|
২০১১-য় দুই মেদিনীপুরের প্রধান এগারো ঘটনা-প্রসঙ্গ |
|
ফেলে আসা দিন...কখনও ধূসর, কখনও রঙিন...। বহতা জীবন...অজানা আগামী...হাল ধরো কাণ্ডারী.. |
|
|
আশার ফুলকি |
বড়দিনে ফের খুলল ঝাড়গ্রামের ডিয়ার পার্কের দরজা। জঙ্গলমহলে সবুজের টানে ফিরতে শুরু করেছেন পর্যটকেরা। দেড় বছর পরে আদ্রা শাখায় ফের চালু হয়েছে রাতের ট্রেন। অপেক্ষা ফের সেই সর্ডিহা পেরোনোর। পরিবর্তন হচ্ছে জঙ্গলমহলের পরিস্থিতিতে। অশান্তি পিছনে ফেলে আসতে চাইছেন মানুষ। বন্ধে আর স্তব্ধ হচ্ছে না জনজীবন। প্রশাসনিক পর্যবেক্ষণও হল, গুণগত পরিবর্তন হয়েছে ‘সিচ্যুয়েশনে’র। ছন্দ ফিরছে দিনযাপনে। বর্ষশেষে আশার কথা এটাই। জমি-বিতর্ক যেখানে তাড়া করছে একের পর এক প্রকল্পকে, সেখানে জমি-বিতর্কের উৎসভূমি নন্দীগ্রামে জট কাটিয়ে এগোচ্ছে রেল-প্রকল্প। আশার কথা সেটাও। মুদ্রার অন্য পিঠে, ধানের দাম পাচ্ছেন না চাষি। অভাবী বিক্রি বাড়ছে...। অসন্তোষ ধোঁয়াচ্ছে। প্রয়োজন বিহিতের।
|
আকালেও স্বপ্ন দেখা |
আত্মপর এই সময়ে প্রতিবেশীর পরিচয়ও অনেক সময়ে জানা থাকে না। হয়তো জানার আগ্রহই থাকে না। সবাই চাইছে শীর্ষে পৌঁছতে। শীর্ষবিন্দুর সূচ-মুখে সমাবেশ অসম্ভব। অতএব জয়ধ্বনি একেরই। দল সেখানে অনভিপ্রেত। ছোট থেকেই তো ছোটাসেই শীর্ষে পৌঁছনোরই ইঁদুর দৌড়। ক্লাসে অন্যকে টপকে যাওয়ার প্রাণান্তকর লড়াই। বিষিয়ে যাচ্ছে শৈশব-কৈশোর-ভাবীকাল। এই আকালেও স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছে ঝাড়গ্রামের কুমুদকুমারী ইনস্টিটিউশনের ছাত্ররা। সহপাঠী সুব্রত বারিকের চিকিৎসার জন্য টিফিনের পয়সা জমিয়েছে। পুজোয় জামা-কাপড় নিতে চায়নি। পুজোর ছুটিতে ঘুরতে যাওয়ার বায়না ছেড়েছে। সব সহপাঠীর জন্য। একট-একটা করে টাকা জমিয়ে তুলে দিয়েছে সুব্রতর পরিজনেদের হাতে। মুম্বইয়ে চিকিৎসায় অনেকটাই সুস্থ হয়ে ফিরেছে সুব্রত। বন্ধুরা মিলে গেয়ে উঠেছে: উই শ্যাল ওভারকাম... |
পালাবদলের ভোট |
মাত্র বারো বছর বয়সী একটা দল দখল করে নিল মহকারণ। সেই দল যার নেত্রীকে এক দিন মহাকরণ থেকে কার্যত চুলের মুঠি ধরে বার করে দেওয়া হয়েছিল। ইতিহাসের কী বিচার! ২০০৭-এর নন্দীগ্রাম-পর্ব থেকেই রাজ্য জুড়ে জোরালো হচ্ছিল ‘পরিবর্তন চাই’ স্লোগান। ১৩ মে সেই আর্তিটাকেই সত্যি করে দিয়ে গেল। পালাবদলে দুই মেদিনীপুরের ভূমিকা অনন্য। নন্দীগ্রাম থেকে নেতাইপরিবর্তনের পালে হাওয়া জুগিয়েছে বিস্তর। কিন্তু বদলে ফেলার থেকে বদলে যাওয়া অবস্থায় ‘রাশ’ ধরে রাখাটা, এগিয়ে