|
দীর্ঘ বামশাসনের অবসান এ বছর রাজ্যে নিঃসন্দেহে সব থেকে উল্লেখযোগ্য ঘটনা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত
দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। দুর্ঘটনা এবং অন্য নানা কারণে যথারীতি বেড়েছে মৃত্যুমিছিল।
সারা বছর চার জেলায় ঘটে যাওয়া কিছু ভাল, কিছু মন্দ স্মৃতিই ফিরে দেখা। |
|
উত্তর ২৪ পরগনা |
২৭ অগস্ট পেট্রাপোলে সুসংহত চেকপোস্টের উদ্বোধন। ১৭২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই চেকপোস্ট তৈরির মূল উদ্দেশ্যে ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে গতি আনা। যদিও পেট্রাপোল বন্দরে বছরের নানা সময়ে বিভিন্ন কারণে ব্যবসা বন্ধ থেকেছে। সেন্ট্রাল ওয়্যারহাউস কর্পোরেশনের পার্কিংয়ে বাংলাদেশি দুষ্কৃতীরা চালক-খালাসিদের উপরে হামলা চালিয়েছে। |
|
১২ অক্টোবর ফের খবরের শিরোনামে সুটিয়া। গাইঘাটার এই এলাকায় গণধর্ষণ-কাণ্ডের পরে গড়ে ওঠা প্রতিবাদী মঞ্চের সভাপতি ননী পোদ্দারের উপরে হামলা চালাল দুষ্কৃতীরা। কয়েকশো বাংলাদেশি দুষ্কৃতী ঢুকে বনগাঁর সীমান্তবর্তী গ্রাম সুটিয়াতেও হামলা চালায়। বেশ কিছু বাড়ি, দোকান ভাঙচুর করে। অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয় ৫ জনকে। গরু পাচারের প্রতিবাদেই এই হামলা। পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাসের পরেও অবশ্য বাংলাদেশি দুষ্কৃতীদের হামলা বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ। নষ্ট হচ্ছে জমির ফসল। |
২৯ মে এমএলএ হোস্টেলের পাঁচ তলা থেকে পড়ে মৃত্যু হল বসিরহাট উত্তর কেন্দ্রের সিপিএম বিধায়ক মোস্তাফা বিন কাসেমের। খুনের অভিযোগ তুলে তাঁর পরিবারের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিচারবিভাগীয় তদন্ত চাওয়া হয়। |
|
মতুয়া মহাসঙ্ঘের কেন্দ্রীয় কমিটির গঠন নিয়ে মহাসঙ্ঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপানি দেবীর দুই ছেলে কপিলকৃষ্ণ ঠাকুর ও মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুরের (বর্তমান রাজ্য সরকারের মন্ত্রী) বিবাদ প্রকাশ্যে। নভেম্বর মাসে ওই ঘটনার জেরে মঞ্জুলের নামে থানায় খুনের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেন কপিল। |
দৌড়ে একাধিক সাফল্য পেয়েছে হাসনাবাদের মেয়ে সুপ্রিয়া। কিন্তু গরিব পরিবারে যেখানে ভাল করে খাওয়াই জোটে না, সেখানে খেলাধূলা নেহাতই বিলাসিতা। মায়ের বকুনি খেয়ে এক দিন বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে সুপ্রিয়া। সঙ্গে বন্ধু মামনি। কিছু সচেতন মানুষের উদ্যোগে বাড়ি ফেরানো গিয়েছে দুই বালিকাকে। সুপ্রিয়ার খেলার ব্যবস্থা করে দেবে প্রশাসন। |
|
২৫ অক্টোবর কলকাতার কাশীপুরে বেসরকারি ব্যাঙ্কের কারেন্সি চেস্টের দুই নৈশপ্রহরী বাসুদেব ঘোষ এবং দেবপ্রসাদ বৈদ্য ব্যাঙ্কের মধ্যেই মারা গেলেন দম আটকে। বাসুদেববাবুর বাড়ি গাইঘাটার ঝাউডাঙায়। দেবপ্রসাদবাবু থাকতেন হাসনাবাদের চক খাঁপুর গ্রামে। |
