|
|
|
|
|
লক্ষ্য হোটেল ম্যানেজমেন্ট |
পরীক্ষায় বসতে চাইলে প্রথম থেকেই পরিকল্পনা করে এগোন।
সফল হওয়াটা কিন্তু খুব কঠিন কিছু নয়। লিখছেন কৌলিক ঘোষ। |
কেন্দ্রীয় পর্যটন মন্ত্রকের অধীন ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কেটারিং টেকনোলজি (এনসিএইচএমসিটি) স্বীকৃত ৫১টি প্রতিষ্ঠান। যেখানে ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষার আবেদনপত্র দেওয়া চলছে। প্রবেশিকার খুঁটিনাটি, আবেদনের যোগ্যতা ইত্যাদি নিয়ে একপ্রস্ত আলোচনা হয়েছে আগের সপ্তাহেই। এই দফায় জানানো হল কী ভাবে, কোথায় ভর্তি হওয়া যায়, নিজেকে তৈরি করে নেওয়ার পথটাই বা কি ইত্যাদি। পাশাপাশি আগে থেকে পড়ার খরচ সম্পর্কেও কিছুটা ধারণা দেওয়া থাকলে সেই অনুযায়ী পরিকল্পনা করতে সুবিধা হবে পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের।
|
সাফল্যের চাবিকাঠি |
সঠিক পরিকল্পনা, অভ্যাস আর পরিশ্রম তিনটি মন্ত্র মনের মধ্যে গেঁথে নিন। দেখবেন লক্ষ্য ভেদ সহজ হবে। বলছেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকেরা। তাঁদের মতে, হোটেল ম্যানেজমেন্ট জয়েন্ট এন্ট্রান্স-কে খুব কঠিন কোনও ভাবেই বলা যায় না।
যেমন, প্রশিক্ষণ সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ টেকনিক্যাল স্টাডিজ-এর কর্ণধার সুমন ঘোষের কথায়, “গত কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণিতে ভাল ফল করেও এই প্রবেশিকায় প্রথম দিকে জায়গা করে নিতে পারছে না বহু মেধাবী পড়ুয়া। যার অন্যতম কারণই হল, ১০+২-এর সঙ্গে এই পরীক্ষাটির পাঠ্যসূচির অমিল।”
সুমনবাবু জানিয়েছেন, এই পরীক্ষায়
১) অঙ্ক বা বিজ্ঞানের এমন অনেক প্রশ্ন আসে, যেগুলি নবম বা দশম শ্রেণির মানের,
২) সাম্প্রতিক বিষয় বা সাধারণজ্ঞান বিষয়টি নিয়ে চর্চার প্রথাগত পদ্ধতি একাদশ-দ্বাদশ স্তরে চালু নেই,
৩) পুরোদস্তুর অবজেকটিভ ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার অভ্যাস এই বয়সের ছাত্রদের থাকে না। মূলত, এই ৩টি বিষয়ের উপর যদি অন্ততপক্ষে এক বছর জোর দেওয়া যায় এবং দ্বাদশ পাঠ্যক্রমের সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া যায়, তবে মেধা তালিকায় ভাল স্থান পাওয়া মোটেই কঠিন নয় বলে জানান তিনি।
|
|
অন্য দিকে, হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রশিক্ষণের সঙ্গে যুক্ত পার্থ দে জানিয়েছেন, বহু ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীদের সব চেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ইংরেজি। এত দিন ওই পত্রের বরাদ্দ নম্বর ছিল ৮০, যা এই বছর থেকে হচ্ছে ৫০, এটা অনেকের কাছে যথেষ্ট স্বস্তির। তবে যা-ই হোক না কেন, প্রথম থেকেই গুরুত্ব দিয়ে ইংরেজির অনুশীলন করে যাওয়া জরুরি সকলের। কারণ শুধু লিখিত পরীক্ষার বেড়া টপকাতেই নয়, হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ার পর পছন্দ মতো ভাল বেতনের কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রেও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শর্ত ইংরেজিতে দক্ষতা।
|
প্রতিষ্ঠান ক’টি, আসন সংখ্যাই বা কত |
এনসিএইচএমসিটি স্বীকৃত হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। এই বছর সর্বভারতীয় পরীক্ষার মাধ্যমে মোট ২১টি কেন্দ্রীয় সরকারি ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ১২টি রাজ্য সরকারি ইনস্টিটিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং ১৮টি বেসরকারি ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্টে ভর্তি হওয়া যাবে। অর্থাৎ তাদের আওতায় সব মিলিয়ে মোট ৫১টি হোটেল ম্যানেজমেন্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। মোট আসন সংখ্যা ৭৭৪১টি। অবশ্য আসন সংখ্যা যে সব বছরেই এক থাকে, তা বলা যায় না। বরং বাড়ার সম্ভাবনা থাকে প্রতি বছরই। মোট তিন দফা কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে এই আসনগুলি পূরণ করা হয়।
|
পশ্চিমবঙ্গে স্বীকৃত প্রতিষ্ঠান দু’টি |
২০১০-এর আগে পর্যন্ত রাজ্যে এনসিএইচএমসিটি স্বীকৃত হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এর স্নাতক পাঠ্যক্রম পড়ানো হত একমাত্র তারাতলার ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এ। এটি কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান। তবে ২০১০-এ রাজ্যের প্রথম বেসরকারি হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে, যেটি এনসিএইচএমসিটি-র স্বীকৃত। পানিহাটির গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট।