চলাটা যে আরও গুরুত্বপূর্ণ। সে নিয়ে এই সাত মাসেই কিন্তু তৈরি হয়েছে কিছু উৎকণ্ঠা। উৎকণ্ঠা কাটিয়ে সমাজ-রাজনীতি-অর্থনীতিতে পরিবর্তনের সত্যিকারের কী বার্তা যোজিত হয়--সামনের দিনে সেটাই দেখার। জঙ্গলমহলের জন্য উন্নয়নের অনেক ঘোষণা হয়েছে বটে, বাস্তবায়নে কত দূর কী হয়অপেক্ষা থাকবে তারও। বন্দিমুক্তির পুরনো দাবিটা একেবারেই কি চলে যাবে অন্তরালে, নাকি নিরপরাধদের মুক্তি ত্বরান্বিত হবেদেখার সেটাও। |
শিল্প হোক, বাঁচুন শ্রমিকও |
রাজ্যে শিল্পায়নের ‘মুখ’ হলদিয়া। কিন্তু সেই মডেল শিল্প-ভূখণ্ডে মানা হয় না শ্রমনীতিএমনটাই অভিযোগ। ঠিকা-শ্রমই দস্তুর। ন্যূনতম মজুরি মেলে না। সুরক্ষা-প্রকল্পের আওতাতেও নেই তাঁরা। অস্থায়ী স্থায়ীকরণের দাবিতে এক সময়ে আন্দোলন করেছে সিটু। সেই সূত্রে শিল্পশহরে প্রভাব বাড়িয়েছে সিপিএম। কিন্তু ‘শাসক’ সিপিএম বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শ্রমিকদেরই দাবি নিয়ে জোরাজুরি থেকে বিরত করেছে। ধীরে ধীরে স্থায়ীকরণের দাবির নেতৃত্ব হাতে নিয়েছে তৃণমূল। এখন তারাই শাসক-ভূমিকায়। স্থায়ীকরণের দাবিতে এখন আর আগের মতো সরব হচ্ছে না তারাও। বরং কারখানায়-কারখানায় তৃণমূলেরই একাধিক গোষ্ঠীর সংঘর্ষ নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। শ্রমিক এবং শিল্প কর্তৃপক্ষদু’তরফই পড়ছেন সমস্যায়। খড়্গপুর শিল্পতালুকেও ছবিটা প্রায় এক। শিল্প ও শ্রমিক সম্পর্কের পরিবর্তন ছাড়া অসন্তোষ বাড়ারই আশঙ্কা। |
নন্দীগ্রাম নিখোঁজ-কাণ্ডে নয়া মোড় |
২০০৭-এর সেই ১০ নভেম্বর তাদের ‘পুনর্দখল-পর্বে’ নন্দীগ্রামে ভূমি-উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মিছিলের উপরে হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছিল সিপিএমের বিরুদ্ধে। সে দিনই তিনটি দেহ উদ্ধার হয়েছিল। গুরুতর জখম অবস্থায় কল্পনা মুনিয়ানদের পশ্চিম মেদিনীপুরে ‘পাচারে’র পথে এগরায় ধরা পড়ে গিয়েছিলেন তপন-সুকুরেরা। সেই থেকেই নিখোঁজ ভূমি-কমিটির ৯ কর্মী-সমর্থক। তাঁদের গুমখুন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তখন থেকেই। কিন্তু সিপিএম জমানায় পুলিশ আর ওই ৯ জনের পরিণতি নিয়ে খোঁজখবর চালায়নি। পরিবর্তনের পরেও পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বদলায়নি ভূমিকা। হাইকোর্টের নির্দেশে সিআইডি তদন্ত শুরুর পরে গত তিন মাসে ফের নতুন করে আশা জেগেছে নিখোঁজদের পরিজনেদের মধ্যে। বিচারের আশা। সোনাচূড়ার সেই দাপুটে সিপিএম নেতা নব সামন্তও গ্রেফতার হয়েছেন সম্প্রতি। হিমাংশু দাস, রবিউল হোসেনের মতো সিপিএম নেতাদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে সিআইডি। নিখোঁজদের বস্তুত খুন করে বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের। |
