|
|
|
|
সংস্কারেও শ্রী ফেরেনি প্রাচীন ভৈরব মন্দিরের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • রায়গঞ্জ |
উত্তর দিনাজপুরের প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন রায়গঞ্জ ব্লকের বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার ভৈরবী মন্দিরের সংস্কারের কাজ সম্প্রতি শেষ করেছে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন। সংস্কারের কাজ শেষ হওয়ার ১০ মাসের মাথায় প্রাচীন ওই মন্দিরটি ফের বেহাল হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি, বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে মন্দির সংস্কারের কাজ নিম্নমানের বলে একটি লিখিত অভিযোগ জেলাশাসকের কাছে জানানো হয়। মন্দিরের প্রাচীন শিল্পকলা বজায় রেখে অবিলম্বে পুনরায় মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ করা না হলে কংগ্রেস পরিচালিত ওই পঞ্চায়েতের তরফে আন্দোলনে নামা হবে বলে জেলা প্রশাসনকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, প্রাচীন যুগ থেকে ওই মন্দিরের সঙ্গে এলাকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের বাসিন্দাদের ধর্মীয় আবেগ জড়িয়ে রয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে বাসিন্দাদের টানা আন্দোলনের জেরে সম্প্রতি মন্দির সংস্কারের কাজ করা হয়। কিন্তু নিম্নমানের কাজ কোনও মতেই বরদাস্ত করা হবে না। জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া বলেন, “পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের অভিযোগ খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে!” পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশনের উপদেষ্টা দীপক পালিত বলেন, “মন্দিরের একাংশে নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। কেনও এমন হল তা জানতে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে। মন্দিরের প্রাচীন শিল্পকলা বজিয়ে রেখে আমরা ফের মন্দিরের একাংশ সংস্কার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। খুব শীঘ্রই কাজ শুরু করা হবে।” পঞ্চায়েত সূত্রে জানা গিয়েছে, মোঘল যুগের পর রাজা গণেশের আমলে প্রায় ৬০০ বছর আগে বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ভৈরবী মন্দির স্থাপিত হয়। ২১ ফুট উঁচু ও ৭০ ফুট চওড়া ওই মন্দিরটি চুন, সুরকি ও ইট দিয়ে তৈরি। মন্দিরের উপরে একটি গম্বুজ রয়েছে। গোটা মন্দিরে প্রাচীন যুগের নানা শিল্পকলা ও টেরাকোটার কারুকার্য রয়েছে। মন্দিরের ভিতরে প্রায় ৪ ফুট উঁচু কষ্টিপাথরের ভৈরবী দেবীর প্রাচীন মূর্তি রয়েছে। প্রায় ২০ বছর আগে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন মন্দিরটি অধিগ্রহণ করে। প্রাচীন ওই মন্দিরটির বিভিন্ন দেওয়াল থেকে বড় বড় গাছ গজিয়ে যাওয়ায় মন্দিরটি ধীরে ধীরে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এর পরে মন্দির সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন বাসিন্দারা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে প্রায় ৩৭ লক্ষ টাকা খরচে ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মন্দির সংস্কারের কাজ শুরু করে পশ্চিমবঙ্গ হেরিটেজ কমিশন। একটি ঠিকাদারি সংস্থা ওই কাজের বরাত পায়। প্রাচীন ঐতিহাসিক নিদর্শন, শিল্পকলা ও টেরাকোটার কারুকার্য বজায় রেখে গত ফেব্রুয়ারি মাসে মন্দির সংস্কারের কাজ শেষ হয়। পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, মন্দিরের বারান্দার ৪ ফুট চওড়া ছাদ চুঁইয়ে জল পড়ছে। সেই কারণে মন্দিরের বিভিন্ন প্রাচীন দেওয়াল ভিজে নরম হয়ে গিয়েছে। দেওয়ালে ফাটল ধরায় যে কোনও সময়ে মন্দিরের একাংশ ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মন্দিরের বিভিন্ন দেওয়ালে লাগানো একাধিক টাইলসও প্রতিদিন খসে পড়ছে বলে অভিযোগ। বিন্দোল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ প্রধান তথা কংগ্রেস নেতা মনসুর আলি বলেন, “মন্দিরকে ঘিরে প্রাচীন কাল থেকে এলাকার হিন্দু, মুসলিম-সহ বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের ধর্মীয় আবেগ ও রীতিনীতি জড়িয়ে আছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু পর্যটক ও ভক্তরা এই মন্দির পরিদর্শন করতে আসেন। মন্দির সংস্কারের কাজ নিম্নমানের হয়েছে বলে জেলাশাসককে অভিযোগ জানিয়েছি।” |
|
|
|
|
|