|
|
|
|
বেহাল পুর বাসস্ট্যান্ড |
গৌর আচার্য • রায়গঞ্জ |
সংস্কারের অভাবে গত প্রায় এক বছর ধরে বেহাল হয়ে রয়েছে রায়গঞ্জ পুর বাসস্ট্যান্ড ভবন। প্রতিদিনই বাসস্ট্যান্ডের যাত্রী প্রতিক্ষালয়, টিকিট কাউন্টার, পরিবহণ মালিক, কন্ডাক্টরদের অফিসের ছাদের চাঙর খসে পড়ছে বলে অভিযোগ। ইতিমধ্যেই চাঙর খসে পড়ে একাধিক যাত্রী-সহ কয়েকজন টিকিট কাউন্টারের কর্মী জখম হন বলে অভিযোগ। বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন ভবনের ছাদের চাঙর খসে লোহার রড বার হয়ে পড়ায় ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কা করছেন যাত্রীরা। অনেকেই যাত্রী প্রতীক্ষালয়ে না-ঢুকে বাইরে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাসস্ট্যান্ডের একাধিক ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগও দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ। সন্ধ্যার পর যাত্রীরা নিরাপত্তার অভাববোধ করছেন। আলোর অভাবে কাজ করতে গিয়ে সমস্যায় পরছেন পরিবহণ কর্মীরা। পরিবহণ মালিক ও তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র অভিযোগ, পার্কিং ফি বাবদ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় হলেও ভবন সংস্কারের ব্যাপারে পুর কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী নন। জানুয়ারি মাসের মধ্যে বাসস্ট্যান্ডের ভবন সংস্কারের কাজ শুরু করা না হলে আইএনটিটিইউসি, উত্তর দিনাজপুর বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সিটুর তরফে টানা আন্দোলনে নামার হুমকি দেওয়া হয়েছে। পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তথা কংগ্রেস নেতা রণজকুমার দাস বলেন, “প্রশাসনিক জটিলতা ও টাকার অভাবে দীর্ঘদিন ধরে বাসস্ট্যান্ডের ভবন সংস্কারের কাজ শুরু করা যায়নি। খুব শীঘ্রই পুর বোর্ডের অনুমতি নিয়ে টেন্ডার ও ওয়ার্ক অর্ডার প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। তার পরেই সংস্কারের কাজ শুরু হবে। সংস্কারের কাজ শেষ করতে প্রাথমিক ভাবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বাজেট ধরা হয়েছে।” |
|
ছবি: তরুণ দেবনাথ। |
পশ্চিম দিনাজপুর জেলা ভেঙে উত্তর দিনাজপুর জেলা গঠন হওয়ার পর ১৯৯২ সালে রায়গঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় পুরসভার উদ্যোগে ১৬ বিঘা জমিতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা খরচে পুর বাসস্ট্যান্ড তৈরি করা হয়। যাত্রী প্রতিক্ষালয়, টিকিট কাউন্টার, পরিবহণ মালিক, কন্ডাকটরদের অফিস সহ দোতালা ওই বাসস্ট্যান্ড ভবনে ৮ টি ঘর রয়েছে। বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতিদিন বাস, ট্রেকার ও অটো মিলিয়ে প্রায় ৪৫০ টি বেসরকারি গাড়ি বিভিন্ন রুটে যাতায়াত করে। পার্কিং ফি বাবদ প্রতিদিন প্রতি গাড়ি থেকে পুরসভার তরফে ৫ টাকা করে আদায় করা হয়। পাশাপাশি, নবনির্মিত শৌচাগার ও স্নানাগার ব্যবহার করতেও পুরসভাকে যাত্রীদের ২ টাকা ও ১ টাকা করে দিতে হয়। পার্কিং ফি বাবদ বাসস্ট্যান্ড থেকে প্রতি মাসে পুরসভার প্রায় ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। বিদ্যুতের বিল সহ বাসস্ট্যান্ড রক্ষণাবেক্ষন করতে প্রতি বছর পুরসভার প্রায় ১০ লক্ষ টাকা খরচ হয়। প্রতি বছর বাসস্ট্যান্ডের রাস্তা, শৌচাগার ও বিদ্যুদায়নের সংস্কার করা হলেও টাকার অভাবে ভবনের স্থায়ী সংস্কার করা হয়নি। আইএনটিটিইউসি’র উত্তর দিনাজপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি অরিন্দম সরকার বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে যাত্রী প্রতীক্ষালয়, টিকিট কাউন্টার, পরিবহণ মালিক, কন্ডাকটারদের অফিস সহ একটি শ্রমিক সংগঠনের দফতরের ছাদের চাঙর খসে পড়ছে। চাঙর খসে পড়ায় একাধিক যাত্রী সহ টিকিট কাউন্টারের কর্মী ও চেনকর্মীরা জখম হয়েছেন। ভবন ভেঙে পড়ার আশঙ্কায় যাত্রী, পরিবহণ মালিক ও কর্মীরা ভবনে ঢুকতে চাইছেন না। ভবনের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বার বার পুর কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। জানুয়ারি মাসের মধ্যে ভবন সংস্কারের কাজ শুরু করা না হলে আইএনটিটিইউসি’র কয়েক হাজার সদস্য পুরসভা ঘেরাও করতে বাধ্য হবে।” উত্তর দিনাজপুর বাস মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক অশোক চন্দ বলেন, “যাত্রী, পরিবহণ কর্মী ও মালিকদের নিরাপত্তার স্বার্থে দীর্ঘদিন ধরে আমরা পুরসভার কাছে বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন ভবন সংস্কারের দাবি জানিয়ে আসলেও লাভ হয়নি। অবিলম্বে সংস্কারের কাজ শুরু করা না হলে জেলা জুড়ে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিতে বাধ্য হব।” সিটুর রায়গঞ্জ জোনাল কমিটির আহ্বায়ক নীলকমল সাহা বলেন, “পুর কর্তৃপক্ষ যাত্রী, পরিবহণকর্মী ও মালিকদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন। ভবন সংস্কারের দাবিতে আগামী ২৯ ডিসেম্বর বৈঠক করে পুরসভার বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনে নামার কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে।” পুরসভার বিরোধী দলনেতা তথা তৃণমূল কাউন্সিলর প্রিয়তোষ মুখোপাধ্যায় বলেন, “দলের তরফে দীর্ঘদিন ধরে পুর কর্তৃপক্ষের কাছে বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন ভবন সংস্কারের দাবি জানানো হচ্ছে। তবে নতুন পুরবোর্ড গঠন হওয়ার পর এখনও এই বিষয়ে বোর্ড মিটিংয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। পরবর্তী বোর্ড মিটিংয়ে বাসস্ট্যান্ডের ভবন সংস্কারের দাবি জানাব।” |
|
|
|
|
|