আতান্তরে ছাত্ররা |
নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে তিনিই ‘খলনায়ক’ হয়েছেন দলের একাংশে এবং বিরোধীবৃত্তে। সাংসদ পদও খুইয়েছেন। নিজের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার নামে নিয়ম না মেনে বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ খুলে এ বার আতান্তরে ফেললেন ছাত্রছাত্রীদের। হলদিয়ার বিসি রায় মেডিক্যাল কলেজের অনুমোদন বাতিল করেছে মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। ক্যাপিটেশন ফি দিয়ে পড়তে আসা ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারে। একদা ‘হলদিয়াপতি’ লক্ষ্মণ শেঠের দিকেই উঠেছে ছাত্রছাত্রীদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করার অভিযোগ। সময়টাই খারাপ যাচ্ছে লক্ষ্মণবাবুর। বিসি রায়েরই সাত আধিকারিক মারা গিয়েছেন ওডিশায় পথ-দুর্ঘটনায়। মেডিক্যাল কলেজ নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এই দুর্ঘটনাও নানা প্রশ্ন তুলেছে। সামনেই আবার হলদিয়া পুরসভার নির্বাচন। পূর্ব মেদিনীপুরে সিপিএমের একমাত্র ক্ষমতাকেন্দ্র হয়ে টিকে থাকা পুরসভাতেও এ বার পালাবদলের সম্ভাবনা। আর তেমনটা হলে ফের কপাল পুড়বে লক্ষ্মণ-জায়া তমালিকার। বিধানসভা নির্বাচনে মহিষাদলের আসনটা খুইয়েছেন। এ বার টলমল পুরসভার গদিটাও। |
ক্ষমতাসীনদের দায় |
সাত মাস যারা রাজ্যের ক্ষমতায়, সেই দলটা সেই ২০০৮ থেকেই কিন্তু পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদ চালাচ্ছে। জেলার অধিকাংশ পঞ্চায়েত সমিতি-পঞ্চায়েতও তাদেরই দখলে। ইতিমধ্যেই কিন্তু ‘ব্যর্থতা’র তুমুল অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে। প্রশাসনিক পর্যালোচনাতেও একশো দিনের কাজ-সহ গ্রামোন্নয়নের বিভিন্ন প্রকল্পে পূর্ব মেদিনীপুরের ব্যর্থতা স্বীকৃত হয়েছে। সেই সঙ্গে একাধিক ব্লকে শাসক-শিবিরে দ্বন্দ্ব, দুর্নীতিও লোকের বিরক্তি বাড়াচ্ছে। ২০১৩-র পঞ্চায়েত নির্বাচন কিন্তু ক্ষমতাসীনদেরই কৈফিয়ৎ চাইবে। কাজের কাজ না হলে জেলা পরিষদ পরিচালনা নিয়ে ওঠা প্রশ্ন ধাবিত হবে অধুনা রাজ্যেও ক্ষমতাসীন হওয়া তৃণমূলের দিকে। বিরোধী থেকে শাসকে উত্তরণের সঙ্গেই যে এসে পড়ে বিস্তর দায় ও দায়িত্ব। চ্যালেঞ্জটা সেখানেই। |
