ইন্দিরা ভবনের নাম পাল্টানোর প্রস্তাবের প্রতিবাদে কংগ্রেসের রেল অবরোধ তুলে দিলেন যাত্রীরাই।
শনিবার সকালে বসিরহাট স্টেশনে এই ঘটনা বস্তুত আগের কিছু ঘটনারই পুনরাবৃত্তি। পথ দেখিয়েছিল উত্তর ২৪ পরগনার বামনগাছি। পরে কোচবিহার, অশোকনগর, এমনকী বসিরহাটেও এর আগে রাজনৈতিক দলের রেল অবরোধ একই ভাবে তুলে দিয়েছিলেন ভুক্তভোগীরা।
এ দিন সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ যুব কংগ্রেসের সদস্যেরা দুই লাইনের মধ্যে লোহার পাটি ফেলে, ভ্যান রিকশায় পতাকা ও মাইক লাগিয়ে রেল অবরোধ শুরু করেন। শিয়ালদহ যাতায়াতের দু’টি আপ ও ডাউন ট্রেন আটকে যায়। অফিস যাত্রীদের তাড়া তো ছিলই, নেতাজি মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেশ কিছু কলেজের পরীক্ষাও ছিল। কলকাতার বিভিন্ন পরীক্ষাকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন হিঙ্গলগঞ্জ ও সন্দেশখালির ছাত্রছাত্রীরা। ট্রেন আটকে যাওয়ায় তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। |
কিন্তু অবরোধকারীরা যাত্রীদের কথা কানে তোলেনি বলে অভিযোগ। ক্ষুব্ধ যাত্রীদের একাংশ লাইনে নেমে পতাকা ও মাইক-সহ রিকশাভ্যান উল্টে দেন। সংঘর্ষ বাধে। তাদের এক কর্মী জখম হয়েছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। কয়েক জন ছাত্রও অল্পবিস্তর চোট পান। সাড়ে ৮টা নাগাদ কংগ্রেসের জেলা নেতাদের হস্তক্ষেপে অবরোধ উঠে যায়।
হিঙ্গলগঞ্জের দেউলিবাড়ির কাজল মণ্ডল, সন্দেশখালির শিতলিয়ার আরিজুল গাজির কথায়, “আমাদের এমএ পার্ট টু পরীক্ষার আসন পড়েছে জয়পুরিয়া কলেজে। কিন্তু বারবার বলা সত্ত্বেও অবরোধকারীরা সরেননি।” হিঙ্গলগঞ্জের চাঁড়ালখালি থেকে বঙ্গবাসী কলেজে পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলেন তন্ময় মণ্ডল। তিনি বলেন, “অবরোধ সরিয়ে নিতে বলায় ওরা আমাকে মারে। নির্দিষ্ট সময়ে পৌঁছতে না পারলে তো পুরো বছরটাই নষ্ট।”
কয়েক মাস আগে বসিরহাটেই রেল অবরোধ তুলতে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী মনীষা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঘটনাচক্রে, এ দিনও তিনি ট্রেনে ছিলেন। বেশ কিছু মহিলাকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এগিয়ে যান। যুব কংগ্রেস নেতা পরিমল সর্দারের দাবি, “পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখেই আমরা মাত্র আধ ঘণ্টা প্রতীকী বিক্ষোভ দেখানোর কথা ঘোষণা করেছিলাম। কিন্তু ওই মহিলা ‘এখনই অবরোধ তুলতে হবে’ বলে যাত্রীদের উত্তেজিত করেন।” মনীষার পাল্টা বক্তব্য, “আমরা হাত জোড় করে অনুরোধ করা সত্ত্বেও ওঁরা নড়তে চাননি। তখনই যাত্রীরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন।”
কিছু যাত্রী রিকশাভ্যান উল্টে দেওয়ার পরেই কংগ্রেস কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। মারামারি বেধে যায়। রেলপুলিশ আসে। জেলা কংগ্রেস নেতা অমিত মজুমদারও ঘটনাস্থলে চলে আসেন। পরে তাঁদের হস্তক্ষেপেই অবরোধ ওঠে। অমিতবাবু অবশ্য যাত্রীদের গায়ে হাত তোলার কথা স্বীকার করেননি। তাঁর দাবি, পুরো ঘটনাটিই ‘পরিকল্পিত’।
পরিমলবাবুর অভিযোগ, “যাত্রীদের সামনে রেখে তৃণমূলের কয়েক জন আমাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে।” বসিরহাট মহকুমা তৃণমূল নেতা বাদল মিত্র পাল্টা বলেন, “আমাদের কেউ এর মধ্যে ছিল না। আসলে মানুষ আর বন্ধ-অবরোধের রাজনীতি পছন্দ করছে না বলেই সর্বত্র প্রতিবাদ করছে।” |