এতদিন ছিল লুকিয়ে-চুরিয়ে। এ বার শুরু হল একেবারে পাকাপোক্ত ভাবে, অনেকটা আমদানি-রফতানির ধাঁচেই। পাসপোর্ট-ভিসা নিয়েই গরু পাচার।
গ্রামের মহিলারাই ঠিক করেন, ঢের হয়েছে। দিনে দিনে অত্যাচার বাড়ছে বাংলাদেশি গরু পাচারকারীদের। খেতের ফসল মাড়িয়ে পাচার হচ্ছে হাজার হাজার গরু। তাই উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁর বাগানগাঁ-র মহিলাদের নেতৃত্বে গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে শুক্রবার রাতে ধরে ফেলেন বাংলাদেশের বাসিন্দা এক গরু পাচারকারীকে। তাকে তুলেও দেওয়া হয় বিএসএফ ও পুলিশের হাতে। কিন্তু সেই পাচারকারীকে ধরবেন কী, সমস্ত কাণ্ড দেখে চক্ষু চড়ক গাছ বিএসএফ কর্তাদের। চিকিৎসার কারণ দেখিয়ে ভিসা নিয়ে বৈধ পাসপোর্টেই এ দেশে ঢুকেছে সে। বনগাঁর এসডিপিও জয়ন্ত মুখোপাধ্যায় বলেন, “বাংলাদেশের ধান্যকুড়িয়ার বাসিন্দা ফজরুল রহমান নামে ওই ব্যক্তিকে জেরা করে উদ্ধার হয় ৪৭টি গরু। শনিবার বনগাঁ আদালত তাকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে।”
কিন্তু এই কাণ্ড প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্ত পেট্রোপোল ও আশপাশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা বিভাগের কর্মতৎপরতা নিয়ে। এত দিন এই সীমান্তের আশপাশ দিয়ে চোরাপথে যাতায়াত, চোরাচালান নতুন কোনও ঘটনা ছিল না। এমন কী, পাসপোর্ট নিয়ে এ দেশে ঢুকে ডাকাতি, খুন করে ফের বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। কিন্তু একেবারে আমদানি-রফতানির ধাঁচে এমন পাচারের ঘটনা এই প্রথম। |
সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক কর্তা জানান, বৈধ পথের পাশাপাশি পেট্রোপোল সীমান্তের আশপাশ দিয়েই প্রতিদিন প্রচুর গরু বাংলাদেশে পাচার হয়। সম্প্রতি নিজেরাই এসে গরু নিয়ে যাচ্ছিল বাংলাদেশের পাচারকারীরা। তাতে রফতানিকারক ও সীমান্তে লাইনম্যানের পয়সাও বাঁচছিল। সরাসরি গরু নিয়ে যাওয়ার প্রবণতাও বেড়েছিল।
কিন্তু বনগাঁর সুটিয়ার সীমান্তের কাছে বাগানগাঁ-য় কৃষি খেতের উপর দিয়ে বাংলাদেশে গরু নিয়ে যাওয়ায় ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছিল সেখানে। গ্রামবাসীরাই জানান, পুলিশ ও প্রশাসনের সমস্ত মহলে এ কথা জানিয়েও কোনও সুরাহা হচ্ছিল না। বাধ্য হয়েই গরু যাতায়াতের জন্য রাস্তাও করে দেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু তা সত্ত্বেও ক্ষতি হচ্ছিল ফসলের। গ্রামের গরু চুরি করে পাচারও চলছিল। দিন কয়েক আগে এ সবের প্রতিবাদ করায় বাংলাদেশ থেকে কয়েকশো পাচারকারী সশস্ত্র অবস্থায় এসে মারধর, বাড়ি ও দোকানপাট ভাঙচুর করে। গ্রামবাসীরা জানান, পাচারকারীরা এতটাই শক্তিশালী যে, তাদের হটাতে বিএসএফকে গ্রেনেডও ছুড়তে হয়।
এর পরেই একজোট হন গ্রামের মহিলারা। তাঁরা শুক্রবার গ্রামে বৈঠক ডাকেন। সেখানে সমস্ত গ্রামবাসী সিদ্ধান্ত নেন, আর বাংলাদেশি পাচারকারীদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। শুক্রবার রাতপাহারাও বসে। বেশি রাতে দু’টি ট্রাক বোঝাই করে গরু নিয়ে গ্রামে ঢোকা মাত্রই গ্রামবাসীরা ফজরুলকে ধরে ফেলেন। বাকিরা ভয় পেয়ে কোদালিয়া নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যায়। এর পরে ফজরুলকে বিএসএফ ও পুলিশের হাতে তুলে দেন তাঁরা। এসডিপিও বলেন, “গ্রামবাসীরা যখনই সাহায্যের জন্য ডাকবেন আমরা পাশে আছি।” স্থানীয় বিধায়ক ও মন্ত্রী উপেন বিশ্বাস বলেন, “আগের হামলার কথা মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছিলাম। গ্রামের মহিলাদের বলেছিলাম, আপনাদেরও রুখে দাঁড়াতে হবে। গ্রামবাসীদের আমরা সম্মান জানাব।” |