পরিবর্তনের পরে |
পূর্ব মেদিনীপুর সেই ২০০৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকেই কার্যত তৃণমূলের নিয়ন্ত্রণে। তাই বিধানসভা ভোটে সেখানে তৃণমূলের পক্ষে ১৬-০ ফল ততটা অভাবিত ঠেকেনি, যতটা বিস্ময়কর হয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ফলাফল। তাঁদের এই ‘দুর্গ’ ভেঙে পড়বেভাবেননি সিপিএম নেতারাও। ১৯-এর মধ্যে ১০টি আসনই দখল করে নেয় তৃণমূল ও কংগ্রেসের জোট। আশাতীত ফলে তৃণমূল শিবিরের ‘উল্লাস’ও কিছুটা বাড়াবাড়ি রকমের হয়েছে পশ্চিমে। আক্রান্ত হয়েছেন বিরোধী বনে যাওয়া সিপিএম নেতা-কর্মীরা। অনেকে ঘরছাড়া হয়েছেন। সিপিএম পার্টি অফিসে হামলা হয়েছে। বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাদের অনেক দলীয় দফতর। গ্রামে থাকতে হলে তৃণমূলই করতে হবে, ‘জরিমানা’ দিতে হবেহুকুম জারি হয়েছে। না হলে মারধর, আগুন, লুঠ-ভাঙচুর। চাষ করতে না দেওয়া, বর্গা-উচ্ছেদ। অনেক পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতিতেও অচলাবস্থা। শাসক-শিবিরেও প্রবল দ্বন্দ্ব। যা সংঘর্ষের চেহারা নিচ্ছে আজ কেশপুরে তো কাল চন্দ্রকোনায়। পূর্বের হলদিয়াতেও তৃণমূলের গোষ্ঠীসংঘর্ষে একের পর এক কারখানায় পরিস্থিতি ঘোরালো হচ্ছে। গণতন্ত্রের পক্ষে প্রীতিকর নয় এই পরিস্থিতি। |
কবর খুঁড়ে আনা |
জুনের গোড়ায় দাসেরবাঁধের হাড়গোড় উদ্ধার শুরু। তার পর অগস্ট পর্যন্ত একটানা কবর খোঁড়া চলেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের যত্রতত্র। উঠে আসা দেহাবশেষ নিয়ে নানা রকম দাবি উঠেছে। দশ-পাঁচ-দু’বছর আগের নিখোঁজ তৃণমূল কর্মীর পরিজনেরা দাবি করেছেন উদ্ধার হওয়া হাড়গোড় তাঁদেরই পরিজনেদের। একের পর এক মামলা দায়ের হয়েছে এ থানায়, ও থানায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এখনও অবশ্য দেহ ঘিরে ওঠা দাবি প্রতিষ্ঠা হয়নি। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে ক্ষমতাচ্যুত পক্ষকে ক্ষমতাসীনদের জব্দ করার পুরনো কৌশলে কমতি নেই। ৪০-৫০-৬০ জন পর্যন্ত অভিযুক্ত হয়েছেন এক-একটি মামলায়! অভিযোগ সব ক্ষেত্রে, সবার ক্ষেত্রে কতটা যুক্তিসঙ্গতপ্রশ্ন উঠেছে জনমনেও। ইতিমধ্যেই গ্রেফতার হয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী সুশান্ত ঘোষ। এই সে দিনই খেজুরির কণ্ঠিবাড়িতে তিন দিন ধরে মাটি খুঁড়িয়েও মিলল না কোনও দেহাবশেষ। অথচ তার আগেই