সম্পাদকীয় ২...
যুক্তরাষ্ট্রের দিকে
কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক এক সমস্যায় পড়িয়াছে। ‘আম আদমি’-র উদ্দেশে ইউ পি এ সরকারের প্রধানতম প্রকল্প মহাত্মা গাঁধী গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা যোজনার মজুরির হার লইয়া সমস্যা। এই প্রকল্পের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দেয়। কী হারে মজুরি দেওয়া হইবে, তাহাও কেন্দ্রীয় সরকারই স্থির করিয়া দেয়। অন্য দিকে, কৃষি-শ্রমিকের মজুরির হার কী হইবে, আইন অনুসারে তাহা স্থির করিবার অধিকার রাজ্য সরকারের আছে। কর্নাটক, পশ্চিমবঙ্গ, অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল, রাজস্থানের ন্যায় কিছু রাজ্য গত কয়েক বৎসরে বেশ কয়েক বার এই মজুরির হার বাড়াইয়াছে। ফলে, সেই হার জাতীয় কর্মসংস্থান যোজনার মজুরির হারের তুলনায় অনেকখানি বেশি। কর্নাটক হাই কোর্ট সম্প্রতি রায় দিয়াছে যে কেন্দ্রীয় সরকারকে রাজ্যের কৃষি-শ্রমিকের মজুরির হারেই মজুরি দিতে হইবে। কেন্দ্রীয় সরকার স্বভাবতই তাহাতে রাজি নহে। এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হইয়াছে। মন্ত্রকের বক্তব্য, যে সব রাজ্যে মজুরির হার জাতীয় হারের তুলনায় বেশি, সেখানে তবে রাজ্য সরকার বাড়তি মজুরিটুকু দিক। সব মিলাইয়া পরিস্থিতি জটিল।
এই জটিলতা সাধ করিয়া ডাকিয়া আনা। ইহা এক প্রাচীন কু-অভ্যাসের ফল ভারতের যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোটিকে অস্বীকার করিবার অভ্যাস। যে অভ্যাসের তাড়নায় কেন্দ্রীয় সরকার লোকায়ুক্ত সংক্রান্ত সিদ্ধান্তও রাজ্যের হাতে ছাড়িতে চাহে না, কর্মসংস্থান প্রকল্পের মজুরি সংক্রান্ত বর্তমান জটিলতাটিও সেই একই অভ্যাসের সন্তান। গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করাকে কেন্দ্রীয় সরকার অতি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করিতেই পারে। সে বাবদ টাকা খরচ করিবার অধিকারও কেন্দ্রীয় সরকারের আছে। কিন্তু, কোন রাজ্য কোন খাতে সেই কর্মসংস্থান করিবে, কী হারে বেতন দিবে এগুলি নিতান্তই সেই রাজ্যের বিবেচ্য। কেন্দ্রের রাজকোষ হইতে টাকা আসিতেছে বলিয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার ছড়ি ঘুরাইবার অধিকারটি পোক্ত হয় না। কেন্দ্রীয় সরকার প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ টাকা রাজ্য সরকারগুলির হাতে তুলিয়া দিক। সেই টাকা কী ভাবে ব্যবহৃত হইবে, তাহা রাজ্য সরকারের ভাবনা।
কোন রাজ্যের কত টাকা বরাদ্দ, তাহাও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা স্থির করিবে না। রাজ্যগুলির মধ্যে টাকা বণ্টনের যুক্তিযুক্ত সূত্র নির্ধারণ করিতে হইবে। রাজ্যে লোকসংখ্যা, দারিদ্রের হার, কৃষিনির্ভরতা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা করিয়াই সেই সূত্র নির্ধারিত হইবে। সেই সূত্র নির্ধারণের দায়িত্ব অর্থ কমিশনের উপর অর্পণ করাই বিধেয়। যোজনা কমিশন নহে, অর্থ কমিশন কারণ পূর্বোক্ত প্রতিষ্ঠানটির কোনও সাংবিধানিক ভিত্তি নাই। বস্তুত, সময়ের সঙ্গে অর্থ কমিশন এই বরাদ্দের পরিমাণ পুনর্বিবেচনা করিতে পারে। এই বিষয়ে বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় উন্নয়ন পরিষদের সহিত কথা বলিবারও প্রয়োজন আছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব শুধু প্রতি বাজেটে বরাদ্দের অঙ্কটি বাঁধিয়া দেওয়া। কেন্দ্র-রাজ্যের উচ্চাবচ সম্পর্কে কেন্দ্রের অবস্থান উচ্চ এই বিশ্বাসটি সমাজের সর্ব স্তরে এমন ভাবে শিকড় গাড়িয়াছে যে তাহাকে উচ্ছেদ করিবার কাজটি কঠিন। জাতীয় কর্মসংস্থান প্রকল্প হইতেই উচ্ছেদের কাজটি আরম্ভ হউক। কেহ বলিতে পারেন, সংবিধান এই ব্যবস্থাটিকে ছাড়পত্র দিবে না। তাহার জন্য সংবিধান সংশোধন করিতে হইবে। গত একান্ন বৎসরে বহু বার সংবিধান সংশোধনের কাজ হইয়াছে, এবং অনেক ক্ষেত্রেই তাহা অকিঞ্চিৎকর, তাৎপর্যহীন সংশোধন। এই ক্ষেত্রে অর্থপূর্ণ সংশোধন হউক। স্বাধীনতা অর্জনের সাড়ে ছয় দশক পর ভারত প্রকৃত যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর অভিমুখে যাত্রা শুরু করুক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.