আমরি-কাণ্ডে পুলিশের নিরপেক্ষতা নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুললেন সংস্থার গ্রেফতার হওয়া দুই ডিরেক্টরের আইনজীবী।
শ্রবণকুমার তোদি এবং রবি তোদির আইনজীবী অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার আমরির পরিচালন বোর্ডের ১৫ জন সদস্যের তালিকা আলিপুর আদালতের বিচারকের কাছে জমা দেন। বলেন, “ওই তালিকায় হাসপাতালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মণি ছেত্রীর নাম রয়েছে। রাজ্য সরকারের দুই প্রতিনিধির নাম রয়েছে। নাম রয়েছে শহরের কয়েক জন নামী চিকিৎসকের। অথচ পুলিশ শুধু সাত ডিরেক্টরকেই গ্রেফতার করেছে।”
এর আগে হাসপাতালের দৈনন্দিন কাজের সঙ্গে যুক্ত না-হওয়া সত্ত্বেও ওই সাত জনকে কেন গ্রেফতার করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বণিকসভা ফিকি। এ বার তোদিদের পক্ষ থেকে সরাসরি আদালতে অভিযোগ করা হল যে, গ্রেফতারির ক্ষেত্রে পুলিশ একই মাপকাঠি মেনে চলছে না।
আলিপুর আদালতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী হেফাজত করিম অবশ্য এ দিনও আমরির সাত ডিরেক্টরের জামিনের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। আমরি-কর্তাদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, “তদন্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তা ছাড়া এই মামলার গুরুত্ব বিবেচনা করে জামিনের আবেদন খারিজ করা হল।” ধৃত সাত ডিরেক্টরের মধ্যে রাধেশ্যাম অগ্রবাল এখন এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বাকিরা রয়েছেন আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে। এ দিন ওই ছয় ডিরেক্টর এবং গ্রেফতার হওয়া আরও দু’জনকে আদালতে হাজির করা হয়।
জামিনের আবেদন জানিয়ে অমিতাভবাবু বলেন, “তদন্তের স্বার্থে আমরি-অগ্নিকাণ্ডের পরই তাঁর মক্কেলরা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। শহর ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করেননি।” তোদিদের অন্য আইনজীবী সেলিম রহমান বলেন, “শ্রবণ তোদি চোখের সমস্যা, ডায়াবেটিস, মানসিক অবসাদ-সহ নানা অসুখে ভুগছেন। তিনি নিরামিষাশি। কিন্তু জেলের খাবারে পিয়াজ, রসুন থাকার কারণে ঠিকমতো খেতেও পারছেন না। দুর্বল হয়ে পড়েছেন। এর জেরে জেলের স্নানঘরে পড়েও গিয়েছেন। রবি তোদিও অসুস্থ। তাঁদের সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।”
ধৃত ডিরেক্টর দয়ানন্দ অগ্রবালের আইনজীবী অমিত ভট্টাচার্য বিচারককে জানান, তাঁর মক্কেল আমরি-র অর্থনৈতিক উপদেষ্টার দায়িত্ব সামলান। ব্যবসা সম্প্রসারণের বিষয়টিও দেখেন। অগ্নিরোধক ব্যবস্থার উপর তাঁর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। অমিতবাবু উল্টে দমকলকে দোষারোপ করে বলেন, “আমরি-র অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থায় সন্তুষ্ট হয়ে দমকলই ছাড়পত্র দিয়েছিল।”
অন্য তিন ডিরেক্টর রাধেশ্যাম গোয়েন্কা, মনীশ গোয়েন্কা এবং প্রশান্ত গোয়েন্কার আইনজীবী এস কে কপূর বলেন, “ঘটনার পর ২৭ দিন কেটে গিয়েছে। অথচ এখনও তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কথা বলে জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করছে পুলিশ। আমরি-অগ্নিকাণ্ডে ধৃতদের বিরুদ্ধে জোরালো প্রমাণ রয়েছে কি না, আদালত তা বিচার করুক।” কপূরের প্রশ্ন, “এ রাজ্যে তাঁর মক্কেলদের কয়েক’শো কোটি টাকার ব্যবসা রয়েছে। কলকাতা ওই ব্যবসার প্রাণকেন্দ্র। এ শহরে তাঁদের সামাজিক সম্মান রয়েছে। জামিন পেলে তাঁরা কোথায় পালাবেন?”
আমরি-কর্তা সত্যব্রত উপাধ্যায় এবং হাসপাতালের কর্মী সঞ্জীব পালের পক্ষে সওয়াল করতে গিয়ে আইনজীবী অশোক মুখোপাধ্যায় জানান, পুলিশ তাঁর মক্কেলদের বিরুদ্ধে ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে। হেফাজতে রাখার জন্যই জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। টু-জি স্পেকট্রাম মামলা, দিল্লির উপহার সিনেমা হলে আগুন, ভোপাল গ্যাস কাণ্ডে অভিযুক্তদের জামিনের বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ের উল্লেখ করেন তিনি। ওই আইনজীবী জানান, সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে কয়েকটি সংস্থায় চাকরির পর আমরি-তে ‘পরামর্শদাতা’ হিসেবে যোগ দেন সত্যব্রতবাবু। অগ্নিকাণ্ডের সময় তিনি এবং সঞ্জীববাবু সেখানে উপস্থিতই ছিলেন না। কোনও ভাবেই তাঁরা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নন।
জামিনের বিরোধিতা করেন সরকারি আইনজীবী দেবাশিস রায়, শক্তি ভট্টাচার্য, বৈশ্বানর চট্টোপাধ্যায়, রাজদীপ মজুমদাররা। তাঁরা বলেন, “অভিযুক্তদের সামাজিক ও আর্থিক অবস্থান, শিক্ষার বিষয় আদালতে তোলা হয়েছে। কিন্তু, তাঁদের প্রভাবের কথা বলা হয়নি। জামিনে মুক্তি পেলে প্রভাব খাটিয়ে সাক্ষ্যপ্রমাণে কারচুপিও করতে পারেন তাঁরা।” হাসপাতালের বেসমেন্ট থেকে দাহ্য পদার্থ সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আমরি-র তরফে হলফনামা দাখিল করা হলেও, তা মানা হয়নি বলে মন্তব্য করেন সরকারি আইনজীবীরা। এর পরেই বিচারক ধৃতদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। |