শাসনে ধৃত সিপিএম নেতা মজিদ মাস্টার। বিভিন্ন সময়ে একাধিক প্রথম সারির সিপিএম এবং তৃণমূল নেতাও গ্রেফতার। যদিও এলাকায় শান্তি এখনও ফেরেনি। ভেরির দখলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক লড়াই অব্যাহত। |
|
১৯ নভেম্বর বনগাঁ-শিয়ালদহ শাখার মহিলা-সংরক্ষিত মাতৃভূমি লোকালে উঠতে দেওয়ার দাবিতে অশোকনগর স্টেশনে অবরোধ করলেন পুরুষ যাত্রীরা। মহিলা যাত্রী ও পুলিশের যৌথ প্রতিরোধের সামনে অবরোধ তুলে নিতে বাধ্য হলেন তাঁরা। |
২০ জুন প্রণয়ী-সহ তিন জনকে খুন করে ফেরার কনস্টেবল পীযূষকান্তি ঘোষ। বসিরহাট থেকে পরে গ্রেফতার হন তিনি। তাঁর জুতো দেখে পুলিশ-পরিচয় নিয়ে সন্দেহ হয় বিএসএফ জওয়ানদের। তাঁরাই পুলিশ ডাকেন। |
|
বিসর্জন দেখতে এসে টাকিতে মৃত্যু কলকাতার এক তরুণ গবেষক সুজয় দাস-সহ ৩ জনের। |
দক্ষিণ ২৪ পরগনা |
১ ডিসেম্বর মগরাহাটে নৈনান গ্রামে হুকিং কাটতে গিয়ে জনতা-পুলিশ সংঘর্ষ। গুলিতে মৃত্যু দুই মহিলার। জখম এক পুলিশ কর্মীও পরে মারা যান। রাজ্য কোষাগারের হাল ফেরাতে বিভিন্ন দফতরকে রাজস্ব বাড়ানোর কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সে কারণেই হুকিং রুখতে উঠে পড়ে লেগেছিল বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থা। কিন্তু মগরাহাট-কাণ্ডের পরে রাজ্য জুড়ে সেই প্রক্রিয়ার সাফল্য নিয়েই প্রশ্ন চিহ্ন দেখা গিয়েছে। |
উস্তি ও মগরাহাটে বিষ মদে মৃত্যু ১৭৪ জনের। দৃষ্টিহীন হলেন বেশ কয়েক জন। গোটা দেশবাসী এই ঘটনায় স্তম্ভিত। বেআইনি চোলাইয়ের বিরুদ্ধে শুরু হল রাজ্য জুড়ে অভিযান। কিন্তু এ ভাবে চোলাই বন্ধ করা কতটা সম্ভব, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠে গেল। রাজ্য সরকারের মদ-নীতির সমালোচনায় মুখর হল বিভিন্ন মহল। চোলাইয়ের কারবার ছাড়লে তাঁদের ‘পুনর্বাসন’ দিতে হবে বলে দাবি তুললেন এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অনেকে। |
|
১৬ অক্টোবর রায়দিঘির বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত ৬। |
রাজনৈতিক কারণে খুন-জখমের একাধিক ঘটনা ঘটেছে ক্যানিং মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে। জমি দখল এবং পুনর্দখলের অভিযোগে সিপিএম-তৃণমূল চাপানউতোর চলেছে। বাদাবনের জঙ্গলে বাঘের হানায় যথারীতি প্রাণ গিয়েছে বেশ কয়েক জনের। |
|
হুগলি |
২৮ নভেম্বর আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালের সামনে অসুস্থ ছেলে-কোলে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন মা। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার টাকা না থাকায় ‘রেফার’ করার পরেও ছেলেকে নিয়ে যেতে পারছিলেন না তিনি। এগিয়ে আসেন স্থানীয় এক কলা-বিক্রেতা প্রমতোষ রায়। তাঁর দেওয়া টাকা সম্বল করে গাড়ি ভাড়া করে রওনা দেন মা। |
