কীটনাশক মেশানো খেতের গম খেয়ে শতাধিক পায়রা, ঘুঘু, শালিক, মুরগি ও ডাহুকের মৃত্যুতে সোরগোল পড়ে গেল বালুরঘাটে। বৃহস্পতিবার শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্বাচলপল্লিতে ওই ঘটনা ঘটে। বালুরঘাটের ডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েত লাগোয়া ওই এলাকায় ১২ বিঘা জমিতে বুধবার চাষের জন্য গম বীজ বোনা হয়। পাখির হানা ঠেকাতে জমির মালিক মুড়িতে বিষ মাখিয়ে ছড়িয়ে দেন বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ। এরপর বুধবার বিকেলের পর থেকেই পোষা পায়রাগুলি বাড়িতে গিয়ে ছটপট করে মারা যেতে থাকে। এ দিন সকালে বাসিন্দারা ওই জমিতে গিয়ে দেখেন বহু শালিক, ঘুঘু, পায়রা, ডাহুক মরে পড়ে রয়েছে। এরপরই বাসিন্দারা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। খবর পেয়ে এলাকায় যান প্রাক্তন আরএসপি কাউন্সিলার-সহ পরিবেশপ্রেমীরা। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি তাঁদের তরফেও এ বিষয়ে থানায় ও বন দফতরে অভিযোগ করা হয়। ওই জমির মালিক অমিত মোহান্ত বলেন, “বরাবরই গম বীজে কীটনাশক মিশিয়ে জমিতে বোনা হয় যাতে পোকায় বীজ নষ্ট না হয়। পাখি মারার উদ্দেশ্যে কীটনাশক দেওয়া হয়নি। মুড়িতে বিষ মিশিয়ে ছড়ানোর অভিযোগ মিথ্যা।” বালুরঘাট পুরসভার চেয়ারপার্সন সুচেতা বিশ্বাস বলেন, “ওয়ার্ডে কোনও ফাঁকা জায়গায় ঘরবাড়ি নেই। সেখানে চাষযোগ্য জমি থাকে, তবে চাষআবাদে কোনও বাধা নেই। গ্রামগঞ্জেও চাষ-আবাদ হয়। সেখানে তো শস্যদানা খেয়ে কোনও পাখি মারা যায় না।” ঘটনাটি খোঁজ নেবেন বলে চেয়ারপার্সন জানিয়েছেন। বালুরঘাটের বন বিভাগের বিট অফিসার আব্দুর রেজ্জাক জানান, খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলার আঙ্গিনা পাখি ও পরিবেশ সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিত বসাক অভিযোগ করেন, জমিতে বিষ কিংবা কীটনাশক ছড়ানোর ২ দিন আগে এলাকায় প্রচার করার বিধি রয়েছে। তাতে বাসিন্দারা হাঁস-মুরগি-সহ পোষা পাখি বেঁধে রাখতে পারেন। তিনি বলেন, “পাখি তাড়াতে জমিতে রঙিন কাপড় বিছানো, কাকতাড়ুয়ার মত ব্যবস্থা রাখতে হবে। অথচ পাখি তাড়াতে তাদের মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। এটা অপরাধ। এর বিরুদ্ধে আন্দোলন করব।” এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ওই জমিতে ঘুঘু, গাঙশালিক, পায়রা মরে পড়ে আছে। ছড়িয়ে আছে মুড়ি। স্থানীয় বাসিন্দা শঙ্কর দাস, শ্যামল মন্ডল, পবন সূত্রধরেরা তা দেখিয়ে অভিযোগ করেন, এক-একজনের পোষা ২০ থেকে ৩০টি পায়রা ওই জমিতে খুঁটে খাওয়ার পরেই ছটফট করে মারা যায়। চাষের কাজে যুক্ত এক শ্রমিক বলেন, “মালিকের নির্দেশ মতো পাখি তাড়াতে বিষ ছড়ানো হয়।” জমির মালিক অমিতবাবুর মন্তব্য, কীটনাশকের পরিমাণ হয়তো কড়া হয়ে গিয়েছিল। তবে তার গন্ধে পাখিদের জমিতে না-বসারই কথা। |