|
|
|
|
সুন্দরবনে বাঁধের জন্য জমি অধিগ্রহণ বিশ বাঁও জলেই |
দেবজিৎ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে আয়লায় ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ নতুন করে তৈরির জন্য দুই ২৪ পরগনা মিলিয়ে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে ৫৭০০ একরের মতো। গত দু’বছরের চেষ্টায় মিলেছে দেড়শো একর। এর মধ্যে পূর্বতন বাম জমানায় নেওয়া হয়েছে ১৩১ একর। আর নতুন সরকারের আমলে এ পর্যন্ত সাকুল্যে ১৯ একর!
কেন এই হাল?
ভূমি দফতরের একাধিক কর্তার মতে, রাজ্যের জমি-নীতি চূড়ান্ত না-হওয়ার জন্যই অধিগ্রহণের কাজ পুরোদমে শুরু করা যায়নি। উপরন্তু বাঁধের জমি চিহ্নিত করতে সেচ দফতর যে বেসরকারি সংগঠনকে নিয়োগ করেছিল, তাদের দেওয়া তথ্যে বহু ভুল-ভ্রান্তি থেকে গিয়েছে। কোথাও অধিগৃহীত জমি-ই ফের অধিগ্রহণের কথা বলা হয়েছে, কোথাও বহু কাল আগে নদীগর্ভে চলে যাওয়া জমিকে বাঁধের জমি হিসেবে দেখানো হয়েছে, কোথাও বা কম্পিউটারে তৈরি মানচিত্রের সঙ্গে জমির বাস্তব চরিত্র মিলছে না। এই সব ভুল সংশোধন করতেই কেটে গিয়েছে অনেকটা সময়।
উপরন্তু সরকার জমির যে দাম নির্ধারণ করেছে, ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ গ্রামের মানুষ তা মানতে রাজি নন। ফলে জমির টাকা দিতে গিয়ে গ্রামবাসীদের বিক্ষোভের মুখে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ফিরে আসতে হল গত ক’মাসে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে বাসন্তী, গোসাবা ও হিঙ্গলগঞ্জে। মহাকরণ-সূত্রের খবর: বাঁধের জমি অধিগ্রহণের জন্য সম্প্রতি দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে ভূমি-অফিসারেরা গিয়েছিলেন গোসাবার বিজয়নগরে। কিন্তু স্থানীয় মানুষ টাকা নিতে অস্বীকার করেন। স্থানীয় বালি গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য মুরারিমোহন ঘরামি বলেন, “সরকার বাজারদরের চেয়ে অনেক কম টাকা দিচ্ছে। জমির দাম ঠিক করার আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনাও করেনি। এখন জবরদস্তি জমি নেওয়ার চেষ্টা হলে বাধা দেব।”
গোসাবার তৃণমূল বিধায়ক জয়ন্ত নস্করও কবুল করেছেন, বিজয়নগরের বাসিন্দারা জমির টাকা নেননি। যদিও তাঁর দাবি, “ভুল বোঝাবুঝি একটা হয়েছিল। তা মিটে গিয়েছে। আমি ওঁদের সঙ্গে কথা বলে আর একটা দিন ঠিক করছি।” এ দিকে জমির দাম বাড়ানোর পাশাপাশি মুরারিবাবুরা চাকরিরও দাবি তুলেছেন॥
এই পরিস্থিতিতে গোদের উপরে বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের নিয়োগ। অধিগ্রহণ দ্রুত শেষ করতে দুই জেলা প্রশাসনকে অবসরপ্রাপ্ত বিভাগীয় কর্মীদের নিয়োগ করার নির্দেশ দিয়েছিল ভূমি দফতর। কিন্তু তাতে নিচুতলার কর্মী পাওয়া গেলেও উঁচুতলার আধিকারিকেরা খুব বেশি আসেননি। ফলে সব স্তরের কর্মী নিয়ে যে ‘স্কোয়াড’ তৈরির পরিকল্পনা জেলা প্রশাসন করেছিল, বহু ক্ষেত্রে ত বাস্তবায়িত হয়নি। তবু কোনও রকমে ১১-১২টা করে স্কোয়াড বানিয়েছে দুই জেলা। স্কোয়াড-সদস্যদের ‘বেতন’ বাবদ প্রতি মাসে ৩০ লক্ষ টাকা সরকারের খরচ হয়। অথচ কাজ প্রায় নেই বললেই চলে! |
|
|
|
|
|