উত্তরপ্রদেশে ঘোর দুর্দশায় সিপিএম
মায়া-প্রশ্নে অস্পষ্ট কারাট, দলেই প্রশ্নের মুখে
পার্টি কংগ্রেসের আগে দলের মধ্যে ফের প্রশ্নের মুখে প্রকাশ কারাট। এ বার প্রসঙ্গ উত্তরপ্রদেশ নির্বাচন।
হিন্দি বলয়ে দলের প্রভাব বিস্তারের জন্য ২০০৮-এ কোয়ম্বত্তূর পার্টি কংগ্রেসে উত্তরপ্রদেশের দায়িত্ব নিয়েছিলেন খোদ সাধারণ সম্পাদক। অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছিল উত্তরপ্রদেশে সংগঠন বিস্তারের কাজকে। তার পরে চার বছর হতে চলল। পশ্চিমবঙ্গের আঙিনা ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূলও যখন উত্তরপ্রদেশে পা বাড়ানোর চেষ্টা করছে, তখন সিপিএমের দলীয় রিপোর্ট বলছে, ছিটেফোঁটাও উন্নতি হয়নি সংগঠনের। পার্টির ক্লাস করানোর জন্যও লোক মিলছে না। উল্টে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীকে নিয়ে কারাট এক-এক সময় এক-এক রকম অবস্থান নেওয়ায় দলেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। গত লোকসভা ভোটে মায়াবতীকে প্রধানমন্ত্রী-পদপ্রার্থী হিসেবে সামনে রেখেই তৃতীয় ফ্রন্ট গড়েন কারাট। পরে কবুল করেন, ভুল হয়েছিল। বিধানসভা ভোটের আগে তিনি মায়াবতীর জমি অধিগ্রহণ নীতি ও ‘অপশাসন’-এর প্রবল সমালোচক। কিন্তু দল এ-ও বলছে, মায়াবতী গরিষ্ঠতার কাছাকাছি গিয়ে ঠেকে গেলে সিপিএম সাহায্য করতে পারে। সে সম্ভাবনার পথ খোলা রাখা হচ্ছে।
কিন্তু নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে হলে এ রাজ্যে অন্তত একটি আসনে হলেও তো জিততে হবে সিপিএমকে! সেটাই হয়ে উঠবে কি না, জোর গলায় বলতে পারছে না কারাটদের দল। সিপিএম নেতারা বলছেন, সাধারণ সম্পাদক এই ভেবেই খুশি যে, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের অবস্থাও ভাল নয়। ডিসেম্বরের শেষে কানপুরে দলের রাজ্য সম্মেলনে গিয়ে কারাট দাবি করেছেন, বিহারে রাহুল গাঁধীকে প্রচারে নামিয়েও কংগ্রেসের কোনও লাভ হয়নি। উত্তরপ্রদেশেও কোনও সুফল মিলবে না।
কিন্তু তাতে সিপিএমের কোনও লাভ হবে কি? গত বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম ১৬টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশে। একটিতেও জেতেনি। এ বারও রাজ্যের ৪০৩টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ১৬টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে তারা। দলের রাজ্য সম্পাদক এস পি কাশ্যপ বলেন, “আরও তিন-চারটি আসনে প্রার্থী দেওয়া যায় কি না, তা দেখা হচ্ছে। আমাদের প্রচারের মূল বিষয় হবে, জমি অধিগ্রহণ এবং মায়াবতীর আমলে অপরাধমূলক ঘটনার বৃদ্ধি। মূল্যবৃদ্ধি ও দুর্নীতিও প্রচারের বিষয় হবে।”
উত্তরপ্রদেশের মাটিতে দাঁত ফোঁটানোর চেষ্টা কি একেবারেই করেননি কারাট? কারাট-শিবিরের বক্তব্য, চেষ্টা অবশ্যই হয়েছিল। কিন্তু জাতপাতের রাজনীতি সিপিএমের সামনে এখনও বড় বাধা। ভাট্টা-পারসলে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে স্থানীয় কৃষকদের অসন্তোষকেও কাজে লাগাতে চেয়েছিল সিপিএম। কারাটের নির্দেশে পলিটব্যুরো সদস্য এস আর পিল্লাই সেখানকার কৃষক ও কৃষক সংগঠনের নেতাদের নিয়ে মায়াবতী-সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেন।
তাতে কী লাভ হয়েছে? ভাট্টা পারসলে প্রার্থীই জোগাড় করতে পারেনি সিপিএম। কাশ্যপের দাবি, “ভাট্টা-পারসলে আমাদের প্রচেষ্টার ফলে মথুরা, আলিগড়, বুলন্দশহরের মতো এলাকায় দলের ফায়দা হয়েছে।” ভাট্টা-পারসলে প্রার্থী খুঁজে না পেলেও তাই খুর্জা, বুলন্দশহর, জেওয়ার কেন্দ্রে প্রার্থী দিচ্ছে সিপিএম।
একটিতেও কি জেতার সম্ভাবনা রয়েছে? সরাসরি আশার কথা শোনাতে পারেননি কাশ্যপ। শুধু মনে করিয়ে দিয়েছেন, গত বিধানসভা ভোটে কয়েকটি কেন্দ্রে ‘খুবই ভাল’ ভোট মিলেছিল। সে বার কোনও আসন না পেলেও তার আগে নাজিবাবাদ আসনে টানা তিন বার জিতেছিল সিপিএম। কিন্তু তিন বারের বিধায়ক রাম স্বরূপের মৃত্যুর পরে সেই আসনটিও হাতছাড়া হয়।
দলীয় রিপোর্ট বলছে, উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যগুলিতে সাংগঠনিক অবস্থা এতই দুর্বল যে, পার্টির রাজনৈতিক ক্লাসের জন্য টাকাই জোগাড় করতে পারছেন না দলের নেতারা। মেলে না শিক্ষকও। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে
যদিও বা ক্লাসের ব্যবস্থা করা হয়, শেষ পর্যন্ত দেখা মেলে না ক্যাডারদেরই। দলের মতাদর্শ নিয়ে হিন্দি পুস্তিকাও
অমিল। পার্টি কংগ্রেসের তৈরি করা কর্মসূচি রূপায়ণ করতেও কারাট ব্যর্থ হয়েছেন বলে তাই দলের মধ্যেই অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে।
উত্তরপ্রদেশের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল দলের নেতারা মনে করছেন, মায়াবতীর ফের ক্ষমতায় ফেরার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। এই অবস্থায় মায়াবতীর সমালোচনা করেও দরকারে তাঁকেই সরকার গড়তে সাহায্য করার পথ খুলে রাখছে সিপিএম। লোকসভা নির্বাচনের ভুল কবুল করেও মায়াবতী সম্পর্কে এখনও কারাটের অবস্থান কেন স্পষ্ট নয়, সেই প্রশ্নও উঠছে দলে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.