রাহুল। একই ভাবে দলিতদের কাছে টানতে সচেষ্ট হয়েছে বিজেপি-ও। কমিশনের ফরমান সেই প্রয়াসে জল ঢেলে দিল বলেই তাঁরা মনে করছেন। প্রকাশ্যে অবশ্য কেউই টুঁ শব্দটি করতে চাইছেন না। কারণ এ ব্যাপারে কথা বলা মানেই বিতর্ক বাড়ানো। কিন্তু ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস ও বিজেপি-র মধ্যে থেকেই কমিশনের এই নির্দেশ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।
বিজেপি-র এক নেতার কথায়, সমাজবাদী পার্টির ভোট প্রতীক সাইকেল। তা ছাড়া মুলায়ম মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন সরকারের তরফে অনেক মানুষকে সাইকেল দেওয়া হয়েছিল। তা হলে সেই সাইকেলও কি ঢেকে দেওয়া হবে? কংগ্রেসের প্রতীক চিহ্ন হাতেরই বা কী হবে? আবার রাষ্ট্রীয় লোকদলের প্রতীক নলকূপ। সরকারি অর্থে উত্তরপ্রদেশে অন্তত কয়েক হাজার নলকূপ রয়েছে। সেগুলোর কী হবে? সব দেখেশুনে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতা বললেন, “কমিশনের নির্দেশ একমাত্র মায়াবতীকেই খুশি করেছে। হাতির পাঁচ পা দেখছে বসপা।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.