শাসকপক্ষের অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হয়ে গেলেন দুই সিপিএম কর্মী! হাড়গোড় উদ্ধারের সঙ্গে সমান তালেই একটা সময় পশ্চিম মেদিনীপুরের এখানে ওখানে উদ্ধার হয়েছে বিস্তর আগ্নেয়াস্ত্র। তার কতগুলি ব্যবহারযোগ্য, কতগুলিই বা পরিত্যক্ত, কতটা সাজানো উদ্ধার-অভিযান আর কতটা সত্যিকারেরসংশয় কাটাতে হবে কিন্তু প্রশাসনকেই। |
ওঠাপড়ার ‘লাল-গড়’ |
১০ মার্চ আর ২৪ নভেম্বর। শশধর মাহাতো আর কিষেণজি। ২০০৮-এর নভেম্বরে লালগড়ে শুরু জনগণের কমিটির আন্দোলনের সূত্রে গোটা জঙ্গলমহলকেই ‘লাল-গড়’ করতে যাঁদের ভূমিকা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণমাওবাদী সংগঠনের সেই দুই শীর্ষনেতা শশধর মাহাতো ও কিষেণজি নিহত হয়েছেন সাড়ে আট মাসের ব্যবধানে। দু’টি ঘটনা নিয়েই ‘সংঘর্ষ’ না ‘ভুয়ো সংঘর্ষ’সে বিতর্ক রয়ে গিয়েছে। তবে, তর্কাতীত ভাবে যেটা সত্য---গত কয়েক বছরে জঙ্গলমহল জুড়ে বেড়ে চলা মাওবাদী তৎপরতা জোর ধাক্কা খেয়েছে এই জোড়া হত্যায়। মাওবাদীদের তথাকথিত ‘বৈপ্লবিক হিংসা’র তত্ত্বও প্রশ্নের মুখে। জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের একাংশও এখন সরাসরিই মাওবাদীদের বিরুদ্ধে জোর-জুলুমের রাজনীতির অভিযোগ করছেন। পাশাপাশি, মাওবাদীদের উপস্থিতিই যে প্রত্যন্ত-প্রান্তে উন্নয়নের ছিটেফোঁটা পৌঁছনোর মূলেসেটা কবুল করতেও দ্বিধা নেই অরণ্যবাসীর। মার্গ-নির্ণয়ের সন্ধিক্ষণে ‘বনপার্টি’। |
বিচার চাইছে নেতাই |
বছরের গোড়াতেই রক্তস্নান। লালগড়ের নেতাই গ্রামে ৭ জানুয়ারি সকালে ঘটে গিয়েছিল নন্দীগ্রাম-উত্তর রাজ্যের বীভৎসতম রাজনৈতিক গণহত্যার ঘটনা। ৪ মহিলা-সহ নিহত হয়েছিলেন ৯ জন। আহত হন অন্তত ২৮ জন। সাধারণ গ্রামবাসীর রক্তের বিনিময়ে প্রমাণ হয়েছিল জঙ্গলমহলে সিপিএমের সশস্ত্র শিবিরের অস্তিত্ব। তার পরেও অবশ্য নাম-কা-ওয়াস্তেই চলছিল সিআইডি তদন্ত। হাইকোর্টে তিরস্কৃত হয় সিআইডি। তদন্তভার পায় সিবিআই। ২০ জন সিপিএম নেতা-কর্মীর নামে চার্জশিট দিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তবে অনুজ পাণ্ডে-সহ ৮ নেতাই এখনও অধরা। হাইকোর্টেরই নির্দেশে অন্তর্বর্তী ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন নিহতদের পরিজন। কিন্তু বিচার? বিচারপর্ব এখনও শুরু না-হওয়ায় হতাশা বাড়ছে নেতাইয়ে। অধুনা শাসক তৃণমূলের কাছে অবশ্য ভোটের বছরে নেতাই হয়ে উঠেছিল আর একটা ‘নন্দীগ্রাম’। জঙ্গলমহলে ভোটের ফলেও ঘটে গিয়েছে তারই প্রতিফলন। |
|