শুভাশিস ঘটক ও শমীক ঘোষ • কলকাতা |
অপরাধের তালিকায় এ বার ঢুকে পড়ল চোলাই মদের কারবারও!
এত দিন থানায় থানায় খুন, ডাকাতি, চুরি, ছিনতাই, তোলাবাজি-সহ বিভিন্ন অপরাধের তালিকা ঝোলানো থাকত। মাসের শেষে জেলা পুলিশের কর্তারা সেই তালিকা খতিয়ে দেখে অপরাধ কমানোর ব্যবস্থা করতেন। সেই তালিকায় চোলাইয়ের ব্যবসা ছিল না। কিন্তু দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংগ্রামপুরে বিষ-চোলাইয়ে ব্যাপক প্রাণহানির পরে রাজ্য পুলিশের ডিরেক্টর জেনারেলের নির্দেশ, চোলাই ব্যবসা ঠেকাতে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, এ বার থেকে প্রতিটি থানায় তা-ও তালিকাভুক্ত করতে হবে।
সংগ্রামপুরে বিষমদ কাণ্ডে মৃত্যু হয় ১৭২ জনের। তার পরে চোলাই মদের বিরুদ্ধে রাজ্য জুড়ে শুরু হয়েছে অভিযান। বিভিন্ন জেলায় অভিযান চালিয়ে চোলাই মদের ঠেক ভেঙেছে পুলিশ ও আবগারি দফতর। চোলাইয়ে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার পরেই এই ধরনের অভিযানে জোর দেওয়া হয়। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই অভিযানে ভাটা পড়ে যায়। চোলাইয়ের পুরনো ঠেক ফের ব্যবসা শুরু করে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতরের এক অফিসার বলেন, চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান যাতে সারা মাস ধরে চলে, সেই জন্য এ বার থানায় থানায় অপরাধ দমনের বোর্ডে চোলাই অভিযানের সংখ্যাও লিখে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে। পুলিশকে আরও দায়বদ্ধ করতেই এই অভিযান বলে জানাচ্ছেন স্বরাষ্ট্র-কর্তারা।
প্রতিদিন নির্দিষ্ট থানা এলাকার কোন কোন জায়গায় চোলাই-বিরোধী অভিযান হল, কত মদ বাজেয়াপ্ত হল, কত কারবারি গ্রেফতার হল, তার হিসেব নিয়মিত জেলা পুলিশের সদরে পাঠাতে হবে। জেলা পুলিশ সেই তালিকা পাঠিয়ে দেবে মহাকরণে। এত দিন বেআইনি এবং চোলাই মদের কারবারের বিরুদ্ধে মূলত আবগারি দফতরই অভিযান চালাত। সেই অভিযান চালানো হত ভেজাল মদের বিক্রি আটকাতে এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকান থেকে মানুষকে মদ কিনতে বাধ্য করে সরকারের কর আদায় বাড়াতে। কিন্তু সেই কাজে পুলিশের নিজেদের কোনও তাগিদ থাকত না। কারণ, পুলিশের মূল কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা।
একটি জেলার পুলিশ সুপার জানান, এত দিন বিভিন্ন থানা এলাকায় ছিনতাইবাজ, ডাকাত, চোর, তোলাবাজদের ছবি-সহ তালিকা টাঙানো থাকত। নতুন দুষ্কৃতী দল গজিয়ে উঠলে তাদেরও ঠিকুজি-কোষ্ঠী তৈরি করে পাঠাতে হত জেলা পুলিশের সদরে। কোথাও অপরাধ হলে সঙ্গে সঙ্গে জানা যেত, কাজটা কোন দুষ্কৃতীর। এ বার চোলাইয়ের কারবারে জড়িতদেরও ‘বায়োডেটা’ তৈরি করতে হবে। যাতে সংগ্রামেরপুরের মতো ঘটনা এড়ানো যায়। এবং ওই ধরনের ঘটনা ঘটলে নির্দিষ্ট দুষ্কৃতীকে ধরা যায়। সংগ্রামপুরের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত খোঁড়া বাদশার ঠিকুজিকুলুজি পুলিশের কাছে নেই। নেই তার সাম্প্রতিক কালের কোনও ছবি। তার গোপন ডেরারও হদিস নেই পুলিশের কাছে।
ডিআইজি (প্রেসিডেন্সি রেঞ্জ) অনিল কুমার বলেন, “শুধু চোলাই ভাটি ভাঙার অভিযান নয়, নির্দিষ্ট এলাকায় চোলাই কারবারে কারা কারা যুক্ত, তারও তালিকা তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবং সেই তালিকা প্রতিনিয়ত পরিমার্জন করতে হবে।”
কিন্তু এত সব করেও চোলাইয়ের কারবার ঠেকানো যাবে কি?
রাজ্য পুলিশেরই এক কর্তার মতে, দেশি মদের দোকান এবং দেশি মদের সরবরাহ না-বাড়ানো পর্যন্ত চাহিদা ও জোগানে সামঞ্জস্য হবে না। এক জায়গায় ভাটি ভাঙা হলে অন্য জায়গায় গজিয়ে উঠবে চোলাইয়ের নতুন ঠেক। তাই চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর সঙ্গে সঙ্গে দেশি মদের দোকানের সংখ্যা বাড়ানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে সরকারকে। |