প্রেসিডেন্সিকে ‘সেন্টার ফর এক্সেলেন্স’ বা উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনে পরিবর্তন আনতে রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে উচ্চশিক্ষা সংসদ। এর ফলে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সর্বশ্রেষ্ঠ’ শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কী ধরনের পরিবর্তন এনে প্রেসিডেন্সিকে বিশ্ব মানের করে তোলা যায়, সেই ব্যাপারে সুপারিশ করার জন্য উচ্চশিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান সুগত মারজিৎকে দায়িত্ব দিয়েছে রাজ্য সরকার। প্রেসিডেন্সির মেন্টর গ্রুপের চেয়ারম্যান সুগত বসুর সঙ্গে শুক্রবার এই নিয়ে বৈঠকে বসেন সংসদের চেয়ারম্যান। বৈঠকেরপরে তাঁরা জানান, প্রেসিডেন্সিকে উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারের কাছে সুপারিশ করা হবে। বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশনের আগেই যাতে এই বিষয়ে অর্ডিন্যান্স জারি করা হয়, সেই জন্য সরকারের কাছে আর্জি জানানো হবে বলে জানান সংসদের চেয়ারম্যান।
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “সুপারিশ এলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনা করব। তিনি অনুমোদন দিলে প্রয়োজনে এই বিষয়ে একটি অর্ডিন্যান্স জারি করা হবে।” উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা দেওয়া হলে বাড়তি বেতন না-দিয়েও প্রেসিডেন্সির শিক্ষক-শিক্ষিকাদের বিভিন্ন ভাতা বাবদ অতিরিক্ত অর্থ দেওয়ার সংস্থান করা যাবে বলে আশা করছে মেন্টর গ্রুপ ও উচ্চশিক্ষা সংসদ। সুগত বসু এ দিন বলেন, “বিদেশ থেকেও অনেক ভাল শিক্ষক-শিক্ষিকা প্রেসিডেন্সিতে আসতে চাইছেন। তাঁদের নিয়োগ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে রেখে দেওয়ার ক্ষেত্রে এই বিশেষ প্যাকেজ সহায়ক হবে।”
মেন্টর গ্রুপ তাদের প্রথম দফার সুপারিশেই প্রেসিডেন্সিকে ‘স্পেশ্যাল স্টেটাস’ বা বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার কথা জানিয়েছিল। পরে সুগত বসু জানিয়েছিলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়মের মধ্যে থেকেই এই মর্যাদা দেওয়া হবে প্রেসিডেন্সিকে। ইউজিসি বিভিন্ন মাপকাঠির ভিত্তিতে কোনও কোনও বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘পোটেনশিয়াল ফর এক্সেলেন্স’-এর মর্যাদা দিয়ে থাকে। সে-ক্ষেত্রে কমিশনের তরফে বাড়তি আর্থিক সাহায্য দেওয়া হয় বিশ্ববিদ্যালয়কে। |
কিন্তু এই মর্যাদা পাওয়ার জন্য প্রতিষ্ঠানের ন্যাশনাল অ্যাসেসমেন্ট অ্যান্ড অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল (নাক)-এর মূল্যায়নে সর্বোচ্চ গ্রেড এবং অন্তত দু’টি বিভাগের ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’-এর তকমাও থাকা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রেসিডেন্সি এখনও সে-ভাবে কাজ শুরু করেনি। তাই প্রেসিডেন্সির পক্ষে এখনই ইউজিসি-র পোটেনশিয়াল ফর এক্সেলেন্সের মর্যাদা পাওয়া সম্ভব নয়।
মর্যাদা দেওয়ার জন্য তাই রাজ্যের কাছেই সুপারিশ করা হচ্ছে। সুগত বসু বলেন, “রাজ্য সরকারই যাতে উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা দিতে পারে, সেই ভাবেই এগোনোর চেষ্টা চলছে।” রাজ্য সরকারের তরফে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়কে উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা দেওয়ার ঘটনা বিরল। আলাদা ভাবে শুধু প্রেসিডেন্সিকে উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা ও বিশেষ আর্থিক সাহায্য দেওয়া হলে রাজ্যের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলিও এই দাবি জানাতে পারে বলে মনে করছেন শিক্ষাজগতের একাংশ। তবে অনেকেই আবার এর সঙ্গে একমত নন। যেমন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বলেন, “প্রেসিডেন্সিকে উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদা দেওয়া হলে প্রাক্তন ছাত্র হিসেবে আমি খুবই খুশি হব। তা ছাড়া একটিকে তা দেওয়া হলেই যে অন্য কোনও বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ মর্যাদা পাবে না, এমন নয়। এই দুইয়ের মধ্যে কোনও দ্বন্দ্ব আছে বলে তো মনে হয় না।”
যাদবপুর ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই ইউজিসি-র পোটেনশিয়াল ফর এক্সেলেন্সের মর্যাদা পেয়েছে। সুগত মারজিৎ শুক্রবার বলেন, “যাদবপুর ধাপে ধাপে উৎকর্ষ কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। কিন্তু প্রেসিডেন্সি তো বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে একেবারে নতুন। তাই গোড়া থেকেই ভাল ভাবে পরিকল্পনা করে এগোতে হবে।”
উৎকর্ষ কেন্দ্রের মর্যাদার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা সংক্রান্ত কিছু সুপারিশ করা হবে বলেও ঠিক হয়েছে শুক্রবার। যেমন, বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য দু’টি পৃথক সংস্থা (যেমন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেনেট-সিন্ডিকেট বা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কোর্ট-এগ্জিকিউটিভ কাউন্সিল)-র বদলে একটিই সংস্থা (গভর্নিং বোর্ড) রাখার সুপারিশ করা হবে। সেখানে মেন্টর গ্রুপের অন্তত পাঁচ জন থাকবেন, যাঁদের মনোনীত করবেন রাজ্যপাল তথা আচার্য। এ ছাড়া থাকবেন নির্বাচিত পাঁচ শিক্ষক-সদস্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন ও অন্যেরা। আধিকারিক ও ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধি না-থাকলেও শিক্ষাকর্মীদের প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করা হবে বলে জানিয়েছেন সুগত মারজিৎ।
তিনি বলেন, “প্রাক্তন কৃতী ছাত্রছাত্রীদেরও বোর্ডে রাখা হতে পারে। তবে তাঁরা অতিথি সদস্য হিসেবে থাকবেন। এ ছাড়া বিভিন্ন শাখার ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলে ছাত্র-প্রতিনিধি রাখার সুপারিশ করা হবে।” আগামী সপ্তাহেই এই সুপারিশ উচ্চশিক্ষা দফতরে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন সুগত মারজিৎ। সেগুলি বিবেচনা করে যে-খসড়া বিল তৈরি হবে, তার প্রতিলিপি মেন্টর গ্রুপের সদস্যদেরও দেওয়া হবে। তাঁদের মতামত জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে রাজ্য সরকার। আগামী মাসে রাজ্য সরকারের কাছে প্রেসিডেন্সি নিয়ে দ্বিতীয় দফার সুপারিশ দেবে মেন্টর গ্রুপ। তার আগে, ১৫ জানুয়ারির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন সুগত বসু। |