সম্পাদকীয় ১...
বিপরীতে হিত
ত কাল এই স্তম্ভে আশা প্রকাশ করা হইয়াছিল যে, অণ্ণা হজারের আন্দোলনের তাড়নায় অতঃপর হয়তো ভারতীয় সাংসদরা তাঁহাদের কর্তব্য ও দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হইয়া উঠিবেন, সংসদীয় বিতর্কের মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে নীতি স্থির করিবার সৎ গণতান্ত্রিক রীতি অভ্যাস করিবেন, যাহাতে রাজনীতির লাগাম ময়দানে বা রাস্তায় বা ফেসবুক-টুইটারাদিতে সংগঠিত জনসমাবেশের হাতে চলিয়া না যায়। গত কাল রাত্রে রাজ্যসভায় যাহা ঘটিল, তাহাতে এই আশা ভঙ্গ হইতে বাধ্য। লোকপাল বিল সংক্রান্ত আলোচনা ও ভোট সম্পূর্ণ হইবার আগেই যে ভাবে সভার অধিবেশনের অবসান ঘটিয়াছে, তাহার পিছনে প্রধান শাসক দল কংগ্রেসের অভিসন্ধি ছিল কি না, অন্য কয়েকটি দল সেই অভিসন্ধি পূরণে তাহাকে সাহায্য করিয়াছে কি না, এই সকল জল্পনা, জল্পনামাত্র। কারণ যাহাই হউক, কার্যটি দুর্ভাগ্যজনক। সংসদ বিতর্কের স্থান। বিতর্ক যুক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে হওয়া বিধেয়। রাজ্যসভায় সেই বিতর্কের প্রক্রিয়া ক্রমশ একটি কলহের অভিমুখে অগ্রসর হইয়াছে এবং শেষ অবধি বিতর্কের যথাযথ মীমাংসা ছাড়াই শেষ হইয়াছে। শেষ হইয়াছে না বলিয়া ভণ্ডুল হইয়াছে বলাই ভাল। সেই ভণ্ডুল করিবার প্রক্রিয়ায় প্রস্তাবিত এক সাংসদ লোকপাল বিলটি ছিঁড়িয়া ফেলিবার অপকর্মটিও সম্পাদন করিয়াছেন। রাজ্যসভার অভ্যন্তরে দাঁড়াইয়া সভার সদস্য বিলের প্রতিলিপি ছিঁড়িতেছেন, এই দৃশ্যে সভার যে অপমান সূচিত হইয়াছে, তাহা ভারতীয় গণতন্ত্রের অপমান, ওই সাংসদের আপন ভূমিকারও অপমান। ইহা গভীর ভাবে দুর্ভাগ্যজনক। একটি দুর্ভাগ্যজনক প্রক্রিয়ার পরিণাম কি সতত অশুভ হইতে বাধ্য? লোকপাল বিল রাজ্যসভায় বানচাল হইয়া গেল, অতঃপর এই বিল লইয়া সংসদীয় আলোচনা চালাইতে গেলে রাজ্যসভার ভবিষ্যৎ অধিবেশনে বিলটি নূতন করিয়া উত্থাপন করিতে হইবে এবং সেখানে তাহার কোনও সংশোধন হইলে সংশোধিত প্রস্তাব আবার লোকসভায় পাঠাইতে হইবে। প্রক্রিয়াটি কেবল দীর্ঘ নয়, অতিমাত্রায় সমস্যাকণ্টকিত। যে ধরনের মতানৈক্য এ বারের লোকপাল বিল বিতর্কে দেখা গেল, ভবিষ্যতে তাহার অবসান ঘটিবার কোনও কারণ নাই, বরং সমস্যা জটিলতর হইবার আশঙ্কাই প্রবল। পাশাপাশি, অণ্ণা হজারের আন্দোলনের ভবিষ্যৎও রীতিমত অনিশ্চিত, এই আন্দোলনের মুম্বই-কাণ্ডের অকাল-সমাপনে সেই অনিশ্চয়তা প্রকট হইয়া উঠিয়াছে। সুতরাং, লোকপাল বিলের পরিণতি কী হইবে, তাহার কোনও নিশ্চয়তাই আপাতত নাই। ইহা আদৌ অসম্ভব নয় যে, লোকপাল নামক প্রতিষ্ঠানটিই বিশ বাঁও জলে তলাইয়া যাইবে। যদি তাহাই হয়, তবে বলিতে হইবে, ভারতীয় গণতন্ত্রের মঙ্গল হইল। সত্য ইহাই যে, দুর্নীতির মোকাবিলা করিবার জন্য লোকপালের কিছুমাত্র প্রয়োজন নাই। বিচারব্যবস্থা এবং প্রশাসন যদি আপন কাজ নিরপেক্ষ ভাবে, তৎপরতার সহিত সম্পাদন করিতে পারে, তাহা হইলেই দুর্নীতির মোকাবিলা সফল হইবে। ভারতীয় শাসনতন্ত্রে প্রতিষ্ঠানের বাহুল্য বৃদ্ধি সম্পূর্ণ নিষ্প্রয়োজন, যাহা আবশ্যক, তাহা হইল প্রতিষ্ঠানগুলির আপন কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন। নাগরিক সমাজের একটি অংশ লোকপালের পিছনে যে পরিমাণ সময় এবং উৎসাহ বিনিয়োগ করিয়াছে, তাহার তাড়নায় রাজনীতিকরা এই বিষয়টি লইয়া যতটা ব্যতিব্যস্ত হইয়াছেন, এই দীর্ঘ আন্দোলন, প্রচার এবং তর্কবিতর্কের প্রতি মনোযোগ করিতে গিয়া ভারতবাসীর যে বিপুল সময় নষ্ট হইয়াছে, এখনও হইতেছে, তাহার একটি ভগ্নাংশও যদি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলির স্বাস্থ্য এবং সামর্থ্য বৃদ্ধির কাজে ব্যয় হয়, তাহা হইলে দেশের দশের উপকার হয়। জনসাধারণ এবং তাঁহাদের প্রতিনিধিরা এই সত্যটি স্বীকার করিবেন কি না, তাহাই দেখিবার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.