ভারতীয় বংশোদ্ভূত নোবেল-জয়ী মার্কিন বিজ্ঞানী বেঙ্কটরামন রামকৃষ্ণন এবং অ্যাপলের নকশা বিভাগের প্রধান জোনাথন ইভ-সহ একাধিক কৃতীকে ‘নাইটহুড’ বা ‘স্যার’ খেতাব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ।
রাইবোজমের ত্রিমাত্রিক গঠন এবং তার ক্রিয়াপদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য ২০০৯-এ রসায়নে নোবেল পেয়েছিলেন রামকৃষ্ণন, আমেরিকার টমাস এ স্টেইটজ এবং ইজরায়েলের আদা ই ইয়োনাথ। সহকর্মীদের মধ্যে ‘বেঙ্কি’ নামে পরিচিত ৫৮ বছরের রামকৃষ্ণন বর্তমানে কেমব্রিজের এমআরসি ল্যাবরেটরি অফ মলিকিউলার বায়োলজি স্ট্রাকচারাল স্টাডিজ ডিভিশনের বিজ্ঞানী। জন্মসূত্রে ব্রিটেনের নাগরিক না হয়ে ‘নাইটহুড’ পাওয়া বিরল সম্মানের বলে মনে করা হয়। ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, মলিকিউলার বায়োলজিতে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবেই ২০১২-র সম্মান প্রাপকদের তালিকায় রামকৃষ্ণনের নাম রয়েছে। রামকৃষ্ণনের সঙ্গেই এই তালিকায় নাম রয়েছে আরও দুই নোবেলজয়ীর। এঁরা হলেন ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের রুশ বংশোদ্ভূত অধ্যাপক আঁন্দ্রে জেম এবং কনস্ট্যান্টিন নোভোসেলভ। |
অ্যাপলের নকশা বিভাগের প্রধান জোনাথন ইভেরও নাম রয়েছে এই তালিকায়। লন্ডনের উত্তর পূর্বে চিঙ্গফোর্ডে জন্মেছিলেন ইভ। ১৯৯২-এ অ্যাপল-এ যোগ দেন। তার পর থেকে অ্যাপলের বহু যন্ত্রেরই নকশা তৈরি করেছেন জোনাথন। খবরটা শুনে ইভের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া “উদ্ভাবনী শক্তি কাজে লাগিয়ে নিত্যনতুন নকশা তৈরিতে ব্রিটেন সব সময়ই পথিকৃৎ। সেই ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হতে পারার স্বীকৃতি হিসেবে এই খেতাব পেয়ে ভাল লাগছে।” বর্তমানে আই পড বা আই ফোনের যে নকশা দেখতে পাওয়া যায়, তা তৈরি করেছেন ইভই।
বাবা ছিলেন রৌপ্যকার। আর বাবাকে দেখেই ছোট বেলা থেকেই নতুন নতুন নকশা শিখে নেওয়ার প্রতি আগ্রহ ছিল ইভের। ছেলেবেলায় কোনও যন্ত্র হাতে এলেই খুলে দেখত কী ভাবে তা কাজ করে। ছোট বেলার ভাল লাগা নিয়েই এর পর পথ চলা শুরু। স্কুল শেষ করে নর্থামব্রিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইন’ নিয়ে পড়াশোনা শেষ করে প্রথমে ‘কমার্শিয়াল ডিজাইনার’ হিসেবে একটি কোম্পানিতে যোগ দেন। এর পর তিন বন্ধু মিলে একটি নকশা তৈরির এজেন্সি খোলেন। অ্যাপল প্রথম দিকে এই এজেন্সি থেকে নকশা কিনত। ইভের একটি নকশা অ্যাপল কর্তৃপক্ষের নজর কাড়ায় ইভকে সেখানে সর্ব ক্ষণের কর্মী হিসেবে নিয়োগ করা হয়। এর পর থেকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি ইভকে। অ্যাপলের কর্ণধার স্টিভ জোবসের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক খুবই ভাল ছিল। নিজের আত্মজীবনীতে স্টিভ লিখেছেন, জোনাথনের সঙ্গে তাঁর ‘আত্মিক যোগ’ ছিল। আর জোবস-জোনাথনের সেই রসায়নের ফলেই তৈরি হয়েছে একের পর এক জাদু-যন্ত্র। যার স্বীকৃতিস্বরূপ এ বার ইভকে নাইটহুড দিয়ে কুর্নিশ করল ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। |