হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যালসে অবশেষে আশার আলো। সংস্থার শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর মধ্যে দীর্ঘ বিবাদ মেটার একটা সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, দু’পক্ষই চাইছে নিজের নিজের স্বার্থ বজায় রেখে এ ব্যাপারে একটি স্বচ্ছ প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে। মঙ্গলবার মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর কর্ণধার পূর্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। যদিও বিষয়টি নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খোলেনি।
হলদিয়া পেট্রোকেমের শেয়ার কেনা নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে পূর্ণেন্দু গোষ্ঠীর বিবাদের সূত্রপাত বাম আমল থেকে। রাজ্য সরকারের কাছ থেকে শেয়ার কিনে সংস্থায় নিজেদের মালিকানা ৫১ শতাংশে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন পূর্ণেন্দুবাবুরা। শেয়ার বেচতে রাজ্য সরকারের আপত্তি না থাকলেও (বস্তুত তারা সব শেয়ারই বেচে দিতে চেয়েছিল) শেয়ার-পিছু প্রায় ২৯ টাকা দাম দাবি করে তারা। তাতে আপত্তি জানিয়ে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী বলেন, শেয়ারের মূল্যায়ন করুক কোনও পেশাদার সংস্থা। এই নিয়ে মামলা গড়ায় সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত। শীর্ষ আদালত শেষ পর্যন্ত চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর দাবি খারিজ করে দেওয়ায় শেয়ার হস্তান্তর নিয়ে বল ফের রাজ্য সরকারের কোর্টে চলে এসেছে। এখন তৃণমূল সরকারের ঘোষিত অবস্থান হল, তাদের হাতে থাকা হলদিয়ার শেয়ার নিলামে তোলা হবে। চ্যাটার্জি গোষ্ঠী অবশ্য মনে করছে স্বচ্ছতা এবং সঠিক দামের কথা মাথায় রাখলে নিলামের থেকে শেয়ার বাজার অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। তাদের যুক্তি, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শেয়ার বিক্রি হয়েছে শেয়ার বাজারের মাধ্যমেই। তার দাম নিয়ে কোনও অভিযোগ ওঠেনি। শেয়ার বাজারে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি। নতুন শেয়ার যখন বাজারে আসে, তখন তা কত দামে বিক্রি হবে তা ঠিক হয় ক্রেতাদের আগ্রহের ভিত্তিতে। যা কার্যত নিলামেরই সামিল। কিন্তু সরাসরি নিলামে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় দামকে প্রভাবিত করার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
তবে নিলাম না শেয়ার বাজার কোন পথে পেট্রোকেম জট ছাড়বে, তা নিয়ে রাজ্য সরকার ও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর মধ্যে সরাসরি এখনও কোনও বৈঠক হয়নি। যদিও ঘরোয়া স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। আর তা থেকেই বিতর্ক মেটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট মহলের মত।
ইতিমধ্যে হলদিয়া পেট্রোকেম থেকে ৪০ জন ইঞ্জিনিয়ার পদত্যাগ করেছেন। সংস্থার আর্থিক হাল যেখানে দাঁড়িয়েছে সেখান থেকে বেরোতে গেলে আশু প্রয়োজন ব্যাঙ্ক ঋণের। কিন্তু ব্যাঙ্কগুলির এ ব্যাপারে অবস্থান খুব স্পষ্ট। সংস্থার মালিকানা সংক্রান্ত বিবাদ না-মিটলে নতুন ঋণ দেবে না তারা। এ নিয়ে সংস্থা কর্তৃপক্ষ মুখ্যসচিবের সঙ্গে একটি বৈঠকও করেছেন। তবে যে হেতু রাজ্যের শিল্পসচিব বদলের পর বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায় সদ্য দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন, সে হেতু গত বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারের সঙ্গে সংস্থার এ ব্যাপারে নির্দিষ্ট বৈঠক হতে পারেনি।
রাজ্যের হাতে থাকা শেয়ার শেষ পর্যন্ত শেয়ার বাজারে বিক্রির কথা বললেও একদা টাটা গোষ্ঠীর হাতে থাকা ১৫ কোটি ৫০ লক্ষ শেয়ার নিয়ে অবশ্য নিজেদের অবস্থানে অনড় চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। পূর্ণেন্দুবাবুদের দাবি, এই শেয়ার তাঁদের। রাজ্য শিল্পোন্নয়ন নিগমের কাছে এই শেয়ার গচ্ছিত রেখে ঋণ নিয়েছিলেন তাঁরা। তার কিছুটা ফেরতও দেওয়া হয়েছে। তবে মামলা হওয়ায় নিগম টাকা নেয়নি। ফলে শেয়ারও চ্যাটার্জি গোষ্ঠীর হাতে আসেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, সম্প্রতি ব্যাঙ্ক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংস্থার মালিকানা সংক্রান্ত গোলমাল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। সংস্থা তখন অশোক দেশাই, পি সি সেন (যিনি সরকারের হয়ে হাইকোর্টে সওয়াল করেছিলেন) এবং ভি এম খারের (সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি) কাছে পরামর্শ নেয়। সকলেই জানিয়েছেন মালিকানা চুক্তি অনুযায়ী ১৫ কোটি ৫০ লক্ষ শেয়ার কেনার বিষয়ে অগ্রাধিকার পাবে চ্যাটার্জি গোষ্ঠী। |