অশোকনগরের গুমা রবীন্দ্র বিদ্যাপীঠের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কল্যাণচন্দ্র দাসকে মারধরের অভিযোগে তৃণমূলের এক নেতা ও এক কর্মীকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতেই স্থানীয় শান্তিনগর এলাকার বাসিন্দা স্বপন ভৌমিক নামে ওই তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি দলের স্থানীয় ৮৯ নম্বর বুথ কমিটির সভাপতি। তাঁকে জেরা করে শুক্রবার সকালে দীনবন্ধু ঘোষ নামে এক তৃণমূল কর্মীকে ধরে পুলিশ। তাঁর বাড়ি ছোট বামুনিয়া এলাকায়। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা অপরাধের কথা কবুল করেছেন। এ দিনই ধৃতদের বারাসত জেলা আদালতে তোলা হয়। বিচারক দু’জনকেই ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
অশোকনগর থানা সূত্রে জানানো হয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে কল্যাণবাবুকে গুরুতর আঘাত করা এবং অনিচ্ছাকৃত খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। অশোকনগরের তৃণমূল বিধায়ক ধীমান রায় বলেন, “ধৃতেরা আমাদের দলের নেতা-কর্মী ঠিকই। তাঁদের ব্যাপারে দলীয় ভাবে তদন্ত করে জেলা নেতৃত্বকে জানানো হবে।”
স্কুল পরিচালন সমিতির সম্পাদক কে হবেন, তা নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে বৃহস্পতিবার কল্যাণবাবু প্রহৃত হন। তাঁকে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের একাংশের দাবি ছিল, কল্যাণবাবু এক্তিয়ার বহির্ভূত ভাবে এক জনকে সম্পাদকের পদ পাইয়ে দিয়েছেন। যদিও সে কথা মানেননি কল্যাণবাবু। আহত অবস্থায় তিনি বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাঁর অবস্থার উন্নতি হয়েছে বলে ওই হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবারই কল্যাণবাবু পুলিশের কাছে জবানবন্দিতে তাঁর উপরে হামলার ঘটনায় স্কুল পরিচালন সমিতির প্রাক্তন সম্পাদক পরিমল পাল, বর্তমান সদস্য রঞ্জিত মণ্ডল, স্বপন ভৌমিক-সহ কয়েক জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। ওই অভিযোগের ভিত্তিতেই অশোকনগর থানা মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে।
পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃত স্বপনবাবু জানিয়েছেন, উত্তেজনার বশে আচমকাই ঘটনাটি ঘটে যায়। কল্যাণবাবুকে মারার উদ্দেশ্য তাঁর ছিল না। ওই ঘটনায় তৃণমূলের গুমা-২ অঞ্চল সভাপতি ভবেশ বারুই এবং তৃণমূল কর্মী তথা ওই স্কুলের ‘শিক্ষা বাঁচাও কমিটি’র সদস্য সজল ভট্টাচার্যও অভিযুক্ত। তাঁরা পলাতক বলে পুলিশ জানিয়েছে।
কল্যাণবাবুকে মারধরের ঘটনায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। এ নিয়ে আজ, শনিবার মধ্যমগ্রামে জেলা তৃণমূল কার্যালয়ে খাদ্যমন্ত্রী তথা দলের জেলা পর্যবেক্ষক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নেতৃত্বে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে। জ্যোতিপ্রিয়বাবু বলেন, “শনিবারের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধান শিক্ষককে মারার ঘটনায় দলের কেউ যদি যুক্ত থাকেন, তা হলে তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশের রিপোর্ট খতিয়ে দেখা হবে। দলীয় ভাবেও তদন্ত হচ্ছে।” কল্যাণবাবুকে মারধরের ঘটনার পরে ওই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা নিরাপত্তার অভাবে ভুগছেন। নতুন সম্পাদক এখনও দায়িত্বভার না নেওয়ায় বেতন বন্ধ রয়েছে এবং অন্যান্য বেশ কিছু কাজ থমকে রয়েছে বলে স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক অমর শীল জানিয়েছেন, ওই স্কুলের সমস্যা মেটাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। |