হিংসা, হিংসা এবং হিংসা। আরামবাগ মহকুমা জুড়ে বছরভর শুধুই এই চিত্র। একাধিক খুন-জখমের ঘটনা ঘটেছে। বিধানসভা ভোটের আগে-পরে মারামারি, বোমাবাজি অব্যাহত। ঘর-বাড়ি পোড়ানো, লুঠপাট, শ্লীলতাহানির অসংখ্য ঘটনার সাক্ষী হুগলি জেলার এই অঞ্চল। উদ্ধার হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র। |
|
অগস্ট মাসে উত্তরপাড়ায় গঙ্গার ধারে কলকাতা পুরসভার ৪০০ বিঘা জমিতে ‘ফিল্ম সিটি’ গড়ার প্রস্তাব আনল রাজ্য সরকার। জমিটি সরেজমিনে দেখে যান কলকাতার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়, অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, দীপঙ্কর দে, পরিচালক হরনাথ চক্রবর্তী প্রমুখ। সেই ‘ফিল্ম সিটি’র কাজ অবশ্য এখনও শুরু হয়নি। |
গাছ কাটার ‘শাস্তি’ হিসাবে প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছিল আরও গাছ লাগানোর। তাতেই শাপে বর হল। গোঘাটের গৌরাঙ্গবাটির মানুষ রীতিমতো বৃক্ষরোপণ উৎসব শুরু করলেন। |
|
দুর্গাপুজো মিটতেই দরজা বন্ধ হয়ে গেল হুগলির সাহাগঞ্জের ডানলপ কারখানার। দ্বাদশীর সকালে কারখানার গেটে ‘সাসপেনশন অব ওয়ার্ক’-এর নোটিস ঝুলিয়ে দেন কর্তৃপক্ষ। সেই কারখানা আজও খোলেনি। ডানলপকে সামনে রেখে এক মঞ্চে চলে এসেছে তৃণমূল, সিপিএম এবং কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন। যা রাজ্যের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একেবারে ‘নজিরবিহীন’ না-হলেও অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা! |
এ বছরেও মিটল না সিঙ্গুর-সমস্যা। রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ঘোষণা করে, সিঙ্গুরের ৪০০ একর জমি দ্রুত অনিচ্ছুক চাষিদের ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তার কিছু দিনের মধ্যে বিধানসভায় এ সংক্রান্ত বিল আনে সরকার। সেই বিলের সাংবিধানিক বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয় টাটা গোষ্ঠী। সেই মামলা এখনও চলছে। |
|
দুই যুবকের লাগাতার প্রচার এবং সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টা সাফল্য পেল। জানুয়ারির শেষ দিকে পুড়শুড়ার ধাপধাড়া গ্রামে পোলিও কর্মসূচি বড় ভাবে সাফল্য পেল। গ্রামের সব শিশুকেই পোলিও খাওয়ানো সম্ভব হয়েছিল। |
হাওড়া |
১৩ জুলাই মুম্বইয়ের জাভেরি বাজারে বিস্ফোরণে ২১ জনের মৃত্যু হয়। মারা যান ডোমজুড়ের বাসিন্দা পেশায় স্বর্ণ ব্যবসায়ী বাবুরাম দাস। |
১১ ডিসেম্বর প্রয়াত ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন সমবায় মন্ত্রী রবীন ঘোষ। |
|
১৩ ডিসেম্বর বাগনানের মহিষরেখায় দামোদর থেকে চার শিশুর দেহ মেলে। পরে গ্রেফতার করা হয় তিন শিশুর বাবা হাদি কুরেশিকে। নিজের তিন সন্তান ছাড়াও শ্যালিকার সন্তানকেও খুন করার কথা কবুল করেছেন তিনি। |
|