তারাতলা আইএইচএম-এ আসন ৩২২টি। গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্টে ৬৩টি। কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এর অধ্যক্ষ রঞ্জিত চৌধুরী জানান, প্রতিষ্ঠানটি থেকে ২০১০-১১ সালে ‘প্লেসমেন্ট’-এর সংখ্যা চোখে পড়ার মতো। মোট ২০২ জন ছাত্রছাত্রীর মধ্যে ১৯৬ জন নাম নথিভুক্ত করেছিল। ক্যাম্পাসিং-এ চাকরি পেয়েছে ৯৭%। যে ৩২টি সংস্থা ক্যাম্পাসিং-এর জন্য তারাতলার প্রতিষ্ঠানে এসেছিল, যেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তাজ গ্রুপ অফ হোটেলস, ওবেরয় গ্রুপ, পার্ক হোটেল, হায়াত গ্রুপ, আইটিসি, ইন্ডিগো, জেটওয়ারওয়েজ ইত্যাদি। আইবিএম, জেনপ্যাক্ট-ও বেশ কিছু পড়ুয়াকে নিয়েছে তাদের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং-এর কাজের জন্য। আবার রিটেল সেক্টরে মেট্রো ক্যাশ অ্যান্ড ক্যারি, উইল্স লাইফ স্টাইলও নিয়োগ করেছে এখান থেকে। |
|
রঞ্জিতবাবুর মতে, তিন বছরের পাঠ্যক্রম যারা মন দিয়ে সম্পূর্ণ করেছে তাদের চাকরির কোনও অভাব হয়নি।
অন্য দিকে, গুরুনানক ইন্সটিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট ২০১০-এ প্রথম ব্যাচ শুরু করেছে। কর্ণধার তরণজিৎ সিংহ জানালেন, ২০১৩ সালে প্রথম ব্যাচ বেরোবে। কিন্তু তাঁদের প্লেস্টমেন্টের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়ের পুঁথিগত বা হাতে-কলমে শিক্ষার পাশাপাশি যেখানে শিল্পের চাহিদা মেনে কর্মযোগ্য করে তাঁদের গড়ে তোলা হয়। যেমন, কথোপকথনের দক্ষতা, দলবদ্ধ ভাবে কাজ করার মনোভাব, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা তৈরি ইত্যাদি। ছাত্রছাত্রীদের জন্য তরণজিৎবাবুর পরামর্শ, প্রবেশিকা পরীক্ষায় সফল হলে কাউন্সেলিং-এর সময় কলেজ বাছতে গিয়ে অবশ্যই যাচাই করে নেওয়া উচিত কলেজের পরিকাঠামো, শিক্ষকমণ্ডলী ইত্যাদি।
|
শুধু লিখিত পরীক্ষা, ইন্টারভিউ নেই |
উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, এই প্রবেশিকায় লিখিত পরীক্ষার বেড়া টপকাতে পারলেই ভর্তি সুযোগ পাওয়া যায়। কোনও ইন্টারভিউ হয় না। বসতে হয় না গ্রুপ ডিসকাশনেও। লিখিত পরীক্ষার ভিত্তিতেই তৈরি হয় মেধাতালিকা। ফলে ভাল স্থান পাওয়ার চেষ্টা করুন। তা হলে ভাল প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ খুলে যাবে।
|
পড়ার খরচ |
কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানে পড়তে তিন বছরে খরচ হয় দু’লক্ষ দশ হাজার টাকা, জানিয়েছেন রঞ্জিতবাবু। তবে দেশের কোনও ‘আইএইচএম’-ই পুরোপুরি আবাসিক নয়। আবাসিক হিসেবে থাকলে খরচ দিতে হয় আলাদা। অন্য দিকে, গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতিষ্ঠানে তিন বছরের জন্য খরচ আড়াই লক্ষ টাকার কাছাকাছি। তবে এক একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পড়ার খরচ এক একরকম।
|
গুরুত্বপূর্ণ তারিখ |
২০১২-র সর্বভারতীয় হোটেল ম্যানেজমেন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাটি হবে ২৮ এপ্রিল, শনিবার। সকাল দশটা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার পরীক্ষা। আবেদনপত্র দেওয়া চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। জমার শেষ দিন ১৩ এপ্রিল। ফল বের হবে মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে। কাউন্সেলিং শুরু হবে জুনের প্রথম সপ্তাহে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানে ক্লাস শুরু ১ অগস্ট। আবেদনপত্রের মূল্য ৯০০ টাকা (সাধারণ প্রার্থী ও অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির প্রার্থীর)। তফসিলি জাতি-উপজাতির জন্য দাম ৪৫০ টাকা। দেশে ৩৩টি কেন্দ্রের মধ্যে কলকাতা এবং শিলিগুড়িতে পরীক্ষাটি নেওয়া হবে।
|
আবেদনপত্রের জন্য |
আবেদনপত্র দেশের প্রত্যেকটি আইএইচএম এবং অন্যান্য অংশগ্রহণকারী হোটেল ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে মিলবে। এ রাজ্যে কলকাতায় তারাতলার ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট এবং পানিহাটির গুরুনানক ইনস্টিটিউট অফ হোটেল ম্যানেজমেন্ট-এ পাওয়া যাবে। এ ছাড়া, রাজ্যের চারটি সিন্ডিকেট ব্যাঙ্কের শাখা থেকেও (ব্রেবোর্ন রোড, শ্যামবাজার, সল্টলেক, ক্যামাক স্ট্রিট) আবেদনপত্র নিতে পারেন। আরও বিস্তারিত তথ্য জানতে দেখে নিন www.nchmct.org ওয়েবসাইটটি।
|
উত্তর পেতে চিঠি লিখুন
আপনার প্রশ্ন বিশেষজ্ঞের উত্তর,
কাজের বাজার,
ব্যবসা বিভাগ,
৬, প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট,
কলকাতা- ৭০০০০১।
ই-মেল-এও আপনার প্রশ্ন পাঠাতে পারেন: kajerbazar@abp.in |
|
|
|
|
|
|