চিনে এক ভারতীয় কূটনীতিককে হেনস্থার ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাল ভারত। দিল্লির চিনা দূতাবাসের উপপ্রধান ঝাং ইউয়েকে ডেকে পাঠিয়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক।
পাওনা না মিটিয়ে একটি সংস্থার মালিক পালিয়ে যাওয়ায় তার দুই ভারতীয় কর্মীকে পণবন্দি করেছিলেন ইয়ু শহরের কিছু ব্যবসায়ী। দীপক রাহেজা এবং শ্যামসুন্দর অগ্রবাল নামে ওই দু’জনকে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে আটক রাখার পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়। শনিবার তার শুনানি ছিল স্থানীয় আদালতে। সেই সূত্রে সাংহাইয়ের ভারতীয় দূতাবাসের কর্মী এস বালচন্দ্রন ওই আদালতে গিয়েছিলেন। কিন্তু আদালত চত্বরেই তাঁকে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ। সে সময় তিনি আহতও হন। সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়।
বালচন্দ্রনকে কী ধরনের হেনস্থা করা হয়েছে, তা নিয়ে অবশ্য দু’রকম বয়ান মিলছে। সাংহাইয়ের ভারতীয় কনসাল জেনারেল রিভা গঙ্গোপাধ্যায় দাস জানিয়েছেন, আদালত চত্বর থেকে বেরোনোর সময় বালচন্দ্রনের উপর চড়াও হন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পণবন্দি দুই ভারতীয়কে ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা হয়। এই সময়েই ধস্তাধস্তিতে আঘাত পান বালচন্দ্রন। এর ফলেই তিনি জ্ঞান হারান। বেজিংয়ে ভারতীয় দূতাবাসের মুখপাত্র বিনায়ক চহ্বাণও জানিয়েছেন, বালচন্দ্রনের উপর ‘হামলার’ ঘটনা ঘটেছে। তবে তাঁর আঘাত তেমন গুরুতর নয়। |
বিদেশ মন্ত্রকের সামনে ঝাং ইউয়ে। সোমবার। ছবি: পিটিআই |
অন্য কূটনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালতে সে দিন মামলাটির শুনানি চলে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে। শুনানি চলাকালীন ডায়াবেটিসের রোগী বালচন্দ্রন অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে চিকিৎসার জন্য আদালত কক্ষ থেকে বেরোতে দেওয়া হয়নি। বালচন্দ্রন অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে বালচন্দ্রনকে যে ভাবেই হেনস্থা করা হোক না কেন, বিষয়টিতে বেজায় চটেছে দিল্লি। সীমান্ত সমস্যা, দলাই লামা প্রভৃতি বিষয় নিয়ে এমনিতেই দিল্লির সঙ্গে বেজিংয়ের সম্পর্ক বেশ তিক্ত। সেই তিক্ততা আরও বাড়াল বালচন্দ্রনকে হেনস্থার ঘটনা। সোমবারই দিল্লির চিনা দূতাবাসের উপপ্রধান ঝাং ইউয়েকে ডেকে এনে কড়া আপত্তি জানিয়েছে বিদেশ মন্ত্রক। ঝাংকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, এক জন কূটনীতিকের সঙ্গে এই রকম ব্যবহার ভারত মোটেই ভাল ভাবে নিচ্ছে না। ইয়ুর স্থানীয় আধিকারিকরা বালচন্দ্রনের হেনস্থার জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তবে বেজিংয়ের তরফে এ বিষয়ে কোনও রকম দুঃখপ্রকাশ করা
হয়েছে, এমন কোনও খবর এখনও মেলেনি। দিল্লিতে বিদেশ মন্ত্রক থেকে বেরিয়ে ঝাং শুধু বলেন, “ওঁদের কাছ থেকে শুধু বিষয়টি শুনলাম। মনে হচ্ছে, এটা ব্যবসায়িক বিবাদের ঘটনা। বিষয়টিকে আমরা যথাযথ গুরুত্ব দিয়েই দেখব।” ভারতের কনসাল জেনারেলের পক্ষ থেকেও সাংহাইয়ের প্রশাসনের কাছে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। চিনা বিদেশ মন্ত্রকের কাছেও প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতীয় দূতাবাস।
সাংহাইয়ের কাছে ইয়ু শহরটি একটি বড় ব্যবসা কেন্দ্র। শ’খানেকের বেশি ভারতীয় ব্যবসায়ী রয়েছেন এখানে। গত বছর তাঁরা এখান থেকে ১৫০০ কোটি ডলারেরও বেশি পণ্য কিনেছেন। তবে মুম্বইয়ের দীপক রাহেজা এবং শ্যামসুন্দর অগ্রবাল যে সংস্থায় কাজ করতেন, সেই ‘ইউরো গ্লোবাল ট্রেডিং’-এর মালিক ভারতীয় নন, পাকিস্তান কিংবা ইয়েমেনের নাগরিক। স্থানীয়দের পাওনা না মিটিয়ে ওই ব্যক্তি বেপাত্তা হয়ে যাওয়ার পরে দীপক ও শ্যামসুন্দরকে আটক করেন স্থানীয়রা। ভারতীয় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, পাওনা আদায়ে এমন পণবন্দি করার ঘটনা প্রায়ই ঘটে এখানে। দীপকদের মুক্তির জন্য তাঁদের পরিবারের লোকজন ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছিলেন। বিষয়টি আদালতে উঠলে পণবন্দি দুই ভারতীয়ের মুক্তির জন্য দূতাবাসের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। তবু বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে শনিবারের শুনানিতে নিজে হাজির হন বালচন্দ্রন। কিন্তু অপ্রত্যাশিত ও তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি এখন হাসপাতালে। রিভা জানিয়েছেন, বালচন্দ্রনের অবস্থা এখন অনেকটাই ভাল। গোটা পর্বে সুখবর একটাই। মুক্তি পেয়েছেন দীপক ও শ্যামসুন্দর। আদালত জানিয়েছে, তাঁরা মুক্ত। |